পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০১৭

গ্যাস-বেলুনঃ মনা পাগলার অনুভব এবং অনুধাবণ-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর গুণ

মনা দেখছে ছোট ছোট বাচ্চারা গ্যাস বেলুন কিনছে। 
নানা রং বে-রং বেলুনগুলোতে গ্যাস ভরে দেয়ায় তা উপর দিকে উঠে যাচ্ছে। এবং তা বাতাসে অনায়েসে ভেসে বেড়াচ্ছে। হাল্কা বাতাস পেলেই সেই বেলুনগুলো দোল খাচ্ছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা সেই বেলুন দেখে আকৃষ্ট হচ্ছে। তারা যেভাবে পারছে, বাবা-মা, ভাই-বোন, যার কাছ থেকে পারছে টাকা এনে গ্যাসভর্তি বেলুন কিনছে। বেলুন কিনে সেই বেলুন ওড়াতে ওড়াতে মনের আনন্দে বাড়ী যাচ্ছে। আর যারা বেলুন কিনতে পারছে না, তারা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বেলুনগুলোর দিকে। মনাও তাদের দলের একজন। তার হাতে কোন টাকা পয়সা নেই। তাই সে এক কোণে বসে সেই বেলুনগুলোর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

সে দেখলোঃ 

বেলুনওয়ালা একটি খালি বেলুন নিয়ে প্রথমে টেনেটুনে দেখলো। তারপর পরখ করে নিল বেলুনটি ফুটো কি-না? সেটা দেখার পর গ্যাস চালিত একটি সিলিন্ডারের মুখে বেলুনটি পুরে দিল। তারপর সেই বেলুনটিতে গ্যাস ভরে দিল। এরপর সেটার মুখ শক্ত করে বেঁধে সুতো দিয়ে বেঁধে দিল। সেই সুঁতোর টানে বেলুনটি উপরে উঠে ভাসতে লাগলো।

সেটা দেখে কি মনে করে মনা পাইছি রে পাইছি বলে চিৎকার করে উঠলো। তারপর ধেই ধেই নাচতে লাগলো। তার সেই উদ্ভট নাচ দেখে মানুষজন জমে গেল। তারা জানতে চাইলো কি হয়েছে? কেন সে পাইছি পাইছি বলে চেঁচিয়ে উঠলো? সে কি এমন জানতে পেরেছে যে, যার জন্য পাইছি রে পাইছি বলে চিৎকার করতে হলো ? প্রশ্নটা করলেন সোহেল ভাই। 

প্রশ্নটা শুনে মনা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো এবং দার্শনিকের ভংগিতে বললোঃ 

-কমু ক্যান?

-না বললে তাহলে কেন চিৎকার চেঁচামেচি করলি? 

-করছি আমার মনের ইচ্চা হইছে তাই চিল্যাইছি

-দ্যাখ্ ভাই, জানি তুই কিছু একটা বুঝতে পেরেছিস। আমরা সেইটাই জানতে চাইছি...

-হুম। শোন্ তাহলে...

একথা বলে মনা তার ভাবের কথা প্রকাশ করতে লাগলোঃ
অামি দেখলাম, বেলুনওয়ালা বেলুনগুলো  নিয়ে পরখ করে ফুটো আছে কি-না সেটা পরীক্ষা করছে। তারপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর সেটাতে গ্যাস ভরে বাতাসে ভাসিয়ে দিল। অামি চিন্তা করলাম, আল্লাহ পাক ঐ বেলুনওয়ালার মতো আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন। তারপর যাকে তিনি বেছে নেন, সেটাতে তিনি ঐ বেলুনওয়ালার মতো রুহ ফুঁ দেন। রুহ ফুঁকে দেয়ার ফলে সে ঐ বেলুনের মতোই শুন্যে ভাসবে। কিভাবে?
অাল্লাহ পাক আমাদের সেই মন্ত্রটা শিখিয়ে দিয়েছেন। সেই মন্ত্রটা হলোঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাাদুর রাসুল্লাহ (সাঃ)। 

লা মানে মহা শুন্যতা। শেরেক শুন্য অবস্থা।
ইলাহা অর্থ উপাস্য । ইলাহ দুই প্রকার। ১, নারী ইলাহ এবং ২. পুরুষ ইলাহ। এই ইলাহ হলোঃ পুরুষ ইলাহ। পুরুষ ইলাহা মোহশুন্য মোহ-মুক্ত মন। ইল্লাল্লাহ -ইল্লাহ অর্থ ব্যতীত + আল্লাহ।
আল্লাহ = আল+ইলাহ। আল অর্থ প্রতিষ্ঠিত। ইলাহ অর্থ উপাস্য । আল্লাহ = প্রতিষ্ঠিত উপাস্য। এখানে উপাস্য হচ্ছেন সেইব্যক্তি, যিনি যার মনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছেন। মনের কেন্দ্র বিন্দুটিই আল্লাহ। নারী ইলাহ কখনোই মোহ থেকে মুক্ত হতে পারে না। কারণ, এই ইলাহ লা-সালাতিদের ইলাহ। সালাত প্রকৃয়ায় বসে উদয়-বিলয় ঘটিয়ে মনশুন্য তথা মোহ মুক্ত করে ফেলেন। তথা যাকাত দিয়ে ফেলেছেন। বিলিয়ে দিয়েছেন। খালি করে ফেলেছেন। তাই মন মহা শুন্যবস্থা বিরাজ করে।
মুহাম্মাাদুর রাসুল্লাহ (সাঃ) মুহাম্মাাদ আল্লাহর রাসুল। এখানে ব্যক্তি মুহাম্মাাদের কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু কোরআন মতে, ব্যক্তি মুহাম্মাদ নুরে মুহম্মদী হতে পৃথক কোন সত্ত্বা নয়। নুরে মুহম্মদী হচ্ছেনঃ Divine character and qualities attained in the person of a Muhammad is Noore Muhammadi. অর্থাৎ যে কোন একজন মোহাম্মাাদ দ্বারা অর্জিত স্বর্গীয় চরিত্র এবং গুণাবলীকেই "নুরে মুহাম্মাাদী" বলে।

আউয়ালে মোহাম্মাাদ, আখেরে মোহাম্মাাদ, জাহেরে মুহাম্মাাদ, বাতেনে মোহাম্মাাদ। সর্বযুগেই মোহাম্মাাদ সশরীরে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ অাউয়ালুনা মোহাম্মাাদ, আখেরুনা মোহাম্মাাদ, আওসাতুনা মোহাম্মাাদ, কুল্লানা মোহাম্মাাদ।" অর্থাৎ আমাদের আদি মোহাম্মাাদ, আমাদের শেষ মোহাম্মাাদ, অামাদের মধ্য হইল মোহাম্মাাদ আমাদের সবাই মোহাম্মাাদ। আল্লাহর অাপন চরিত্রই সৃষ্টির মধ্যে মহা গুরুর অভিব্যক্তিরুপে যুগে যুগে সে সকল বিকাশ হইয়া থাকে তাহাই নুরে মোহাম্মদী। পরম গুণাবলীর অপ্রকাশিত রুপ হইলেন নিরাকার আল্লাহ এবং প্রকাশিত অবস্থায় উহা হইলেন জাহের আল্লাহ।

নুরে মোহাম্ম দীর বিকাশ লাভের জন্যই সমগ্র সৃষ্টির প্রয়োজন হইয়াছে অথচ নুরে মোহাম্ম দী শব্দটিও কোরআনে কোথাও একত্রে নাই। একই রুপে দেখা যায় 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মোহাম্মাাদুর রাসুলাল্লাহ' কথাটি কোরআনে একত্রে উল্লেখিত নাই অথচ ইহা সকল ধর্মের এবং কোরআনের মুলমন্ত্র। এই মুলমন্ত্র অন্তরে ধারণ করলেই গ্যাস বেলুনের মতো উড়বি। বুঝতে পারলি কিছু?

-নাহ্ । কি সব ছাই পাশ বললেন.....কিচ্ছুই বুঝি নাই
সোহেল ভাইয়ের কথা শুনে মনা পাগলা হো হো হেসে উঠলো।
বুঝাইলে বুঝতে পারি নতুবা বুঝিবে কই?

--------
মুলভাবঃ
--------
সাধারণ মানুষের মধ্যে পরম প্রভুর ভাবের অভাব হওয়ায় তারাই মুলতঃ অভাবী বলে গণ্য হয় ভাব দর্শনে। যার মধ্যে ভাবের অভাব নেই, তারাই ভাবের মানুষ। এই ভাবের মানুষের মধ্যে প্রভু প্রেম উৎপন্ন হয়ে থাকে তার আপন মুর্শিদের মাধ্যমে। সেই প্রেমের কারণেই তাদের মনে বিরাজ করে এক স্বর্গীয় সুখ। সেই সুখের কারণেই তারা জগতের কোন বস্তুবাদের মুখোপেক্ষী হয় না। নিরাসক্ত মনেই তারা ভাবের উদয়-বিলয়ে সর্বদাই খেলা খেলে থাকেন প্রভুর সাথে। তাই উদয়-বিলয়ে তারা দেখতে পান সৃষ্টির দর্শন। স্র্রষ্টা তাদের অন্তঃকরণেরই মালিক হয়েই তাদের জানান দেন সেই গোপন তথ্য যা মারিফত নামে কথিত হয়। এই গোপন তত্ত্ব কেবল তারাই অনুভব করতে পারেন যার রয়েছে একটি সুন্দর অন্তঃকরণ। তাই একটি সুন্দর অন্তঃকরণ তৈরীর কথা কোরআন পাকে বলা হয়েছেঃ কাদ আফলাহা মান যাক্কা—হা--। ওয়াকাদ খা— বা মান দাসসা—হা--। যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়। সূরা আশ শামস।

এখানে বেলুনওয়ালা বলতে একজন কামেল মুর্শিদকে বোঝানো হয়েছে। যিনি তার ভক্তগণকে পরীক্ষা করে তার ভেতর ইশকে এলাহীর দিদার তৈরী করে দেন। যা বেলুনওয়ালার গ্যাস ভরার দ্বারা বোঝানো হয়েছে। রং-বেরংয়ের বেলুন বলতে দেহগত অবস্থা বুঝানো হয়েছে। আর বেলুন উড়ানোর অর্থ হলোঃ মুক্তির দেশে চলে যাওয়া...যা মুর্শিদের হাত ধরেই হতে হয়। এছাড়া অন্য কোন পদ্বতি নেই। তথা উপায় নেই। পুর্ব জামানার বুজুর্গানে দ্বীণগণ অবশ্যই কোরআন এবং রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর দেখানো পথেই হেঁটেছেন। তাই তাদেরকে অনুসরণ করা আহলে সুলুকের জন্য অবশ্য কর্তব্য। যারা এর থেকে বিরত থেকেছেন, কেবল তাদের মুখেই বুজুর্গাণে দ্বীনদেরকে নিন্দাবাক্য প্রয়োগ করতে দেখা যায়। তারাই বলেঃ পীর ধরা দরকার নেই।
প্রশ্ন হলোঃ ভারত বর্ষের মহান অলী আল্লাহ সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীব নেওয়াজ (রহঃ) কেন হযরত খাজা উসমান হারুণী (রহঃ) এর হাতে বায়াত হলেন? জগত শ্রেষ্ঠ মাওলানা রুমী (রহঃ) কেন হযরত খাজা শামস্ তাব্রীজ (রহঃ) এর হাতে বায়াত হলেন? তাদের থেকে বতর্মান জামানায় যে সমস্ত মাওলানা(!) - মৌলভীরা(?) আছেন, তারা বিখ্যাত হয়েছে গেছেন, না তারা জ্ঞানে গুণে তাদের থেকে বড়ো হয়ে গেছেন.....এই সমস্ত খান্নাস ওয়ালা ইবলিশের চামচাদের থেকে যত দুরে থাকা যায়...ততই নিরাপদে অবস্থান করবেন। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ। যাযাক আল্লাহু খাইরান....

গ্রন্থ সহায়িকাঃ  কোরঅান দর্শন-সুফী সদরউদ্দিন আহমেদ চিশতী (রহঃ)।