পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

তুমি র'বে নীরবে-পর্ব এক

অাজ সকাল থেকেই মেঘ আসবো আসবো করছে কিন্তু আসছে না। আকাশটাও মেঘের আনা-গোনায় ভেলা ভাসিয়েছে। এই আসছে, আবার যাচ্ছে। মাঝে মাঝে হিম শীতল ঠান্ডা বাতাস মুহুর্তেই শরীরে শিহরণ ধরিয়ে দিচ্ছে। অামি পাঁচ তালার যে রুমটাকে থাকি, সেখান থেকে জানালা খুলে দিলেই পুরো আকাশটাই দেখা যায়। রুমের গ্লাসগুলো হাল্কা রঙিন। তাই রুমের ভেতর থেকে প্রকৃতির সেই রুপ ভালো ভাবে দেখা যায় না। প্রকৃতি দেখতে হলে অবশ্যই খালি চোখে তাকিয়ে দেখতে হবে। উপভোগ করার জন্য চাই একটা মন। সুন্দর মন। কিন্তু আজকের প্রকৃতি একটু ভিন্ন ধাঁচের।

সাদা নরোম তুলতুলো মেঘ গুলো বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে এদিক সেদিক উড়ে বেড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে হাল্কা বৃষ্টি হচ্ছে। সেই বৃষ্টির ঝপটা এসে পড়ছে বারান্দায়। 

অামার মনের কোণেও আকাশের মতোই মেঘ জমেছে। যে কোন মুহুর্তে বৃষ্টি হওয়ার আশু সম্ভাবনা আছে। মনটা খারাপ থাকায় ভেবেছিলাম বিছানায় শুইয়ে বই পড়ে কাটিয়ে দেব। কিন্তু সেটা আর হলো কোথায়? হটাৎ কলিং বেলের অাওয়াজে বিছানা থেকে উঠতে হলো। বিছানা হতে নেমে দরজা খুলতেই চোখ কপালে উঠলো।
দেখলাম শ্বেতা দরজায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। আজ শ্বেতা শাড়ী পড়েছে। কপালে দিয়েছে লাল টিপ। শ্বেতা এম্ম নিতেই সুন্দর। তার উপর মানান সই শাড়ি, লাল টিপ....চোখ দুটো টানা টানা হরিণীর মতোন। বেশ অবাক করা দৃষ্টি। একবার তাকালে তাকে ঠিক মতো অনুভব করা যায় না। বার বার তাকাতে হয়। অামি তাকিয়েই ছিলাম...
আমাকে হেবলার মতো তাকাতে দেখে শ্বেতা বললোঃ

- কি হলো? ভেতরে আসতে বলবে না? না-কি এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখবে?

শ্বেতার কথায় আমি সম্বিত ফিরিয়ে পেলাম । তারপর তাকে ভেতরে আসতে বললাম। শ্বেতা ঘরে ঢুকেই নাকে আংগুল চেপে বললোঃ

- উফ্। সিগারেটের উৎকট গন্ধে ঘরটা পুরো ভরে গেছে...কতো সিগারেট খাও তুমি...

- বেশি না। এই ধরো সারা দিনে এক প্যাকেট যায়...আর রাতে প্রায় অর্ধেক...

- তার মানে তুমি দেড় প্যাকেট সিগারেট খাও...

আমি হাসলাম। কোন উত্তর দিলাম না। আমি খেয়াল করলাম, শ্বেতার গা থেকে মিষ্টি একটা পারফিউমের গন্ধ আসছে। সেই গন্ধটা কেন যেন আদিম প্রবৃত্তিটাকে জাগিয়ে দিতে চাইছে। সিগারেটের গন্ধটা আমি পাচ্ছি না। আমি পাচ্ছি একটা ভালো লাগার শিহরণ। একটা অনুভুতি। অামি সহসাই বলে উঠলামঃ
- চলো। বাহিরে যাব। আজ সারাদিন তোমাকে নিয়ে বাইকে ঘুরবো। যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাব। 'কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা' মার্কা গানের মতো।
এ কথা বলেই আমি শ্বেতার হাত ধরে টানতে টানতে নিচে গ্যারেজের কাছে এসে দাঁড়ালাম। আমাকে দেখে দারোয়ান সফিক চাচা একটা বিকট হাসি দিয়ে স্যালুট দিল।  বললোঃ

- ভাইজান, কি বাইরে যাইতাছেন?
আমি হোন্ডাটার তালা খুলে সেটাতে চেপে বসলাম। পাশেই শ্বেতা বসলো। তারপর আমি হোন্ডা স্ট্যাড দিতে দিতে বললামঃ

- জ্বি চাচা। বাইরে যাচ্ছি। আসতে দেরী হতে পারে। খেয়াল রাখবেন। আমি পেছন ফিরে  শ্বেতার দিকে তাকিয়ে  বললামঃ শক্ত করে চেপে ধরো। হোন্ডা কিন্তু টান দেব। সে সময় কিন্তু পড়ে যেতে পারো...
আমার কথা শুনে শ্বেতা আমাকে পেছন থেকে জোরে চেপে ধরে। শ্বেতার বুকটা আমার পিঠের সাথে লেপ্টে থাকে। আমি ভেতরে ভেতরে একটা নরোম উষ্ণতার ছোঁয়া পাই। শ্বেতা আমাকে এমন শক্ত করে ধরেছে যে, আমার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো। তবুও আমি কিছু বললাম না। কেবল মুচকি হাসলাম।
সফিক চাচা পুরো গেটটাই খুলে দিয়েছে। আমার কোন অসুবিধাই হলো না। আমি নির্দ্দিধায় হোন্ডাটা মুল রাস্তায় নিয়ে আসলাম। তারপর সাঁই করে টান দিয়ে এগিয়ে চললাম।  আমি যে দিকে থাকি, সেখান থেকে হাতির ঝিল মিনিট পনেরো দুরত্ব। হেঁটে গেলে বড়ো জোর অাধা ঘন্টা লাগতে পারে। সেই পনেরো মিনিটের রাস্তাটা বানিয়ে ফেললাম পাঁচ মিনিটের রাস্তা। রাস্তা ফাঁকাই ছিল। তাই হোন্ডা টান দিতে কোন অসুবিধাই হলো না। কিন্তু মোল্লা টাওয়ারের সামনে একটা জ্যামে পড়ে গেলাম। জ্যামটা বেশ বড়ো সড়ো। পুলিশের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। তারা রিক্সাওয়ালাদের বেদম পেটাচ্ছে। রিক্সাওয়ালারা পরি মরি করে তাড়াতাড়ি ছুটতে গিয়েই একটার সাথে আরেকটার চাকা লাগিয়ে জ্যামের সৃষ্টি করেছে। অবশ্য সেই জ্যামটা ছুটতে কতোক্ষণ লাগতে পারে, আমি মনে মনে সেটা চিন্তা করছি আর হোন্ডাটা আস্তে আস্তে টানছি। অার একটু একটু করে সামনের দিকে এগুচ্ছি......
রামপুরা টিভি সেন্টারের পাশ দিয়ে রাস্তা গিয়েছে মৌচাক-মগবাজারের দিকে, সেই রাস্তার পাশেই একটা যাত্রী ছাউনির মতো জায়গায় গোটা কয়েক পুলিশ বসে ছিল। তারা শ্বেতার দিকে বার বার তাকাচ্ছিল। শ্বেতা বেশ অপ্রস্তুত হয়েই মুখটা ঘুরিয়ে নিল। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললোঃ 
- এ্যাই জোরে চালাও না...

- আরে বাবা...যাচ্ছি তো....বেশি জোরে টানা যাবে না। টানলে মামারা আটকাবে?

- মামা পেলে কোথায়...

- ঐ যে, সামনে যে ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছে সেই হলো মামা। 
অামি দাঁড়িয়ে থাকা সাব ইন্সপেক্টরকে দেখিয়ে দিলাম।
(চলবে)