পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৬

মনা পাগলার ঈশ্বর ভাবনা-তৃতীয় পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

মনা দেখতে থাকলো পশ্চিম পাশ হতে হেঁটে হেঁটে একজন বৃদ্ধ মহিলা রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্ত্তু গাড়ীর ক্রমবর্ধমান চলাচলে পার হতে পারছে না। সে মনে মনে বলছেঃ "হায় আল্লাহ! কেমতে এই রাস্তা পার হই? কেউ কি নাই যে আমারে পার কইর‌্যা দেয়?" অন্যদিকে সে দেখতে পাচ্ছে রেললাইনের উপর দিয়ে মানুষজন কেউ ঈশ্বরকে স্বরণ করছে না। তারা মেতে আছে দৈনন্দিন জীবনের আজেবাজে কথোপকথনে। মনা তাকালো পুর্ব পার্শ্বের ফলের দোকানের দিকে। দোকানদাররা তাদের ফলের পশরা সাজিয়ে বসে আছে। কিন্ত্তু খদ্দর পাচ্ছে না। একজন বলছেঃ শালার কার মুক দেইক্যা যে আইজক্যা ঘর থন বাইর হইছিলাম...একটাও কাষ্টমারও আহে না। হাসপাতালের দিক হতে মানুষজন বের হচ্ছে। মনা সে দিকে তাকালো। দেখলো একজন বলছেঃ আল্লাগো তারে তুমি বাঁচাইয়্যা দেও। হেয় না বাঁচলে আমরা কেমনে চলমু? আমাগো কি অইবো? আরেক জন বলছেঃ এত ঝামেলা আর ভাললাগে না। হালায় মরেও না...অন্যদিকে আরেকজনকে বেশ প্রফুল্ল মনে হলো। সে বলছেঃ আল্লাহর লাখ লাখ শুকরিয়া। অল্পতেই বেঁচে গেছে। মনা ভেবে পেল না-মানুষের মন এত বিচিত্র কেন? কেউ প্রার্থনা করছে বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে। আর কেউ চাইছে মৃত্যু। যে মৃত্যু চাইছে তার মধ্যে সে দেখতে পাচ্ছে লোভের প্রকটরুপ। আর যে বেঁচে থাকার আকুতি জানাচ্ছে তার মধ্যে দেখতে পাচ্ছে-ভালোবাসার বন্ধন। কিন্ত্তু তার মধ্যে তাওয়াক্কুল (আল্লাহতে ভরসা করা ) কম। কারণ সে ঈশ্বরের উপর ভরসা রাখতে পারছে না। সে চিন্তায় বিভোর কেবল বেঁচে থাকার আকুলতা নিয়ে। 

এবার মনা তাকালো দক্ষিণদিকটায়। সেখানে লোকজনের চলাচল কম। গাড়ীর সংখ্যা বেশি থাকায় থেমে থেমে গাড়ীগুলো পাড় হচ্ছে। ট্রাফিকটা গাড়ী নিয়ন্ত্রণ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সে একটু বিশ্রামের আশা করছে। কিন্ত্তু পারছে না সার্জেন্ট এর কারণে। সে একটা গালিও দিল। অন্যদিকে গাড়ীর ড্রাইভারগুলোর দিকে তাকিয়ে মনা হচকিয়ে গেল। সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে তাদের মধ্যে অনেকেরই মতিগতি সুবিধার মনে হচ্ছে না। তারা বেশ তাড়াহুড়া করতে চাইছে যাত্রী উঠানোর আশায়। সেটাতে যে কোন মুহুর্তে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কিন্ত্তু তাদের মনে কোন আল্লাহ খোদার নাম-নিশানা খুঁজে পেল না। তাদের মধ্যে কেবল ট্রীপ টানার চিন্তা।

মনা ভেবে পেল না যে ড্রাইভারটি চালকের আসনে বসে আছে সে যদি একটু ভুল করে তাহলে গাড়ীতে থাকা সমস্ত যাত্রীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। সে এ ব্যাপারে নির্বিকার। সে মনে মনে বলছে জান-মালের মালিক আল্লাহ। যুদি একসিডেন্ট হয় তার লিগ্যা আমি দায়ী থাকমু ক্যান? জানের মালিকতো আল্লাহ।  মনা মনে মনে বলছে-আরে গাধা, তোরে আল্লাহ বিবেক বুদ্ধি দিয়েছে। দিয়েছে রিযিকের ব্যবস্থা করে। তোর উপরতো অনেক লোকের দায়িত্ব। তুই তোর গাড়ীতে যাত্রী উঠিয়েছিস তাদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিবি বলে..তা না করে সব দোষ আল্লাহর উপর চাপাচ্ছিস কেন? জবাবদিহিতায়তো তুই তো ফেঁসে যাবিরে গাধা...

মনা আবার তাকালো পুর্বদিকটায়। সেখানে চায়ের দোকানে লোকজন গম গম করছে। চায়ের কাপের টনটনাটন অাওয়াজও কানে আসছে। মনা এবার সেদিকটায় তাকালো। তাদের কথোপকথন শোনার চেষ্টা করছে। দেখলো সেখানেও কেউ ঈশ্বরের নাম নিচ্ছে না। সবাই ব্যস্ত দৈনন্দিন জীবনের কথোপকথনে। সময় ক্ষেপন করছে কেবল বেঁচে থাকার তাগিদে। তাদের মধ্যেও কাউকে পাওয়া গেল না যাকে আল্লাহ পাকের উপর পুর্ণ আস্থাবান বলা চলে। মানুষের হলো টা কি? সবাই আল্লাহ পাককে ভুলে গেল না-কি?
(চলবে)