পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০১৭

বাবার ডায়েরী-শেষ পর্ব


(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

তিনি চিন্তিত মুখে পায়চারি করা শুরু করলেন। আর ভাবলেন, এর মধ্যে কি এর উত্তরটা পাওয়া যাবে......তিনি ঘড়ির দিকে
তাকালেন। দেখলেন, মাত্র পাঁচ মিনিট সময় আছে....এত অল্প সময়ে এ বিষয়টা বের করে পড়া যাবে না..তাছাড়া গতানুগতিকভাবে তিনি যেভাবে ক্লাস নেন, আজ তার পুরো বিপরীত কাজটি করলেন। তিনি মনে মনে লজ্জিত হলেন। ভাবলেন-কাজটি ছেলেমানুষীর মতো  হয়ে গেল না....যার ডায়েরী তাকেই ফিরিয়ে দেয়াই উত্তম। তিনি তাই করলেন। তিনি নিষাদকে ডাকলেনঃ

-নিষাদ...

-জ্বি স্যার...

-এ দিকে আয়...

নিষাদ ভয়ে ভয়ে গুটি গুটি পায়ে মাথা নিচু করে মজিদ স্যারের কাছে গেলেন। ক্লাসের সকল ছাত্রের দৃষ্টি সে দিকে নিপতিত হলো। সবাই ভাবলোঃ স্যার বুঝি আজকে নিষাদকে ভয়াভয় কোন শাস্তি দিতে চলেছেন? দেখাই যাক্ না কি শাস্তি দেন? 
মজিদ স্যারের ভয়াবহ শাস্তির মধ্যে আছে দু' পায়ের নিচ দিয়ে অর্থাৎ দুই উরুর মাঝখান দিয়ে দুহাত দিয়ে দু কান ধরে ব্যাঙের মতো করে রাখা। তারপর ডাষ্টার দিয়ে ধুপধাপ করে কষে কয়েকটি বারি মারা। হাত দিয়ে ঠেকানোর কোন উপায়ই নেই।  আরেক ধরণের শাস্তি আছে। সেটা হলোঃ নিলডাউন করে রাখা। তারপর জালি বেত দিয়ে কষে দু'চারটা বারি মারা....

নিষাদকে যখন মজিদ স্যার ডেকে নিলেন, তখন থেকেই আমার বুকটা ধড়ফড় করছে...না জানি, স্যার ডায়েরীর মধ্যে কি পেয়েছেন?

কিন্তু মজিদ স্যার সকলকে অবাক করে দিয়ে নিষাদের কপালে একটি চুমো দিলেন। তারপর নিষাদের হাতে সেই ডায়েরীটা তুলে দিয়ে বললেনঃ 

-যতনে রাখিস্।সময়ের অভাবে পুরো ডায়েরীটা হয়তো পড়তে পারিনি। কিন্তু যতটুকু পড়েছি, তাতেই বুঝতে পারছি তোর বাবা, তোর জন্য একটা মহামুল্যবান জিনিস রেখে গেছেন। আমার ধারণা, তুই যদি তোর বাবার এই ডায়েরীটা পড়ে ঠিক মতো কাজে লাগাতে পারিস, তাহলে নিঃসন্দেহে তুই একজন ভালো মানুষ হবি। আমি তোর জন্য এই দোয়া করি...


নিষাদ বাবাকে সে হারিয়েছে বহু আগেই। বাবা থাকতে তিনি প্রায়ই নিষাদের কপালে চুমু দিয়ে বলতেনঃ আমার লক্ষ্মী বাবা টা। তুমি অনেক বড়ো হও। বাবা চলে যাওয়ার পর কেউ তাকে এমন করে চুমেু দেয়নি। আজ মজিদ স্যারের চুমু খেয়ে নিষাদের তার বাবার কথা মনে পড়লো। বাবার কথা মনে পড়ায় তার চোখ দুটো জলে ভিজে গেল।
নিষাদ উপুড় হয়ে যখন মজিদ স্যারের পা ছুঁয়ে সালাম  করছিল, ঠিক সে সময় মজিদ স্যারের পায়ের উপর গড়িয়ে পড়ে দুফোঁটা চোখের জল। স্যার টের পেয়েই নিষাদকে বুকের মাঝে টেনে নিলেন। তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেনঃ

-তুই অনেক বড়ো হ....

এ কথা বলেই মজিদ স্যার গট গট করে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলেন। আর ওমনি দপ্তরী হরিপদ দাস পিতলের প্লেটের মতো ঘন্টাটি পিটিয়ে আওয়াজ তুললেন... ঢং ঢং ঢং....