পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৬

মনা পাগলার ঈশ্বর ভাবনা-শেষ পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)
মনা ভেবে পেল না  সত্যিকার অর্থে ঈশ্বর কি? কারণ ঈশ্বর সর্ম্পকে চিন্তা করতে গিয়ে সে কেমন যেন গোলমাল পাকিয়ে ফেলছে। যেমন একটু আগে যে শ্লোকটি আবৃত্তি করছিল সেটিতে বলা হয়েছেঃ‘রূপংরূপ বিবর্জিতস্য ভবতো ধ্যানেন যদবর্ণিতং।’ অর্থঃ এর মানে হল- ‘হে রূপহীন ঈশ্বর! ধ্যানে তোমার রূপ বর্ণনা করেছি।’ রুপহীন বলতে কি বোঝানো হলো? যার রুপ নেই অর্থাৎ এমন কিছু যা বর্ণনাতীত। কিন্ত্তু তারতো উপস্থিতির কথা সে স্বীকার করছে। যদি স্বীকার না-ই করে, তাহলে ধ্যানে কিভাবে সেই রুপহীন ঈশ্বরের কথা বর্ণনা করে? ধ্যান এসেছে ধৈ ধাতু হতে। যার অর্থ চিন্তা করা। যাকে চিন্তা করা হয়, সে হচ্ছে ধ্যেয় এবং যে ধ্যান করে সে ধ্যায়ী। চিন্তন মনন প্রকৃয়াটা আসে মস্তিষ্কের কাছ থেকে। এর পরের অংশে বলা হয়েছেঃ তন্ত্রমতে নারী হচ্ছে জগতের আদি কারণ। এই নারী কি জাগতিক নারীরুপীনী না-কি অন্য কিছু? যদি নারী রুপই ধরা হয় অর্থাৎ জাগতিক নারীর কথাই ধরা হয়, তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়ঃ আদম যে ভাবে সৃষ্টি হয়েছে সেভাবে কিন্ত্তু হাওয়া সৃষ্টির কথা বলা হয়নি। এর রহস্য কি? এ সম্পর্কে জিগ্যাসা করা হলে প্রায়ই একটি কথা শোনা যায় আর তা হলো হযরত মরিয়ম যেভাবে হযরত ঈসা (আঃ) কে পিতা ছাড়া অর্থাৎ পুরুষ ব্যতীত সৃষ্টি করেছেন ঠিক তদ্রুপ আদম ও হাওয়াকে সেই ভাবে সৃজিত করেছেন। বিজ্ঞান কিন্ত্তু সেটা বলে না। কারণ পুরুষের স্পার্ম নারীর জরায়ুতে প্রতিস্থাপন না করলে সন্তান উৎপত্তি সম্ভব নয়। তাহলে নিশ্চয়ই এর মধ্যে একটা বিরাট রহস্য রয়ে গেছে। সেই অজানা রহস্যটা কি? সেটা কি জানা সম্ভবপর? যদি সম্ভবপর হয়, তাহলে কিভাবে সেই মহা সত্যটি জানা যাবে? কারণ এরই মধ্যেই রয়েছে স্রষ্টার আসল পরিচয়। স্রষ্টা তথা খালিক হলেন সৃষ্টিকর্তা। নামেই বুঝা যায় এটি পুংলিঙ্গ। কাজেই সৃষ্টিকর্তা হবেন পরম পুরুষ। এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্ত্তু সেই পরমপুরুষের রুপটি কি?

মনা আবারো চিন্তায় বিভোর হলেন। কিভাবে তিনি সেই মহান স্রষ্টার রুপ স্বদর্শন করতে পারেন? মনা চিন্তা করতে করতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লো। সেই তন্দ্রার মধ্যে সে দেখতে পেল-তার ছেলেবেলার কিছু স্মৃতি। সে একটি পানা পুকুরে দুটি ব্যাঙের সঙ্গমের ফলে উৎপন্ন বীজগুলো মালাকারে দেখতে পেল। একটার সাথে একটা কেমন যেন মালার মতো জড়িয়ে আছে। কিছুদিন পর দেখতে পেল সেই বীজগুলো থেকে ছোট ছোট ব্যাঙাচি বের হয়েছে। সামনের মাথার দিকটা মোটা। পেছনের দিকে লেজ আছে। মনা একটি ব্যাঙাচি হাতে নিল। ভালোভাবে পরীক্ষার পর দেখতে পেল কালো রংয়ের সেই ব্যাঙাচির পেটের নিচের দিকে গোলাকার বৃত্ত আঁকা। তার কিছুদিন পর সে দেখতে পেল সেটি পুর্ণাঙ্গ ব্যাঙে তখনো রুপ নেয়নি। সেই ছোট ছোট ব্যাঙের পেছনে খানিকটা লেজ তখনো অবশিষ্ট আছে। এরপর সে দেখতে পেল সেই অর্ধপুর্ণাংগ ব্যাঙগুলো পুর্ণাঙ্গ ব্যাঙে রুপান্তরিত হয়েছে। সেটি কখনো ডাঙায় উঠছে আবার কখনো পানিতে নেমে টুপ করে ডুব দিয়ে পানা পুকুরের জলে হারিয়ে যাচ্ছে। মনাকে সেভাবে বসে থাকতে দেখে একটি ব্যাঙ জিগ্যাসা করলোঃ

-ওগো মানুষ তুমি কি ভাবছো?

-ভাবছি ঈশ্বর সর্ম্পকে।মনা বললো। মনার কথা শুনে ব্যাঙটি হেসে বললো

-এভাবে চিন্তা করলে কি তুমি প্রকৃত সত্যটা জানতে পারবে?

-তাহলে কিভাবে জানতে পারবো?

-আমাদের দিকে তাকাও। আমরা পানির নিচে কি আছে ডুবে দেখতে পারি। আবার ডাঙায় কি আছে তা আমরা উপরে উঠে দেখতে পারি। কিন্ত্তু তুমিতো তোমার রাজ্য থেকে উপরে উঠতে পারছো না। তাহলে তুমি কিভাবে দেখতে পারবে?
তোমাকে প্রকৃত সত্যটা জানতে হলে আমাদের মতো হতে হবে। অর্থাৎ তোমাকে উভয় জগতেই বিচরণ করতে হবে। তবেই না তুমি দেখতে পাবে।

ব্যাঙটির কথা শুনে মনার তন্দ্রা ছুটে গেল। সে জোরে জোরে বলতে লাগলোঃ

আরে গাধার দল, স্রষ্টাকে জানতে চাস, তো ব্যাঙ হ। ব্যাঙের মতো উভয় জগতে বিচরণ কর। তারপর চোখ মেলে তাকা।

দেখবি ছবি পাগল হবি ঘরে রইতে পারবি না।
খোদার খোদা এমন খোদা যিনি আছেন,
কেমন চিন্তা করলে ধ্যান ধরলে হয়ে যাবি দেওয়ানা।