পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ১ আগস্ট, ২০১৫

ভবা পাগলার সাথে কথোপকথন-পর্ব এক

শ্রাবণের ঝর ঝর বৃষ্টিধারা কবি মনে ভাবের উদ্রেক করে। সাহিত্যিক মনাদের সাহিত্য রচনায় উৎসাহিত করে। প্রেমিক-প্রেমিকাকে মিলনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। আর ব্যাকুলচিত্তের মানুষগুলোকে আকুলতায় আপ্লুত করে। তারা আক্ষেপ করে বাহিরে বের হবার আশায়। বদ্ধঘরে তারা আর থাকতে চাইছে না। কিন্ত্তু কি করবে? বৃষ্টিনামক বারিধারায় সিক্ত হতে কেউ চাইবে না। আমার অবস্থাও ঐ অস্থির চিত্তের মতোই। ঘরে থাকতে মন চাইছে না। চাইছে কোথাও চলে যাই অজানার উদ্দেশ্যে। মাহিনের সাথে কথা বলার পর ভবা যে গানটি গেয়েছিল সেটার কয়েকটি চরণ মনে আছে। সেটাই গুণ গুণ করে গাইতে ইচ্ছে করছেঃ

পড় পড় ইলম তে ফাজিল হোয়ে 
তে কাদে আপনে আপনু পড়েই নে
বাজ বাজ ওয়ার না এই মান্দির মাসজিদি
তে কাদে মান আপনে উচ ওয়ারনে না।
লারনা এই রোজ শাইতান দি নাল
তে কাদি নাফস আপনে নাল লাড়ইয়ে না
বুল্লে শাহ আসমানি উড় দিয়া পারোনদা ইয়ে
তে যারা গার বিঠা আপন পারইয়া না
বাস কারো ইয়ার
ইলমু উন বাস কারো ইয়ার।
গানটি কোন্ ভাষায় গাওয়া? অর্থাৎ গানটি কথা কোন্ ভাষায় রচিত? বুল্লে শাহ্ কে? আর কেনই বা ভবা পাগলা ঐসময় ঐগানটি গাইলো? তার মানে নিশ্চয়ই ভবা পাগলা কোন কিছু মিনিং করতে চাইছিল। আচ্ছা কি মিনিং করে ভবা পাগলা গানটি গাইলো? জানা দরকার। আমাকে ভবা পাগলার খোঁজে বার হতে হবে। জেনে নিতে হবে তার অর্থ। যেই ভাবা সেই কাজ। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বেরিয়ে পড়বো বলে সিধান্ত নিয়েছি। থাকবো নাকো বদ্ধঘরে দেখবো এবার পাগলটাকে...এই দর্শন মাথায় নিয়ে বৃষ্টির সময় বেরিয়ে পড়লাম।

ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। মাঝে মাঝে মৃদু মন্দ বাতাসের ঝাপটা এসে গায়ে লাগছে। মাথার চুলগুলো ভিজে একাকার হয়ে গেছে। জামাটাও প্রায় পুরোটাই ভিজে যাচ্ছে। বাতাসের চোটে এখন কেমন যেন শীত শীত লাগছে। মনে মনে মাহিনকে গালি দিলাম। ঐ ব্যাটার জন্য ভবার সাথে কথা বলতে পারলাম না। গানের অর্থটাও জানা হলো না। এই বৃষ্টির মধ্যে কোথায় খুঁজে পাই ভবা পাগলাকে-সেটাই এখন বিবেচ্য বিষয়। চলে গেলাম পার্কে। পার্কের আনাচে কানাচে খুঁজতে লাগলাম ভবাকে। সেখানে খুঁজতে গিয়ে পড়লাম বিপাকে। আমার খোঁজার ধরণে অনেকেই সন্দেহ পোষণ করছে। আড়চোখে তাকাচ্ছে আমার দিকে। তাদের ধারণা আমি হয়তো নরোম মাংসের স্বাদ নিতে ব্যাকুল হয়ে খুঁজছি কোন ঊর্বশীকে। যেমনটা খুঁজে বেড়ায় ক্ষুধার্ত বাঘ। তাদের চাহনীতে সন্দেহের উদ্রেক করছে। আমি তা অগ্রাহ্য করে আমার কাজ চালিয়ে গেলাম। কিন্ত্তু দুঃখের বিষয় পেলাম না। কোথাও নেই সেই ভবা পাগলা। 

পার্ক থেকে বের হতেই শাহ্ বাগের মোড়ের রাস্তার উল্টা দিকে শিশুপার্কের বাস ছাউনীতে দেখতে পেলাম কে যেন গুটি শুটি মেরে বেন্ঞ্চিতে শুয়ে আছে। মুখটা দেখা যাচ্ছে না। উল্টাদিকে মুখ করে শুয়ে আছে। আমি আর দেরি করলাম না। সেইখানটায় গিয়ে হাজির হলাম। দেখলাম যাকে আমি খুঁজছি সেই ভবা পাগলা শুয়ে আছে নিঃচিন্তে। আমি তাকে ডাকলাম না। তার পাশেই বসে অপেক্ষা করছি কখন তার ঘুম ভাংগে।

মনে হয় কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে সে উঠে বসলো। আমার দিকে তাকিয়ে ঘুম ঘুম দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে প্রশ্ন করলোঃ

-কি চাই? তার কথা শুনে আমি বললামঃ

-তেমন কিছু না। আপনার সাথে কথা বলার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছি।

-আমার সাথে কি কথা? 

-না মানে ঐযে সেইদিন আপনি একটা গান গেয়েছিলেনঃ
পড় পড় ইলম তে ফাজিল হোয়ে 
তে কাদে আপনে আপনু পড়েই নে
বাজ বাজ ওয়ার না এই মান্দির মাসজিদি
তে কাদে মান আপনে উচ ওয়ারনে না।
মনে আছে আপনার? সেই গানটার অর্থ জানার জন্যই আপনাকে খুঁজছি।

ভবা পাগলা মনে হয় জীবনেও আমার মতো এমন লোক পায়নি যে তার গানের অর্থ খোঁজার জন্য এই বৃষ্টি বাদলা মাথায় নিয়ে তার কাছে আসতে পারে। সে অবাক করা দৃষ্টি নিয়ে বললোঃ

-মানে জেনে কি করবেন? 

-দরকার আছে। গানটি আপনি এমন এক সময় গেয়েছেন যে সময় আমি ও আমার বন্ধু একটা কথার মানে খোঁজার জন্য ব্যস্ত ছিলাম। ব্যস্ত ছিলাম দার্শনিক আলোচনায়।
(চলবে)