পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৬

সাঁইয়ের এনাটমী ও মনা পাগলার অদ্ভুত হাসি-পর্ব সপ্তম

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

মনা যেভাবে বলছিল তাতে অনেকেই বিমোহিত হয়ে শুনছিল। যখন মনা বললোঃরুহটা হলো অবিকল নিজের মতো দেখতে, তখন অনেকেই যেন অন্য জগতে চলে গিয়েছিল। একজন আরেক জনের দিকে তাকিয়ে কি দেখতে পেলো, কে কাকে দেখলো? কিছু্ই বুঝা গেল না। শুধু তাকিয়ে থেকেই যেন বুঝতে চেষ্টা করছিল-মুল বিষয়টি কি? সবচেয়ে বড়ো কথা হলো-সেই রুহের আকার প্রকার কিছুইতো বুঝিয়ে বলতে পারছে না। কেবল আবেগের বশেই যেন বলে যাচ্ছিল মনা। তাছাড়া সে যেভাবে বলছে তাতে অনেকেরই মনে হতে পারে সে তাকে দেখেছে। রহিম চাচা হটাৎ করেই মাঝ পথে এ কথাটা জিগ্যাসা করে বসলেন। 

-বাজান, তুমি তারে দেকছো?

মনা এ কথার কোন জবাব দিল না। ঠায় ধুম ধরে বসে রইল। কথা বললো ভবা পাগলা। মনার কথার রেশ ধরেই সে বলা শুরু করলোঃ

-হুনেন, দেহনডা এত সহজ না। গুরুর সাধন ভজন না হইলে কেমতে তারে দেকবার চান? কন? আপনেই কন চাচা মিয়া? এইডা কি সম্ভব?

-না বাজান। হেয় যেইভাজে কইছে মনে অইলো হেয় যেন দেকছে। হের লাইগ্যাই জিগাইলাম বাজান। অন্য কিছু মনে কইর‌্যা কিছু কই নাই।

-বাজান, যারা দেহে হেরা কোন কতা সহজে কয় না। হেরা থাকে নীরবে। নিভৃতে। মানুষের ভীড়ের মইধ্যে হেগো খুঁইজ্যা পাওন যায় না। আপনেরে একটা গান হুনাই। সেই গানডা আমার দাদা পীর লেকছে। গানডার মর্ম বুঝবার পারলে আপনে অনেক কিছুই জানবার পারবেন। বুজবার পারবেন। গানডা অইলোঃ

হে শুজনী গুল বদনী চন্দ্রাননী নয়ন বাঁকা
মুক্তাকেশী প্রাণ প্রিয়াসী চন্দ্রশশী চরণছায়া।।
তব কাননে ধীর গমণে কুসুম কলি ফুটাও চরণে
বিহঙ্গগণে ললিত তানে প্র্র্রেম আলাপন করিবে সদা।
উদিত শশী কিরণ রাশি দুরিবে ভাতি মেঘের কালায়
তুমি যেখানে নাহি সেখানে সর্বস্ব তুমি কাহার ছায়া।
উঠাও আবরণ দাও দরশন তোমার আমার রবে না চিনন
তুমি অাসিলে রব না আমি তোমার আমার হবেগো দেখা।
কি আছে আমার সকলি তোমার ছলনা কেন করগো নাথ
ধরা পড়িয়ে সাজে কি তোমার করিতে এখন নানা বাহানা।
খন্ঞ্জন গমন মৃগয়ালোচন ওরুপ রাশি লুকিবে কোথা
প্রেমিক সুজন এহেন রতন হারে কি কখন পাইলে দেখা।
সর্বত্র তুমি যেথায় লুকিবে আমাতে তোমার খোঁজ মিলিবে
তেরা শাহাপীর হবে না অধীর তোমার আমার হবেগো দেখা।

ভবা গানটা শুনিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিল। দেখতে দেখতে লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল। বিশেষ করে যখন ভবা গানটা করছিল সেই গানের সুর শুনে আশে পাশের থেকেও লোকজন জড়ো হতে শুরু করলো। ঘরটির মধ্যে তিল ধরণের ঠাই নাই। সকলেই উঁকি ঝুঁকি মারছে। দেখতে চাইছে কে গান করছে? গান গাওয়া শেষ হলে মনা আবার ক্রমান্বয়ে মুখ খোলা শুরু করলোঃ

হুনেন আপনেরা জানতে চাইছিলেন না হের আকার আছে নি? হের আকার আছে। জগতে এমন কিছুই নাই যার আকার নাই। আকার ছাড়া নাম অয় না। আগে হুনছিলাম গ্যাস যেইডারে কই, হেইডা বুজি দেহা যায় না। এহন গ্যাস লাইটের মইধ্যে যেই পানি দেহি, হেইডা কি? পানি নাকি গ্যাস? হেই গ্যাসটারে আমরা খালিচোখে দেহি না। কিন্ত্তু হেইডারে যখন একটা স্বচ্ছ পাত্রের মইধ্যে আটকাইলে দেহা যায়, তাইলে রুহটা দেহা যাইবো না ক্যা? হেইডাতো এই দেহর মইধ্যেই কুল্লে শাইইন মুহিত অইয়া আছে হৃদয়ের মইধ্যে। প্রত্যেকটা বস্তুর মইধ্যেই হেয় আছে মুহিত রুপে। তথা মিশে আছে সত্তাসার অইয়্যা। হিন্দুরা কয় হেইডারে পরমাত্মা। হেইডার আয়তন চুলের আগার দশ সহস্রভাগের একভাগের সমান।
হিন্দুগো ধর্মগ্রন্থ শ্বেতাশ্বর উপনিষদে কইছেঃ
বালাগ্র শতভাগস্য শতধা কল্পিতস্য চ।
ভাগো জীবঃ স বিজ্ঞেয় স চানস্ত্যায় কল্পতে।।[শ্বেতা ৫/৯]
গীতায়ও ঠিক হেইভাবেই কইছেঃ
কেশাগ্রশতভাগস্য শতাংশর সদৃশাত্মকঃ
জীবঃ সূক্ষ্ম স্বরুপোয়ং সংখ্যাতীতে হি চিৎকণ।। 
(চলবে)