পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১২ জুন, ২০১৬

মনা পাগলার আত্মচিৎকার এবং বাস্তবতা-পর্ব ছয়

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

মনার কথা শুনে হারুন একটু নড়ে চড়ে বসলো। তারপর মনার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলোঃ

-এই যে আপনে কইলেন সুরা ওয়াকেয়ার ৫৮ নং আয়াতে আফারায়াইতুম মা-তুমনুন অর্থঃ ভেবেছ কি তোমাদের বীর্যপাত সম্বন্ধে । হের পর ৫৯নং আয়াতে আআনতুম তাখলুকনাহ আম নাহনুল খা-লিকুন। অর্থঃ তা থেকে তোমরা সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি? এইডার কথার মানিডা ঠিক বুঝবার পারলাম না...আমাগো কইলো বীর্যপাত সমন্ধে চিন্তা করতে তারপর কইলো তুমরা সৃষ্টি কর না আমি?

-আরে তুমি যে বীর্যপাত করবা, কার উপর করবা? আগে হেইডা ভাবো? তুমি যদি চিন্তা কর আমি মাইয়্যাডারে ভালোবাসি। হেই ভালোবাসার নাম কইর‌্যা তার স্বতীত্ব হরণ করবা? যেই চিন্তা কইর‌্যা বীজটা ঢালবা, হেই বীজটা ঠিক হেয় হেইরকম কইর‌্যাই তৈয়ারী কইর‌্যা পাডাইবো।  নজরুলের কবিতায় পড়ো নাই...শ্রেফ পশুর ক্ষুদা লইয়্যা হেথা মিলে নর-নারী যতো, সেই কামনার সন্তান মোরা তবুও গর্ব কতো? পশুর ভাব লইয়্যা যুদি বীজ ঢালো তাইলে হেই বীজের যে ফসল অইবো হেইডা অইবো পশুর মতোন। যদিও দেকতে মানুষের মতন। হুন যেই নিয়ামত আল্লায় তুমারে দিছে, হেই নিয়ামতের পাই পাই হিসাব হেয় নিব। তুমি কি ভাবছো, তোমারে এম্মনি এম্মনিই ছাইড়্যা দিব?

আরে বাউল ফকির সাধুগো মুকে হুন না. হেরা কি কয়? হেরা হয়-খবরদার, স্বত্ত্বা খন্ডিত করবা না। স্বত্ত্বা খন্ডিত অইলে তুমি বিপদে পড়বা। হেরা কি করে? হেরা যে কয় স্বত্ত্বা খন্ডিত করবা না....যদি স্বত্ত্বা খন্ডিত না অয় তাইলে হেগো ঘরে পুলা-মাইয়্যা আইলো কেমতে? আবার দেহো অন্যদিকে সুফী-সাধকরা বছরের পর বছর নির্জন সাধনা কইর‌্যা কামেল অওনের পর বিয়া সাদী কইর‌্যা হেগো স্বত্ত্বা খন্ডিত কইর‌্যা মুল খনি থিক্ক্যা জগত বাসীর লিগ্যা যেই সন্তান দিয়া গেছে...হেরাও কালজয়ী পুরুষ অইয়্যা গেছে.....কারণ কি? কারণ আর কিছু না.....বীজের খবর লওন....একটা মানুষের বীজের মইধ্যে  কি থাকে? আগে হেইডা জানো মিয়া?

-কেমতে জানমু?

-কেমতে জানমু মানে? তোমার কি বীজ নাই?

-আছে তো? থাকলে হেইডারে কেমতে জানমু? তাইলে তো বীজ বাহির করন লাগবো....এ কথা বলে হারুন একটু লজ্জা পেয়ে হেসে উঠলো। সেই হাসির সাথে তাল মিলিয়ে মনাও হেসে উঠলো। তারপর হাসি থামিয়ে বললোঃ

-এই মানবদেহডা আল্লাহ পাকের লীলাভুমি। আল্লাহ অইলো যেই উপাদান দিয়া তুমি তৈরী অইছো। যেমুন আরবা আনাছের বা খামছা আনাছের। আব, আতশ, বাত, খাক, নুর। এই পঞ্চ উপাদানে তুমি সৃষ্ট। এইগুলারে কয় পাক পান্ঞ্জাতন। তোমার বীজও হেই পাক পান্ঞ্জাতন দিয়া সৃষ্টি অইছে। হেই বীজের মইধ্যে আছে উনিশটি উপাদান। সেগুলি অইলোঃ ১। হাইউন, ২। আলিমুন, ৩। কুদিরুন, ৪। মুরিদুন, ৫। সামিউন, ৬। বসিরুন, ৭। কলিমুন, ৮। দম,৯। কদম, ১০। অহম,১১।.ফহম,১২। আক্কেল, ১৩। এলেম, ১৪। হেলেম, ১৫। আগুন, ১৬। পানি,১৭। মাটি,১৮। বাতাস এবং ১৯। নুর। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর মইধ্যেও উনিশটি অক্ষর আছে। কিন্ত্তু মুল অক্ষর আছে ১০টি। আর এই ১০টি অক্ষরই মোট ১৯ বার ব্যবহার করছে। যেমুন-১। আলিফ-ব্যবহার অইছে = ৩ বার, ২। মীম-ব্যবহার অইছে = ৩ বার, ৩। বড় হে-ব্যবহার অইছে = ২ বার, ৪। রা ব্যবহার অইছে = ২বার, ৫। লাম-ব্যবহার অইছে = ৪বার, ৬। নুন-ব্যবহার অইছে = ১বার, ৭। ছোট হে-ব্যবহার অইছে = ১বার ৮। বা-ব্যবহার অইছে = ১বার, ৯। সীন-ব্যবহার অইছে = ১বার ১০। ইয়া-ব্যবহার অইছে = ১বার। এই দশ অক্ষর অইতাছে বিসমিল্লাহর প্রাণ বা বীজ অক্ষর। ইলমে তাছাউফের ভাষায় এই বিসমিল্লাহরে কয় নুরে মুহাম্মদ। এই নুরে মুহাম্মদী থিক্ক্যাই ১। কালেব ২। রুহ ৩। ছের ৪।খফি ৫। আগফা ৬। নফস ৭। আব ৮। আতশ  ৯। বাদ এবং ১০। খাকের সৃষ্টি।
প্রথমে তুমি আছিলা তোমার বাবার মাথার মইধ্যে। খায়েশের কারণে তোমার মায়ের গর্ভে তোমারে পাডাইয়্যা দিছে। আর তুমি বন্দী অইয়্যা আইছো এই পৃথিবীতে। হের লাইগ্যাইতো শাহ্ পীর কয়ঃ পাঠিয়ে দিয়েছ তাইতো এসেছি, আমি কি কিছুই জানি? যে পাডাইছে হেরে কিন্ত্তু তুমি দেকতে পারবা না। হেয় আড়ালে থাইক্ক্যাই তোমারে পাডায়ইয়্যা দিছে। হেরে কয় খালেক। মানি সৃষ্টি কর্তা। তুমি তোমার বাবারে সৃষ্টিকর্তা কইতে পারো। কিন্ত্তু কোরআন কইতাছেঃ তুমি সৃষ্টি কর, না আমি? এই অামি হচ্ছে দৃষ্টির অগোচরে থাকা মহা অামি। হেয় রব রুপে সবার মইধ্যেই মুহিত অবস্থায় থাহে। বুঝবার পারছো মিয়া?
আবার দ্যাহো, এই বীজ যহন মাতৃজঠরে যায়, তহন হেরে লালন পালনের লিগা মায়ের বুকের মইধ্যে দুদ আহে। হেই দুদের মইধ্যেই আছে ৫+৭ = ১২ ডা উপাদান। ডাইনধারে ৫ টা। আর বাম ধারে ৭টা। ডাইন ধারের ৫টার নাম অইলো গিয়া ১। নুরী ২। জহুরী ৩। যব্বুরী ৪। সত্তুরি ৫। বে-খুদী। এই পাঁচটা উপাদান দিয়া তৈয়ার অয়ঃ ১। আগুন ২। পানি ৩। মাটি ৪। বাতাস ৫। আকাশ। আর বাম ধারের ৭টার নাম অইলোঃ ১। শনি ২। রবি-সুর্য ৩। সোম-চন্দ্র ৪। মঙ্গল ৫। বুধ-ক্ষুদ্র ৬। বৃহস্পতি-বৃহৎ ৭। শুক্র-বীর্য। এই সাতটি দিয়া যেইগুলা তৈয়ার অয় হেইগুলি অইলোঃ ১। হাইউন-জীবিত শক্তি ২। আলিমুন-জ্ঞান ৩। কুদিরুন শক্তি-কর্মশক্তি ৪। মুরিদুন-যৌনশক্তি ৫। সামিউন-শ্রবণশক্তি ৬। বসিরুন-দর্শন শক্তি ৭। কালিমুন-বাক শক্তি। এই পাঁচ আর সাত মিল্ল্যা অইলো বারোডা রস ভান্ডার যারে কয় কলেমা বা বাক্য। সৃষ্টির মইধ্যে এই কলেমাই সবথিক্ক্যা উত্তম। হেরলিগ্যা এইডারে কয় মুসসফী কলেমা। এই বারোডা থিক্ক্যা আবার আরো বারোডা জিনিসের পয়দা অইছে। হেইগুলা অইলোঃ১.ওয়াজেবুল অযুদ ২। অহেদাল অযুদ ৩। আরেফেল অযুদ ৪। মোমতেনল অযুদ ৫। মোমকেনাল অযুদ ৬। জীবিত শক্তি ৭। জ্ঞান শক্তি ৮। কর্ম শক্তি ৯। শ্রবণ শক্তি ১০। যৌন শক্তি ১১। দর্শন শক্তি ১২। বাক শক্তি।
(চলবে)