পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০১৬

মনা পাগলার আত্মচিৎকার এবং বাস্তবতা-দ্বিতীয় পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

এস. আই জহির কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেনঃ

- এতটুকুন বাচ্চাটাকে থানায় নিয়ে লাভ নেই। তারচেয়ে এক কাজ করা যায়, যদি ঐ মেয়েটা এই নাবালকটিকে দত্তক নিতে চায় তাহলে থানা থেকে তার নামে একটি সাধারণ ডায়েরী করে ওর হেফাজতে দেয়া যেতে পারে। তবে এ ব্যাপারে প্রত্যক্ষ স্বাক্ষ্য দেয়ার জন্য কতিপয় লোকের স্বাক্ষর লাগবে...

স্বাক্ষ্য দেয়া লাগতে পারে শুনে অনেকেই কেটে পড়তে শুরু করেছে। কিন্ত্তু কেটে পড়তে পারছে না জমির সাহেব। তাকে অবশ্যই স্বাক্ষ্য দিতে হবে। যদি স্বাক্ষ্য না দেয়, তাহলে সে ঝামেলায় পড়তে পারে...কাজেই সে রাজী হয়ে গেল। এস আই জহির বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে...কি যেন মনে মনে বলল। তার পর সে গাড়ীতে উঠতে আদেশ করলো অন্যান্যদের। সবাই গাড়ীতে উঠলে ফোস করে একরাশ ধোয়া তুলে গাড়ীটি ছুটে চললো থানার দিকে। 

লোকজনের জটলার ভেতর একটা মেয়ের দিকে বার বার চোখ আটকে যাচ্ছিল মনার। সে বার বার মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছে...দেখছে মেয়েটি তার চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না। ওড়নার আঁচল দিয়ে থেকে থেকে চোখ মুছছে। কেউ যেন দেখতে না পায়, সে জন্য সে একটা বড় ঘোমটা টেনে দিয়েছে। মনাকে ঐ মেয়েটার দিকে বার বার তাকাতে দেখে হারুন ব্যাপারী বেশ অবাক হলো। মনা কখনো কোন মেয়ের দিকে বার বার তাকাচ্ছে, সেটা বিরল। তাছাড়া মনার প্রেমে পড়ার বয়সও নেই...সে দেখতেও সুশ্রী নয়। কোন মেয়ে কোন পাগলের প্রেমে পড়েছে..সেটা বিরল...তাহলে ঐ মেয়েটার দিকে বার বার দৃষ্টি দেয়ার কারণ কি? হারুণ ব্যাপারী বেশ কৌতুহলী হলো। সে দেখতে চাইলো মনা আসলে কি করে?
লোকজন চলে যেতেই জায়গাটা বেশ ফাঁকা হয়ে গেল। তছি পাগলী বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে থানায় গেছে। সাথে জমির সাহেব। সাংবাদিক ভাইরাও চলে গেছে...যে মেয়েটি বার বার চোখ মুছছিল, সেই মেয়েটি মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছে..অার মনা সেই মেয়েটির যাওয়ার দৃশ্য দেখে বললোঃ

-হায়রে মায়ের মন...দেইখ্যা গেলা তোমার বাচ্চাটার কি অবস্থা অয়? তোমারে কেউ না দেকলেও আমি ঠিকই বুইঝ্যা হালাছি...সাংবাদিকরাও তোমার খবর পায় নাই..পুলিশও চিনলো না...আমি কিন্ত্তু ধইর‌্যা ফালাইছি.....হা...হা....

মনাকে ওভাবে হাসতে দেখে হারুন জিগ্যেস করে

-কেমতে বুঝলেন?

-দেহেন না...কেমুন কইর‌্যা ঘোমটা দিছিলো আর হেই ঘোমটার ফাঁক দিয়া চোক মুছছিল...

-হেইডা দেইখ্যাই ধইর‌্যা হালাইছেন?

-ব্যাডা হোন...মায়ের মন হইল তারই সন্তানের মতো। হেই সন্তান যেমুন কইর‌্যা তারে জানান দেয়, তার নাড়ীর ধন যারে পেটে ধরছে তারও একটা টান হেয় অনুভব করবোই...হেই টানেই মাইয়্যাডা ছুট্রা আইছে...কিন্ত্তু সমাজের ভয়ে কাছে আসতে সাহস পায় নাই....

-হায়রে প্রেম...দেহের টানে মিলনের লিগ্যা যেই বাচ্চাটারে জন্ম দিল....হেই সন্তানডারে ঐ ময়লার মইধ্যে হালাইতে একটুও বিবেকে বাধলো না....

প্রেমের কথা শুনে এবং বিবেকের কথা শুনে মনা কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেল। মনা চিন্তায় মশগুল হলো। মনা মাথা নিচু করে রইলো। মনাকে হটাৎ চুপ করে থাকতে দেখে হারুন বললোঃ

-কি অইলো? হটাৎ কইর‌্যা থুম মাইর‌্যা গেলেন গ্যা

-ভাবতাছি...

-কি ভাবতাছেন?

-কওন যাইবো না...

এ কথা বলে মনা হন হন করে হাঁটতে লাগলো। মনাকে হাটতে দেখে হারুনও মনার পেছনে হাঁটতে লাগলো।
(চলবে)