পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৭

তুমি র'বে নীরবে-দ্বিতীয় পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

ছিপছিপে শরীরের সাব-ইন্সপেক্টরকে দেখে শ্বেতা ভ্রুু কুঁচকে বললোঃ 

-তোমার মামার শরীরে তো পুষ্টির অভাব আছে। দ্যাখো না, কেমন ছিপছিপে? ইয়া লম্বা...

-শুন শ্বেতা, এই মামাকে কিছুদিন পর তুমি দেখলে চিনতে পারবে না...দেখবে ইয়া মোটা সোটা হয়ে গেছে...

-কেন? সে কি প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি খাবে? কিংবা ব্যালেন্স ডায়োট করবে?

শ্বেতার কথা শুনে আমার এমন হাসি আসলো যে, নিজেকে সামলাতে কষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশের পুলিশ যে কি পরিমাণ কষ্ট করে, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কষ্টকর। তাছাড়া সারাদিনমান যে কনেস্টবল কিংবা ট্রাফিক পুলিশ এই রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে  তার কার্য পরিচালনা করে, সেটা সত্যিই কষ্টসাধ্য। আমি যখন মনে মনে একথা চিন্তা করছিলাম, তখন দেখলাম, সেই পুলিশ সার্জেন্ট জ্যামটা মুহুর্তের মধ্যেই ক্লিয়ার করে দিল। সত্যিই বেশ করিৎকর্মা লোক....

আমি বাইকটি চালিয়ে মোল্লা টাওয়ারকে পাশ কাটিয়ে হাতির ঝিলে প্রবেশ করলাম। যে সময়টাতে হাতির ঝিলের দিকে প্রবেশ করি, সে সময় হাল্কা ইলশে গুড়ি টাইপের বৃষ্টি হচ্ছিল। আমরা দুজনেই এই বৃষ্টিটা বেশ উপভোগ করছিলাম। আর মাঝে মাঝে হাল্কা ব্রেক কষছিলাম যাতে শ্বেতা আমার পিঠের উপর ঝাপটে পড়ে। উদ্দেশ্য হলো ওর নরোম তুলতুলে দেহটার উত্তাপ নেওয়া। আমার এই দুষ্ট বুদ্ধিটা শ্বেতা বুঝতে পারছে কি-না জানি না, তবে ব্রেক কষার সাথে সাথে সত্যিই শ্বেতা দেহটা এলিয়ে দিতো। মাঝে মাঝে শ্বেতাকে দেখছি সে ইচ্ছে করেই হোক আর অনিচ্ছাই হোক, আমাকে জড়িয়ে ধরছে...আমি সেটা বেশ উপভোগ করছি।

বাইকটা টান দিয়ে সোজা চালিয়ে যাচ্ছি। শ্বেতা জানতে চাইলোঃ আমরা  কোথায় যাচ্ছি? আমি বললামঃ কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা...আজ যে দিকে মন চায়, সেদিকেই যাবো। শ্বেতা বললোঃ

-এ্যাই আমার ক্ষিদে পেয়েছে...চল না কিছু খাই ?

-কি খাবে?

-যা ইচ্ছে তোমার...

আমি বাইকটা একটা জায়গায় দাঁড় করিয়ে শ্বেতাকে নিয়ে একটা বারে ঢুকলাম। জায়গাটা ইষ্টার্ণ হাউজিং সোসাইটির হাতির ঝিলের প্রবেশ মুখে। সেখানে বেশ কিছু ছোট খাটো বার আছে। একটা স্মাার্ট ছেলে এসে জিগ্যেস করলোঃ 

-স্যার কি খাবেন?

- কি কি আছে?

-স্যার গ্রিল, বার্গার, পিৎজা, হটডগ, সেন্ডউইচ....

আমি শ্বেতার দিকে তাকিয়ে বললামঃ

-কি খাবে?

-একটা পিৎজা নাও....

আমি সেই ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললামঃ 

-একটা পিৎজা আর...সাথে কোক দাও

ছেলেটি কিছুক্ষণ পর পিৎজা এবং কোক দিল। পিৎজাটা দেখতে বেশ। গরম । খেতেও বেশ। বেশ আরাম করে শ্বেতা খাচ্ছে। আমি শ্বেতার দিকে তাকিয়ে দেখছি। শ্বেতা খেতে খেতে বললোঃ

-এ্যাই তুমি খাবে না....

-তোমার ক্ষিদে লেগেছে...তুমি খাও

-তাই? ঠিক আছে। তুমি হা করো। আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি...

-এই নাও হা করছি...হা..........হা...........হা

-আরে আমি তোমাকে ওভাবে হা করতে বলিনি...এই নাও...প্লিজ একটু খাও...

শ্বেতা একটুকরো পিৎজা হাতে নিয়ে আমাকে খাইয়ে দিল। আমি খেতে খেতে ভাবলাম, ইশ! শ্বেতা যদি আমাকে এভাবে রোজ খাইয়ে দিত। আমি পিৎজা চিবুতে চিবুতে শ্বেতার দিকে তাকালাম। পড়ন্ত বিকেলে শ্বেতার মুখটা বেশ উজ্জল দেখাচ্ছে। বারটির কাঁচের দেয়াল ভেদ করে একটুকরো রোদ্দুর এসে ভিতরে প্রবেশ করেছে। সেই রোদ্দুরটা পড়েছে শ্বেতার উপর। উজ্জল শ্যামলা গায়ের রং যেন আলো চকচক করছে। আমি কবি হলে বলতামঃ

তোমার প্রেমে পুড়ে আমার অন্তর হলো ছাই
ওগো প্রেমিকা, ওগো প্রিয়সী, বলো তুমি
এ জ্বালার ঔষধ কোথা পাই।।

তোমার দেহের বল্লরী যেন ধারালো কোন ছোড়া
ছুঁইলেই যেন মোর হৃদয় কেটে হবে ফালা ফালা।
শোন হে সুন্দরী, তনুমন,
প্রেম দিয়েছি, ভালোবেসেছি তোমায় আমি অণু ক্ষণ।।
কাটার ভয় আমি করি না করো, দেহ বল্লরীর
কেটে যেতে দাও হৃদয় মোর
সন্ঞ্চরী, আখেরির।।

-কি হলো? কি ভাবছো? চলো উঠা যাক।

শ্বেতার কথায় আমি ধাতস্থ হলাম। আমি ছেলেটাকে ডেকে বিল দিয়ে বেরিয়ে আসলাম। শ্বেতা আমার সামনেই আছে। তার হাত দুটো টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলাম। বাইকটা সেই বারটির পাশেই পার্ক করা। আমরা রাস্তাটা পার হয়ে পশ্চি ম দিকটায় নরোম ঘাসের উপর বসলাম। ঝকঝকে আকাশটা বেশ লাগছে। বৃষ্টিটা থেমে গেছে। কিন্তু দিয়ে গেছে একটা চমৎকার আকাশ। একফালি নরোম রোদ্দুর। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম পাঁচটা পনেরো বাজে। আছরের নামাজ শেষ করে মুছল্লীরা মসজিদ থেকে বের হচ্ছে। কেউ কেউ ডায়াবেটিস রোগীর মতো হাঁটার অভ্যাস করছে। আর ডায়বেটিস রোগীরা তাদের মতো করে লেফট-রাইট ভংগীতে হাঁটছে। আর আমাদের মতো আরো অনেক জুটি এখানে ওখানে বসে কথোপকথন করছে। কেউ কেউ খুনসুটি করছে। হাসতে হাসতে ইচ্ছে করেই শরীরের উপর পড়ছে। জানি অামি। সেটা কেবল সান্নিধ্যটাকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করার জন্য। একটা স্মৃতি চিন্হ এঁকে দেবার জন্য। 

মুরুব্বী গোছের একটা লোককে বলতে শুনলাম। সে বলছে - "আধুনিকতার নামে আজকাল ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বেল্লাপনা বেশ বেড়ে গেছে। আমরা যতটাই আধুনিক হচ্ছি ঠিক ততোটাই বেহায়া হয়ে যাচ্ছি। আমাদের লাজ-লজ্জা বেশ কমে গেছে।"

লোকটির কথা শুনে মনে হলোঃ সত্যিই আমরা বেহায়া হয়ে যাচ্ছি? আমাদের কি একটুও লজ্জা শরম নেই? এই যে, শ্বেতা নামের মেয়েটি আমার পাশে বসে আছে সেই সকাল থেকে, তারও কি লজ্জা শরম নেই? প্রেমের জায়গায় কি লজ্জা শরম থাকতে নেই? আরে বাবা, লজ্জা শরম থাকলে কি কেউ প্রেম করতে পারে? অামি শ্বেতার দিকে তাকিয়ে বললামঃ

-এ্যাই শ্বেতা, আচ্ছা সত্যি করে বলোতো, আমাদের কি লজ্জা শরম নেই?

-এটা কি ধরণের কথা হলো? আর হটাৎ ই বা তুমি এ কথা কেন বলছো?

-নাহ্ ...ঐ যে মুরব্বীকে দেখছো, সে বলছে আজকাল ছেলে-মেয়েদের মধ্যে না-কি বেল্লাপনা বেড়ে গেছে?

-বেল্লাপনা বেড়ে গেলে তার কি? তাকে কি আমরা কোন ক্ষতি করেছি...না-কি তাকে দেখিয়ে তোমাকে কিস দিয়েছি?

-ঠিক আছে। সে তো চলে গেছে। এখন না হয় কিস টাই দাও...

-কি বলছো তুমি?

-আরে বাবা, তুমিইতো বলছো? তাকে দেখিয়ে তুমি কিস দাও না..সে তো কাছেই নেই...প্লিজ দাও না...

-ধুর...তুমি কি সব পাগলের মতো কথা বলছো?

-প্লিজ...একটা...ওয়ান মোর

শ্বেতা আমাকে অবাক করে দিয়ে সত্যি সত্যিই একটা কিস দিল। আমি এমন একটা অনুভুতি পেলাম..আমার সারা শরীরে একটা শিহরণ খেলে গেল। আমার পঁচিশ বছরের জীবনে এমন একটা উপহার পাবো, তা স্বপ্নেও ভাবিনি...আমার পাশে বাইশে পা দেয়া একটা জ্বলজ্যান্ত ঊর্বশী বসে আছে। যার দেহে আগুন জ্বলছে। যার উত্তাপ এই পৃথিবীও পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া কথা। যার দেহের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে বিধাতা কি নিপুণ হাতে শিল্পীর তুলির আঁচড়ে এঁকে দিয়েছেন বিশেষ ধরণের আল্পনা। এ আল্পনার রেখা খুব কম প্রেমিকই দেখতে পায়। অথবা এমনও হতে পারে এ আল্পনার ভাঁজটি দেখার জন্যই প্রেম প্রেম খেলা। কিংবা মধুবনের মধু আহরণের জন্যই মধুকরের উপস্থিতি। সে যাই হোক, আমি বেশ উপভোগ করছি।

মাগরিব নামাযের আজান শোনা যাচ্ছে। মাইকে ভেসে আসছে....হাইয়্যা আলাস সালা
(চলবে)