পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ৫ জুন, ২০১৬

মনা পাগলার আত্মচিৎকার এবং বাস্তবতা-পর্ব তিন

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

মনা হাঁটতে হাঁটতে সামনের দিকে এগুতে লাগলো। আর পেছেনে তাকিয়ে দেখলো হারুন তার পেছনে পেছনে আসছে। কিন্ত্তু এই মুহুর্তে সে চাচ্ছে না কেউ তাকে সঙ্গ দিক। সে অন্য একটা গলির দিকে দ্রুত ঢুকে পড়লো। কিন্ত্তু হারুন নাছোড়বান্দা। সে দৌড়ে মনার সামনে এসে দাঁড়ালো তারপর বললোঃ

-কি ব্যাপার ভাই? আপনে আমারে হালাই থুইয়্যা অাইয়্যা পড়লেন? আর আমি আপনের পিছনে পিছনে দৌড়াইতে দৌড়াইতে শেষ....

-তরে কি কইছি, তুই আমার লগে আয়? আমার লগে অাহিস না। অাইলে বিপদে পড়বি...আমার কথা শোন্ তুই আমারে ছাইড়্যা যাগা...তোর ভালা অইবো?

-আরে রাহেন ভালা-বুড়া....আগে কন আমারে কেন আপনে বেদটা জানাইতে চাইতাছেন না....

-আরে বেশি বেদ জানন ভাল না....জানলে বিপদ আছে...

-খালি বিপদের কথা কয়...হুনেন বিপদের ভয় দেহাইয়্যা আমারে লাব নাই...আমি ডরাই না...

তারা হাঁটতে হাঁটতে মোড়ের মুল রাস্তা ছেড়ে একটা গলির ভেতর ঢুকলো। সেই গলির প্রথম দোকানটা মাসুমের। এ অন্ঞ্চলে মাসুমের চায়ের দোকানের সুখ্যাতি আছে। গরুর দুধের চা। বেশ ভালো বানায়। দুর দুরান্ত হতে অনেকেই এখানে আসে চা খেতে। দোকানটিতে বসার কোন স্থান রাখা হয় নাই। সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই চা খায়। মনা সেই দোকানের ধারের কাছে গিয়ে সবুজকে দেখে বললোঃ

-সবুজ ভাই, দুইডা ফাস কেলাস চা দেন....

সবুজ দুজনের জন্য দুই কাপ বানিয়ে দেয়। চায়ে চুমুক দিয়ে মনা বেশ একটা পরিতৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলে

-...আহা..চা ডা দারুণ হইছে। তোর দোকানের চা না খাইলে মনে অয় না যে চা খাইছি...

মনার কথা শুনে সবুজ লজ্জা পায়। বিনয়ের সুরে বলেঃ

-মনা ভাই, আমরার লাইগ্যা দোয়া করুনচে...যেন ভালা কইর‌্যা চা আফনারারে বানাইয়্যা খাওইতাম পারি।

-আরে বেডা চাতো ভালাই বানাস। এর থন আর কি ভালা বানাইতে পারবি...

হারুন দেখলো মনা সবুজের সাথে কথা বলে কাল ক্ষেপন করছে। সে চাচ্ছে হারুন চলে যাক। মনাকে একা করে দিক। কিন্ত্তু তার ভাব ভঙ্গীতো ভালো ঠেকছে না...মনে হচ্ছে সে মুল কথা না শুনে যাবে না...দেখাই যাক না কি হয়...

হারুন চা খেয়ে সিগারেট কিনলো। অার একটা মেছ কিনলো। তারপর মনার দিকে তাকিয়ে বললোঃ

-এই দিকটায় বহেন। এইডা নিরিবিলি আছে। কেউ ডিটাব করবো না।

এই কথা বলে হারুন ম্যাচ আর সিগারেটের প্যাকেটটা মনার দিকে বাড়িয়ে দেয়। তারপর মনা একটা সিগারেট ধরিয়ে হারুণের পাশে আয়েশ করে গা এলিয়ে দিয়ে বসে। তারপর সিগারেটের ধোঁয়ার কুন্ডলি আকাশের দিকে ছেড়ে বলেঃ

-বুঝলি রে পাগলা - মানুষের বীজের মইধ্যেই আছে আসল তত্ত্ব। হেই তত্ত্বটা বুঝবার পারলে মানুষ যে কতো উর্ধ্বস্তরে উইট্যা যাইতে পারতো গা...হেইডা মানুষ জানে না...দেখ সুরা মুদাচ্ছির আয়াত নং ৩০। হেইহানে আল্লাহ পাক কইছেঃ "এরপর উনিশ"। এই উনিশ কইথ্ক্কিা আইলো? প্রথমে যহন সুরা আলাক নাজিল হয় তহন আয়াতের সংখ্যা আছিল ৫। তারপর দীর্ঘদিন ধইর‌্যা আর কোন আয়াত আহে নাই....হেই সুময় মক্কার কাফেররা মহানবীরে দারুণ অপমান আর অপদস্ত করছিল। আল্লায় কইলোঃ "অামি শীঘ্রই আপনার উপর ভারী কালাম নাজিল করুম।" আয়াত নং-৫ সুরা নাম্বার ৭৩। এই উনিশ আর কিছুই না। এইডা অইলো বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। এইহানে আয়াতের সংখ্যা উনিশ। আবার দ্যাখ, কোরআনে মোট সুরার সংখ্যা ১১৪টা। এইডা ১৯ দিয়া ভাগ দে। দেখবি মিল্ল্যা যাইবো গা। ১১৪/১৯=১৬

প্রথমে যেই সুরা নাজিল করা অয়, হেইডা অইলো সুরা আলাকের পাঁচটি আয়াত। যার মইদ্যে উনিশটা শব্দ আছে। এই উনিশটি শব্দের মইদ্যে ৭৬টি অক্ষর আছে। ৭৬ শব্দটিও ১৯ দিয়া ভাগ দিলে মিল্ল্যা যায় গা..(৭৬/১৯=৪)..যুদিও এই সুরাডা নাযিল অইছিল প্রথমে। এহন আছে ৯৬নম্বর স্থানে। উল্টা দিক দিয়া যদি গনন যায় তাইলে দেকবি এই সুরা অইতাছে ১৯ নাম্বারে। সুরা মুদাচ্ছিরে ৩০ নং আয়াতে আল্লাহ পাক কইছেঃ "এর উপর রইছে উনিশ"। ঘটনা এইডা না। সুরা নাস যেই সুরাডা সবার শেষ সুরা, হেই সুরার শব্দ সংখ্যাও ১৯ । তার মাইনে কি? এই উনিশের মইদ্যে কি আছে?

-বাই আমারও জাননের ইচ্ছা আছে। এই উনিশের মইধ্যে কি আছে?

-কি আছে? এহনো বুঝবার পারস নাই?

-না...

-গাধা..তাইলে আরো হোন, প্রথম ওহী সুরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াতের শব্দসংখ্যার মতনই কোরআনের আরো বহু পরিসংখ্যান আছে। যেমন ধর
কোরআন যে আনছে হেরে কয় রসুল। রসুল শব্দটা কোরআনে আইছে - ৫১৩ বার।
যার বাণী রাসুল আনছে হেরে কয় রব। রব শব্দটা কোরআনে আইছে - ১৫২ বার।
কোরআনের কেন্দ্রীয় বাণী অইতাছে ইবাদত। ইবাদত শব্দটা কোরআনে আইছে - ১৯ বার।
কেন্দ্রীয় বাণীর আরেকটা ভাষা অইলো আবদ। এই শব্দটা কোরআনে আইছে - ১৫২ বার।
আবদের কাম যে করবো হেরে কয় আবীদ। কোরআনে আবিদ শব্দটা আইছে - ১৫২ বার।
এই সবই ১৯ দিয়া ভাগ দে। মিল্ল্যা যাইবো গা।
(চলবে)