পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ১০ আগস্ট, ২০১৫

নিঃসঙ্গ একাকীঃ চিন্তার ডানাগুলো উড়ছে একাকী

ঘরের ভেতর অন্ধকারে বসে আছি একাকী। বিদ্যুৎ চলে গেছে। হাতের কাছে কোথাও কোন মোমবাতি পাচ্ছি না। মোবাইল ফোনটি বের করে সারা ঘরময় খুঁজলাম। না কোথ্থাও মোমবাতির নাম নিশানা খুঁজে পেলাম না। হয়তো আনা হয়নি। এই অন্ধকার ঘরে বসে থেকে কিছু চিন্তা মাথায় ঢুকলো। যেমনঃ মানুষ অন্ধকারে থাকতে চায় না। সব সময়ই চায় আলোকের সংস্পর্শ। কিন্ত্তু কেন? মানুষ কি জানে তারা একসময় অন্ধকার জগতের বাসিন্দা ছিল। সে সময় কেমন ছিল তারা? কিভাবে তারা পার করেছে অনন্ত সময়গুলি? 

সৃষ্টির প্রারম্ভিক অবস্থার কথা যদি চিন্তা করি তাহলে দেখতে পাবো-এক সময় আমার কোন অস্তিত্বই ছিল না। অামি ছিলাম অনস্তিত্বশীল জড় পদার্থ। সারা বিশ্বময় অামি বিরাজিত ছিলাম। কিভাবে? এই যে জমি যার উপর দিয়ে আমরা হেঁটে চলি সেই জমির ফসল আমরা খাই।  তার থেকে তৈরী হয় বীর্য। স্থান নেয় জননন্দ্রিয়ে। তার পর একটা ক্রিয়া, কাল কর্তার উপর প্রভাব পড়ায় আমার স্থান নেয় একটি বিশেষ স্থানে। সেখানেই আমি বেড়ে উঠি। অতঃপর একটা সময় অতিক্রান্ত করে আমি আমার রুপ লাভ করে ভুমিতে স্থান নেই। তার আলো বাতাসেই আমার বেড়ে চলা। এরপর একটা নাম ধরি। একটা রুপ নিয়ে সেই রুপের নাম নিয়েই আমি বেড়ে উঠি। তারপর একটা সময় আমার স্থান ছেড়ে দিয়ে অন্যকে জায়গা করে দেয়ার জন্য প্রস্থান করতে হয়। সেটাকে আমরা মৃত্যু বলি। এই জন্ম-মৃত্যূর খেলা প্রতিনিয়তই হচ্ছে। প্রশ্নটা হলোঃ এই জন্ম মৃত্যু নামক খেলায় অামার লাভ কোনটি? নানা রুপ ধরে জগতে বিচরণ করতে হয়। কেন? শুনেছি চুরাশি যোনি ভ্রমণের কথা। তাহলে বর্তমানে আমার যে অবস্থান তা কতোতম যোনির ফল? কর্মের উপর কর্তার প্রাধান্য থাকে। কর্তার ক্রিয়ার ফল হচ্ছে কর্ম। কর্মটিকে আবার দু'ভাগ করে দেখানো হয়েছে। নিষ্কাম কর্ম এবং স্বকাম কর্ম। নিষ্কাম কর্মে কর্তা কোন ফল লাভের আশা না করে কর্ম করে যায়। অার স্বকাম কর্মে কর্তা ক্রিয়ার ফল আশা করে। অথচ এমন বোকা কে আছে যে কর্মের ফল আশা করে না? শুনেছি যারা মহাপুরুষ তারা নাকি তাদের জীবন অতিবাহিত করেছেন নিষ্কামব্রত পালন করে। কারণ তারা কর্মফল আশা না করে স্রষ্টার সান্নিধ্যকেই বেশি পছন্দ করতেন। সেটাই যদি হয় তাহলে তো সেখানেও একটা উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে। তা হল তার সান্নিধ্য লাভ। তাহলে কি নিষ্কাম কর্মই জগতে শ্রেষ্ঠ? স্বকাম কর্মের কোন দাম নেই? স্বকাম কর্ম না করলে খা'ব কি করে? কোন কিছু খেতে হলেতো টাকার প্রয়োজন। টাকা পেতে হলে কর্মের প্রয়োজন। তা সেটা ভিক্ষাবৃত্তিই হোক না? না খেলে তো বাঁচার প্রশ্নই আসে না। টিকে থাকতে হলে স্বকাম কর্মেরও প্রয়োজন আছে। আর সেটা লক্ষ্য করেই বোধ করি ডারউইন নেচারেল সিলেকশনের কথা বলেছিলেন। প্রকৃতি তাদেরই নির্বাচন করে যারা বিরুপ প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পারে। আর না পারলে তার পুরস্কার মৃত্যু। তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো?

অন্ধকারে থাকতে থাকতে আমার ভাবনাগুলোও কেমন যেন জট পাকিয়ে যাচ্ছে? প্রশ্ন আছে অনেক। উত্তরও অনেক। মানা না মানা ব্যক্তির পছন্দ। কি সব আবোল তাবোল ভাবছি। নাহ আর ভাল লাগছে না। মাথাটা কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে। 
অামি অন্ধকার ছেড়ে হটাৎ আলোক ঝলকানিতে যাবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। উঠে দাঁড়ালাম। বারান্দায় ক্ষাণিকটা আলো আছে। আমি সেদিকটায় গেলাম। আবিস্কার করলাম। নিজেকে নতুনভাবে। কারণ অন্ধকারে অামি আমাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। আলোতে এসে সেটা প্রত্যক্ষ করলাম। ভাবনার ডানাগুলো খুজতে লাগলাম...কোথা কোন্ সুদুরে হারিয়ে গেল..