পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬

মনা পাগলার ঈশ্বর ভাবনা-চতুর্থ পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর)

মনা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো। যে ঈশ্বরকে ভালবেসে তিনি সৃজিত করেছেন, সেই ভালবাসার সৃষ্টিটি তাকে ভুলে বসে আছে। মনে হচ্ছে মনা পাগলা ঈশ্বরের ব্যথিত চিত্ত উপলব্ধি করতে পারছেন। ভালোবাসা মনের মধ্যে যে আবেগের সৃষ্টি করে তার তুলনা কোন কিছুতেই দেয়া চলে না। কেবল প্রেমিকই বুঝতে পারে প্রেয়সীর ব্যথা। যেমনটা মনা পাগলা উপলব্ধি করতে পারছে। মনার কোন কিছুই ভালো লাগছে না। কেন মানুষ স্রষ্টাকে ভুলে বসে আছে? সে আবার তাকালো পুর্ব পাশে। সেখানে সে দেখতে পেল চায়ের দোকানে যুবক বয়সের কিছু তরুণদের। মনা তাদের ব্যাপারে বেশ কৌতুহল বোধ করলো। সে চেষ্টা করলো তাদের কথোপকথন শোনার। তারা আলোচনা করছে আল্লাহ পাকের অপুর্ব সৃষ্টি কৌশল নিয়ে। মনা বেশ আনন্দ পেল তাদের কথোপকথনে। তাদের মধ্যে একজনকে মনার বেশ পছন্দ হলো। সে বলছেঃ

শোন একবার এক সাধু একশো বছর ধ্যান সাধনা করে গিরিশৃংগ হতে নেমে এল। সেই সাধুকে দেখার জন্য দর্শনার্থীদের মাঝে বেশ সাড়া পড়ে গেল। তারা সাধুর কাছ থেকে কিছু শুনতে চায়। তো সেই সময় কোন একজন বেশ সাহস নিয়ে সাধুকে জিগ্যেস করলোঃ 

-প্রভু, তুমিতো একশত বছর তপস্যা করে এলে। স্রষ্টা সর্ম্পকে কিছু জানতে পারলে? 

-সাধুটি উত্তর দিলঃ একশত বছর সাধনা করে আমার এই উপলব্ধি হয়েছে যে তাকে জানা সম্ভব নয়। 

তখন সকলেই বেশ অবাক হয়ে সাধুটির দিকে তাকিয়ে রইল। 
তাদের কৌতুহলী দৃষ্টি দেখে সাধুটি বললঃ 
-মহান স্রষ্টাকে জানা সৃষ্টির পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ সৃষ্টি নিজেই স্রষ্টার ভেতর লীন হয়ে রয়েছে (আল্লাহু কুল্লি শাইইন মুহিত)।একটি ডিমের কথাই ধরো। ডিমের ভেতর বাচ্চাটা যেভাবে সুপ্ত অবস্থায় থাকে বাচ্চাটির তখন বর্হিবিশ্ব সর্ম্পকে কোন ধারণাই থাকে না। তাকে যদি ঐ খোলসটি দেখিয়ে বলা হয়, তুমি এই খোলসটির মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় ছিলে। তখন ঐ বাচ্চাটির মনে যেরুপ ধারণা জন্মে তদ্রুপ তোমার ভেতরও সেই একই ধারণার সৃষ্টি হবে। তোমাকে বুঝতে হবে-তোমার স্রষ্টা তোমার ভেতর সুপ্ত অবস্থায় আছেন। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে যেরুপ ডিমের অস্তিত্ব লোপ পায়, তদ্রুপ তুমি তোমার ভেতর যে সত্তাটি আছে, তাঁকে পরম যত্নে ফুটিয়ে তোমার আত্মা হতে বের করে আনো। তখন তুমি দেখতে পাবে - এই অপরুপ রুপময় সৃষ্টি জগত কেবল তোমাকে উপহার দেয়ার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। তখন তোমার আর খোলসের প্রয়োজন নেই।  তুমি মুক্ত স্বাধীন চিত্তে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াতে পারবে। এটাই সাধনার মুল লক্ষ্য হওয়া উচিত।

মনা বেশ ভাবিত হলো যুবকটির কথা শুনে। কতো সহজেই কিছু সুন্দরভাবে একটি উপমা দিয়ে বুঝিয়ে দিল। অথচ তখন তার আশে পাশে বেশ কিছু যুবক তার মতামতটি গ্রহণ করতে চাইল না। তারা বললোঃ ডিম আগে না-মুরগী আছে? যদি ডিমের কথাই ধরো তাহলে তোমাকে মুরগীর অস্তিত্বর কথা স্বীকার করতে হবে। অার যদি বলো মুরগী আগে তাহলে সেই মুরগীটি কে সৃ্ষ্টি করেছে? এইসব অবাস্তর প্রশ্ন করা শুরু করে দিল। ঠিক সেই সময় সেই তরুণটি বেশ দৃঢ়তার সাথে বলা শুরু করলোঃ শোন তোদের আরেকটি হাদিসের কথা শোনাই। একবার রাসুলে পাক (সাঃ) এর সান্নিধ্যে এসে আবিদারা (রাঃ) নামক এক সাহাবা রসুলে পাক (সাঃ) কে বললেনঃ ইয়া রাসুল আল্লাহ, আল্লাহ পাক সৃষ্টির প্রারম্ভে কিরুপ অবস্থায় ছিলেন? উত্তরে রাসুলে পাক (সাঃ) বললেনঃ সৃষ্টির প্রারম্ভে আল্লাহ পাক আল-আমা নামক একটি কুপে কুচ্ছঝটিকা (কুয়াশাচ্ছন্নরুপে) রুপে ছিলেন। প্রশ্ন হলোঃ সেই সময় তো অাল্লাহ পাক ছাড়া কারো অস্তিত্ব থাকার কথা নয়। তো সৃষ্টির পুর্বে আল্লাহ পাক কিরুপ ছিলেন তা জানা তার কথাও নয়। তাহলে সে আল্লাহ পাক কি অবস্থায় ছিলেন, তা জানলেন কিভাবে? এখন যদি এই প্রশ্নে সমাধান করা হয় তাহলে স্বীকার করতে হবে রসুলে পাকের (সাঃ) অস্তিত্ব স্বয়ং আল্লাহ পাকের পুর্বে ছিল। এটা কি সম্ভব? তুই বল্....তরুণ ছেলেটির কথা শুনে অন্যান্যরা হতচকিত হয়ে গেল। তারা কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না...

মনা দেখলো হ্যাঁ এখনো কিছু তরুণ আছে যারা সৃষ্টি এবং স্রষ্টা সর্ম্পকে চিন্তা ভাবনা করে। তারা বুঝতে চেষ্টা করে সত্য কোন্ পথে? তার এটা বেশ ভালো লাগলো। মনা সেদিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে পশ্চিম দিকে তার দৃষ্টি নিবন্ধ করলো। দেখলো মসজিদে আজান হচ্ছে। সেই আজান শুনে মুসল্লিরা মসজিদের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এবার মনা সেইদিকটায় দৃষ্টি দিল এবং বোঝার চেষ্টা করলোঃ মুসল্লিদের মনের অবস্থা কি? তারা কি জন্যে মসজিদে যায়? তারা কি স্রষ্টাকে ভালোবেসে মসজিদে যায় না-কি স্রষ্টার ভয়ে মসজিদে যায়? না-কি অন্যকোন কারণে..যদি অন্য কোন কারণ হয়, তাহলে সেই কারণটা কি?

মনা দেখলো কেউ যায় স্রষ্টার ভালোবাসার টানে।  কেউ যায় মসজিদে জুতা চুরি করার জন্য। কেউ যায় নানা সমস্যা হতে মুক্তি পাবার আশায়। কেউ যায় আল্লাহ পাকের রহমত পাবার আশায়। কেউ যায় নিছক দায়সারা গোছের কারণে। কিন্ত্তু মনা ভেবে পেল না - এই দায়সারা গোছের লোকেরা কেন ভীড় করে মসজিদে? মসজিদ হচ্ছে সেজদার জায়গা। যেখানে স্রষ্টাকে উপলব্ধি করে তার প্রতি পুর্ণ আস্থা স্থাপন করে কেবল তারই উদ্দেশ্যে মাথা অবনত করে সেজদা করবে। সেখানে দায় এড়ানোর কোন যুক্তি থাকতে পারে না।

(চলবে)