পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০১৬

সাঁইয়ের এনাটমি ও মনা পাগলার অদ্ভুত হাসি-পর্ব চার

(পুর্ব প্রকাশের পর)

মনা তখন যেন অন্য এক মানুষ। জগতের সাথে তার কোন সর্ম্পক নেই। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সমস্ত বন্ধন। সে ডুবে আছে বিভুর প্রেমে। মনা কারো দিকে দৃকপাত না করে অবলীলায় বলে যাচ্ছে একের পর এক কোরআনের আয়াত। তিনি যে আয়াতটি পাঠ করছিলেনঃ (সুরা মুমেনুন আয়াত নং ১২ "ওয়া লাকাদ খালাকনাল ইনসানা মিন সুলালাতেম মিন তীন") সেটির ব্যাখ্যায় বলছেঃ 

আরবী সুলালাত শব্দের অর্থ বিশুদ্ধ সারভাগ-যার দ্বারা কোন কিছু থেকে তার সারনির্যাস নির্গত করা  বুঝায়। আবার এই শব্দডা অন্যত্র ব্যবহার করা হইছে। হেইহানেও একই কথা বলা হইছে। আপনে দেহেন-মানুষের দেহের সারভাগ অর্থাৎ মুলবস্ত্তুই অইলো এই বীর্য। যেডারে কন মীন। হের উৎপত্তি অইলো পানি খিক্কা। কেদার(কর্দম) সারভাগ বলতে হেইসব রাসায়নিক ্‌উপাদানকে বুঝাইছে-যেইসব আহে পানির সারভাগ থিক্কা। সুরা ফোরকানের ৫৪ নং অায়াতে বলা হইছেঃ
"ওয়া হুয়াল্লাযি খালাকা মিনাল মা-য়ে বাশারান ফাজায়ালাহু নাসাবাও ওয়া সেহরান।" অর্থঃ (আল্লাহ) সেই একক সত্তা যিনি মানুষকে পানি হইতে গঠন করিয়াছেন এবং প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন বংশধারা (পুরুষের মাধ্যমে) এবং আত্মীয়তার ধারা নারীদের মাধ্যমে।" কোরআনে নারী সৃষ্টির বেপারে বলা অইছেঃ

"খালাকাকুম মিন নাফসেন ওয়াহেদাতেন ওয়া খালাকা মিনহা জাওজাহা"[সুরা নিসা আয়াত ৪] অর্থঃ সেই একক সত্তা যিনি গঠন করিয়াছেন তোমাদিগকে এক ব্যক্তি হইতে এবং তাহা হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন তাহার স্ত্রী। এই অায়াতের পুনরাবৃত্তি হইছে সুরা আরাফ আয়াত নং ১৮৯, সুরা জু'মার আয়াত নং ৬। সুরা রুমের অায়াত নং ২১ এবং সুরা শুরার ১১ নং আয়াতে।

মনা এ পর্যন্ত বলে থামলেন। তারপর তাকালেন সরকার সাহেবের দিকে। 

সরকার সাহেব নিতান্তই গোবেচারাধরণের মানুষ। স্কুলে এক সময় ইসলামিয়াত পড়াতেন। সেই সুত্র ধরে তিনি মাদ্রাসায়ও লেখা পড়া করেছেন। নিয়মিতই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। ফজর ওয়াক্তে কোরআন তেলওয়াত করেন। কিন্ত্তু কখনো এ বিষয়টি নিয়ে এত চিন্তা ভাবনা করেননি। করার প্রয়োজনবোধও করেননি। হালে কিছু পাগলগোছের মানুষকে দেখে তাদের প্রতি আ্গ্রহবোধ করেন এবং তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারেন যে, পুরুষের বীর্যই হচ্ছে মীনরুপী আল্লাহ। এই মিন মাতৃজঠরের পানিতে বেড়ে ওঠে। সেই পানিকেই বলা হয় আবে-হায়াত তথা জীবন পানি। তিনি তাদেরকে এ প্রশ্নটি করেননি কখনো যে - যে মীনরুপী ঈশ্বরের সৃষ্টি আছে, সে কখনো স্রষ্টা হতে পারে না। কেননা, মীন নিজেই পরনির্ভরশীল। যে পরনির্ভরশীল সে কিভাবে স্রষ্টা হয়? তাকে লালন পালন করার জন্য তার মায়ের খাদ্যের উপর নির্ভর করতে হয়। খাদ্য বিনা সে বাঁচতে পারে না। পুষ্টিকর খাবার খেলে মাতৃজঠরে ধারণকৃত শিশুটি সবল হয়। পক্ষান্তরে খাদ্য যদি পুষ্ট না হয়, তাহলে সেই শিশুটি রুগ্ন হয়। এজন্য ডাক্তাররা মায়েদেরকে বেশি বেশি করে সুষমখাদ্যের উপর জোর দিয়ে থাকেন। তাহলে যে খাদ্য খেয়ে দেহে বীজ তৈরী হয় - সেই বীজ কিভাবে সৃষ্টা হতে পারে - বিষয়টি ঠিক বোধ্যগম্য হচ্ছে না। এটা যে একটা অবান্তর চিন্তা-ধারা তা সুস্পষ্ট। একটা বীজকে বিশ্লেষণ করলে এর ভেতর পাওয়া যায় অনেক অনেক অজানা রহস্য। যেমন ক্রোমজোম। সেই ক্রোমজোম বংশধারা বা বংশগতি নিয়ন্ত্রণ করে। ছেলে-মেয়ের আকার প্রকার লিংগ ইত্যাদি। সেই ক্রোমজোমকেও বিজ্ঞানীরা এনালাইসিস করে অনেক অজানা তথ্য জানাতে সক্ষম হচ্ছেন। ডি এন এ টেষ্ট এর মধ্যে অন্যতম। তাহলে সেই ঈশ্বরকে বিজ্ঞানীরা কাঁটাছেড়া করে তছনছ করে ফেলছেন। সেটা মনে করে সরকার সাহেব একটু মুচকি হাসলেন। তিনি মনার কথার একটা যোগসুত্র খুঁজে পেয়েছেন যে অন্তত মনা সেদিকে যাচ্ছে না। তাহলে সে কোনদিকে যেতে চা্চ্ছে? সে কি বলতে চাচ্ছে - তিনি মনার দিকে তাকিয়ে বললেনঃ

-তুমি তো দেখি বেশ জানলে ওয়ালা লোক। অনেক কিছুইতো বললা। সবই শুনলাম। মাটি থেকে কিভাবে শিশুর উৎপত্তি তাতো কোরআনের আলোকেই বললা। আমরা তো তেমন কিছুই জানি না। আমরা যেটা করি সেটা কেবল তোমাদের মতো পাগল গোছের বা্‌উলদের কাছ থেকে শুনি। ঐসব সাধনা ফাধনা আমরা করি না। তাই ঐ বিষয়টা আমাদের জানা নাই। তোমরা বাবা সাধনা টাধনা কর। তোমরাই বল। আমরা শুনি। কি কন আপনেরা? 

সরকার সাহেব উপস্থিত সকলের দিকে তাকিয়ে বললেন। উপস্থিত সকলেই সেই কথায় সায় দিয়ে বললোঃ

-ওই কউক। আমরা হগলতে হুনি।

মনা সকলের দিকে তাকিয়ে দেখলেন - সকলেই তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্ত্তু মনা কি বলবে? ভেবে কিছু পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে সে যেন খেই হারিয়ে ফেলছে। সে কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে রইলো। তারপর মৌনব্রত পালন করলেন। কেউ কিছু বলছে না। সকলেই মনার দিকে তাকিয়ে আছে। দেখতে চাচ্ছে মনা কি বলে? এ মুহুর্তে মনা যেন একজন গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। মনা ভাবতেও পারেনি তার কথা শোনার জন্য এ আগ্রহ সকলের মাঝে জাগবে? কিন্ত্তু তাকেতো কিছু বলতে হবে? কি বলবে সে?
(চলবে)