পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ১১ জুন, ২০১৬

মনা পাগলার আত্মচিৎকার এবং বাস্তবতা-পর্ব পাঁচ

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

চিন্তাযুক্ত মনা পাগলা হারুণের দিকে তাকিয়ে বললোঃ
- হারুন্যা তুইতো আমারে মহা চিন্তায় ফালাইয়্যা দিলি....

-ক্যান ভাই? কি হইছে....

-এই যে তুই বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম এইডা কোরআনের আয়াত কি-না জানতে চাইছোস...আমিতো লেহা পড়া বেশি করতে পারি নাই..কেমতে জানমু...বই পুস্তক যে পড়মু .....হেই টেক্যা পয়সাও আছিল না...স্কুলেও যাইতে পারি নাই...

-কি যে কন, ভাই? আমিওতো তেমুন লেহা পড়া হিগি নাই....তয় আমিও মসজিদের ইমাম সাবেরে জিগাইছিলাম হেয় যেই কতা কইছে হেডা আপনেরে হুনাইতে পারি?

-ক দেহি...কি কইছে...

- হেয় কইছেঃ
بسم الله الرحمن الرحيم কোরআনের আয়াতের অংশ। সুরা নমলের একটি আয়াত বা অংশ। সুরা ‘তাওবা’ ব্যতীত প্রত্যেক সূরার প্রারম্ভে بسم الله الرحمن الرحيم লিখা বা পাঠ করা হয়। তাসমীয়াহ সুরা ফাতিহার অংশ, না অন্যান্য সকল সূরারই অংশ এতে ইমাম, মোজতাহিদ ও তাফসীরবিদগণের মতানৈক্য রয়েছে। ইমামে আ’জম আবু হানীফা (রাঃ) বলেছেন, بسم الله الرحمن الرحيم সুরা নমল ব্যতীত অন্য কোন সূরার অংশ নয়। তবে এটি এমন একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ আয়াত যা প্রতিটি সূরার প্রথমে লিখা এবং দু’টি সূরার মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করার জন্য অবতীর্ণ হয়েছে। ইমাম হাকেম, ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম (রাঃ) এর নীতিমালা অনুস্বরণে বিশুদ্ধ হাদীছ রুপে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম প্রথম দু’টি সূরার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করনে অসুবিধার সম্মুখীন হতেন, তখন ‘বিসমিল্লাহ’ অবতীর্ণ হয়। (মাযহারী)

ইবনে মরদুওয়াইর তাফসিরে রয়েছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, আমার ওপর এমন একটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে যার মতো আয়াত হজরত সুলাইমান ছাড়া অন্য কোনো নবীর ওপর অবতীর্ণ হয়নি। আয়াতটি হলো, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’। হজরত জাবির রাঃ বর্ণনা করেন, যখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন পূর্ব দিকে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়, বায়ুমণ্ডলী স্তব্ধ হয়ে যায়, তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ সমুদ্র প্রশান্ত হয়ে ওঠে, জন্ত্তুগুলো কান লাগিয়ে শয়তানকে বিতাড়ন করে এবং বিশ্ব প্রভু স্বীয় সম্মান ও মর্যাদার কসম করে বলেন, ‘যে জিনিসের ওপর আমার এ নাম নেয়া যাবে তাতে অবশ্যই বরকত হবে। (তাফসির ইবনে কাসির)

হেয় আরো কইছেঃ

আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস বলেন, ‘জিবরাইল (আঃ) সর্বপ্রথম মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন, তা হচ্ছে জিবরাইল (আঃ) বললেন, হে মুহাম্মদ! আপনি আশ্রয় চান। মুহাম্মদ (সাঃ) বললেন, আমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই। অতঃপর জিবরাইল (আঃ) বললেন, হে নবী! আপনি বলুন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। অতঃপর জিবরাঈল (আঃ) বললেন, ইকরা বিসমি… অর্থাৎ আপনি পড়ু–ন, আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, এটাই প্রথম সূরা, যা আল্লাহ তায়ালা জিবরাইল (আঃ) এর মাধ্যমে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি অবতীর্ণ করেন।’ (ত্বাবারি, তাফসির ইবনু কাছির হা-২৬৩)

-হুম..ভালোইতো কইছে। কিন্ত্তু এইডার হাকীকত কি, হেইডা জানস?

-কেমতে জানমু ভাই? 

-আরে এইডার হাকীকত আরো গুরুত্বপুর্ণ। তুই দ্যাখ, একটা মানুষ, হের মইধ্যে যা কিছু আছে তার সবই আছে হেই মানুষের বীজের মইধ্যে। মানি অইলোঃ প্রত্যেকটা বীজই হাকীকতে পুর্ণাঙ্গ মানুষ তথা ইনসানে কামিল। হেয় অইতে পারে পুরুষ না অইলে মাইয়্যা মানুষ। হেই দিকে লক্ষ্য কইর‌্যা আল্লাহ পাক কইতাছেঃ

"অাফারায়াইতুম মা-তুমনুন। আআনতুম তাখলুকুনাহ আম নাহনুল খালিকুন। নাহনু ক্বাদ্দারনা বাইনাকুমুল মাওতা ওয়ামা নাহনু বিমাসবুক্বীন।"[সুরা ওয়াকেয়া আয়াত নং-৫৮-৬০]। অর্থঃ মানুষ আপন বীজের যে মৃত্যু ঘটায় অর্থাৎ যে বীর্যপাত করিয়া থাকে তার পরিণতি সে দেখে না? স্খলিত বীর্য হইতে মানুষ সৃষ্টি করা বা না করার দায়িত্ব তাহাদের। তাতনুন অর্থ তোমরা নিক্ষেপ/প্রবাহিত করছ। হের পর অন্য আয়াতে ঐ একই সুরার ৬৩নং আয়াতে কইছেঃ আফারায়াইতুম মা- তাহরুছুন? তোমরা যে বীজ বপন কর, সে সর্ম্পকে (তোমরা) ভেবেছ কি? আআনতুম তাযরাউনাহ আম নাহনুয যা-রিউন। অর্থঃ তোমরাই কি তাকে অন্কুরিত কর না আমি করি? লাও নাশা-উ লাজ্বাআ'লনা-হু মান ফাজালতুম তাফাক্কাহুন। অর্থঃ অামি ইচ্ছা করলে একে চুর্ণ-বিচুর্ণ করতে পারি, তখন বুদ্ধিহীন হয়ে পড়বে।
(চলবে)