পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০১৭

বাবার ডায়েরী-পঞ্চম পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

সুফী দর্শনের কথা শুনে মজিদ স্যারের ভ্রুু কুঁচকে গেল। তার ইচ্ছে করছে সেটা জানার। আবার চিন্তা করছে-ঠিকমতোই তো নামায রোজই পালন করতে পারি না...তার উপর আবার সুফীদর্শন....মজিদ স্যার নিজের আনমনেই হাসলেন। 
ক্লাসের ছাত্ররা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না....এটাই কি সেই মজিদ স্যার.... যার ক্লাসে সব ছাত্ররা ভয়ে তটস্থ থাকতো....অার স্যারেরই বা আজ কি হলো...ডায়েরীটা পাওয়ার পর থেকেই স্যার কেমন যেন বদলে গেলেন...আজকের মজিদ স্যার যেন অচেনা কেউ....কখনো হাঁটছেন....কখনো হাসছেন....ব্যাপারটা কি? ছাত্ররাও স্যারের এই আচরণে কিছুটা বিব্রতবোধ করে হাসছে....

মজিদ স্যার ঘড়ি দেখলেন। এখনো পুরো পনেরো মিনিটের মতো বাকী আছে কাজেই ডায়েরীটা পড়া যেতে পারে...সে আবারো ডায়েরীটার মাঝখান থেকে দেখতে শুরু করলেন...সুফী দর্শন সর্ম্পকে কি লেখা আছে...খুঁজতে খুঁজতে একটা পাতাতে তার চোখ আটকে গেল...স্যার পড়া শুরু করলেনঃ

সুফীদর্শনঃ
---------
সুফীদর্শন কি? তা জানার আগে আমাদের জানতে হবে সুফী শব্দটির উৎস সমন্ধে। সেটা জানা হলে মোটামুটি সুফীদের সর্ম্পকে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। সুফী শব্দের উৎপত্তি সমন্ধে অনেক মতানৈক্য প্রচলিত আছে। কেহ বলেনঃ সাফা ( পবিত্রতা ) শব্দ হতে সুফী শব্দের উৎপত্তি। অন্যদের ধারণা মতে, 'আসহাবুস-সাফা' হতে সুফীর উৎপত্তি। রাসুলুল্লাহর (সাঃ) জীবনাদর্শ ও কমপদ্ধতি অনুসরণ করে যে সকল ব্যক্তি নিজেদের চরিত্র গঠন করার মানসে তাঁর সান্নিধ্যে মসজিদ.ই.নবী-তে অবস্থান করতেন,  তাদেরকে বলা হতো আসহাবে সুফ্ফা বা আসহাবস-সাফা।

বুখারী শরীফের একটি হাদিস হতে জানা যায়, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর সাহাবীগণকে ইহাদের জীবনাদর্শ অনুসরণ করিতে উপদেশ দিয়েছেন। সুবিখ্যাত সাধক শয়খ আবুল কাসিম কুশাইরী (মৃত্যু ৯৮৮ খৃীষ্টাব্দ) এবং শয়খ শিহাবুদ্দিন সুহরাওয়ার্দীর (মৃত্যু ১২৩৪ খৃষ্টাব্দ) মতানুসারেঃ হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর পর হতে অর্থাৎ ৮২২ খৃষ্টাব্দ হতে সুফী শব্দের প্রচলন ঘটে।

এ বিষয়ে সকলেই একমত যে রাসুলল্লাহ (সাঃ) দ্বিবিধ অহীপ্রাপ্ত হন। প্রথমটি কোরআন শরীফে লিপিবদ্ধ। এটি সকলের জন্য বাধ্যকর ও ইলম.ই.সফিনা নামে খ্যাত। দ্বিতীয়টি, অতি গোপনীয় এবং মনোনীত সাহাবীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এটি ইলম.ই.সিনা নামে খ্যাত। কোরআন শরীফের কতক আয়াত মাহ্ কাম (স্পষ্ট), কতক /আয়াত মুতাশাবিহ (রুপক)। মাহকাম বুঝতে কোরআন, হাদীস, ইজমা, কিয়াস, উসুল, ফিকাহ্ প্রভৃতি ইলম.ই. জাহির.ই যথেষ্ট।  এইটিই শরীয়াহ্ তথা শরীয়াত।
কিন্তু মুতাশাবিহা হলো মারিফত। মুতাশাবিহা বুঝতে রাসুলূল্লাহ (সাঃ) কিংবা তাঁর মনোনীত গুণসম্পন্ন কোন আত্মিক প্রভাবের প্রয়োজন। এই আত্মিক প্রভাব রাসুলল্লাহর (সাঃ) নিকট হতে পীরেরা পেয়েছেন।
কোরআন শরীফের কতিপয় আয়াত সাক্ষ্য দেয় যে, স্বয়ং রাসুলল্লাহর (সাঃ) মধ্যেই সুফীবাদের বীজ নিহিত ছিল। রাসুলল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ "আনা মদিনাতুল ইলম ওয়া আলীউন বাবুহা" - আমি জ্ঞানের শহর এবং সেই শহরের প্রবেশদ্বার অালী (আঃ)। রাসুলল্লাহ (সাঃ) এই জ্ঞান হযরত মাওলা আলী (অাঃ) কে শিক্ষা দেন। অনেকের ধারণা, হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) ও এই জ্ঞান লাভ করেছিলেন।

মজিদ স্যার কিছুটা বুঝতে পেরেছেন বলে মনে হলো। তিনি মনে মনে চিন্তা করলেনঃ কোরআন শরীফের বাংলা অনুবাদের মধ্যে যে হরফগুলো দেখতে পাই, যেমনঃ আলিম লাম মিম। এই হরফগুলোকে বলা হয় অায়াতে মুতাশাবিহ (রুপক) । বাংলা কোরআনে বঙ্গানুবাদের মধ্যে ফুটনোট করে নিচে লিখে দেয়া হয়েছেঃ  এর অর্থ একমাত্র আল্লাহপাক ই ভালো জানেন । তার মানে দাঁড়ালো যার মধ্যে ইলম.ই.সিনা আছে, সে এর ব্যাখ্যা দিতে পারবে। কিন্তু এরুপ লোক কি দুনিয়াতে আছে? আর থাকলেও তারা মোল্লাদের ভয়ে প্রকাশ্যে বের হতে সাহস পাচ্ছেন না। কোন তথ্য প্রকাশ করতে পারছেন না। অার প্রকাশ করার পর দেখা যায়, তাদের লেখাগুলো অর্থাৎ বইগুলো বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। এর কারণ কি? তিনি শুনেছেন হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ আমি রসুল (সাঃ) পাকের নিকট হতে দুই পাত্র জ্ঞান লাভ করেছি। একটি তোমাদের মাঝে প্রকাশ করেছি আর অন্যটি যদি প্রকাশ করি তাহলে আমার খাদ্যনালী কর্তিত হবে। তার মানে, ইলম.ই. বাতেন সে যুগেও ছিল।

মজিদ স্যারের ভ্রুু কুঞ্চিত হলো। তিনি ভাবলেনঃ তার মানে পীর যারা, তারাই রাসুলের (সাঃ) পাকের সিনার জ্ঞান লাভ করেছেন বংশানুক্রমে। কিন্তু তাঁর বংশতো কারবালাতেই শহীদ হয়েছেন। সেখানেইতো সমাপ্তি ঘটেছে ইসলামের। তাহলে হাল আমলে যে ইসলাম দেখা যাচ্ছে, সেই ইসলামটিই বা কোথা থেকে এল?
(চলবে)