পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০১৭

মিশন ইমপসিবল-আদমের সাথে ইবলিশের দ্বন্দ্ব সংঘাত-তৃতীয় পর্ব



(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

ইবলিশ বললোঃ 

আমি যদি প্রথম বৃত্তে প্রবেশ করি, আমাকে দ্বিতীয়টির পরীক্ষার অধীন হতে হবে। এবং অামি যদি দ্বিতীয়টিতে যাই, আমাকে তবে তৃতীয়টির পরীক্ষার অধীন হতে হবে। এবং আমি যদি তৃতীয়টিতে উপনীত হই, তবে আমাকে চতুর্থটির পরীক্ষার অধীন হতে হবে।
সুতরাং না না না না এবং না! এমনকি আমি যদি আমার প্রথমে না এ থাকি, আমি অভিশপ্ত হতাম। দ্বিতীয়টি উচ্চারণে আগে এবং পরিত্যাক্ত হতাম। তৃতীয়টি উচ্চারিত হওয়া অবধি, তাই আমার চতুর্থটি আর কি অর্থ বহন করে? আমি যদি জানতাম সেজদা করলে আমি রক্ষা পাব, তাহলে আমি সেজদাই করতাম। কিন্তু অামি জেনেছি ঐ বৃত্তের পরে অাছে অন্য বৃত্তগুলো। আমি আন্দাজের উপর বলেছি, যদি আমি এই বৃত্ত থেকে নিরাপদে বেরিয়ে আমি, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থটি থেকে আমি কীভাবে বেরিয়ে আসবো? তাই পঞ্চম লা এর আলিফ-ই-তিনি জীবন্ত প্রভু।"

এখানে মাধ্যম ছাড়া যাকে পাওয়া বা হাসিল করা একেবারেই অসম্ভব। সরাসরি যারা আল্লাহকে পেতে চায়, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম এবং তার অনুগত প্রেমিক মুর্শিদ, পীর, ফকির, দরবেশ ও তরীকতের সুফীবাদের দাখিল হওয়া ব্যতীত। ইবলিসের মিশনই হল তাদের মিশন। ইবলিশ তাদের পেয়ে খুবই আনন্দিত।

ইবলিশ ভেবেছে, সে যদি আল্লাহর আদেশ মান্য করে আদমকে সেজদা করে, তাহলে ও তাকে স্বর্গীয় ইচ্ছার প্রজ্ঞা, ক্ষমতা ও জ্ঞানের পরীক্ষার অধীনে আসতে হত। কিন্তু আদমকে সেজদা না করে, তাকে পতিত হতে হয়েছে। কাজেই একই সংগে তাওহীদ যদি সত্য হয় তবে আদম অবশ্যই পরমের সাক্ষ্য দেয় - তার মধ্যেই জীবন্ত প্রভু।

তাই সুরায় আন নমলের বর্ণ প্রতীক তা-সিনের একত্বের ঘোষণার ভেতর দিয়ে মুনসুর হাল্লাজ তাওহীদের একটি যৌক্তিক সংজ্ঞার উপনীত হয়েছেন। বলেছেন, তাওহীদ সৃষ্ট আত্মসত্ত্বার এক প্রকার বিশ্লেষণ এবং তা সৃষ্ট আত্মসত্ত্বার এমন এক সর্ম্পকে যা বিষয়কে বিষয়ীর সংগে যুক্ত করেছে। আদম থেকে ইবলিশ উত্তম এই অহংকার বোধ যখন ইবলিসের মনে প্রাণে জেগে উঠলো তখনই তার আচরণের পরিবর্তন দেখা গেল। সে পরমের আদেশ অমান্য করলো। কিন্তু মুনসুর হাল্লাজ একক সত্ত্বায় বিলীন (ফানা) হয়ে তারই একত্ত্বেও ঘোষণা করলেন মানবীয় সত্ত্বাকে বিসর্জন দিয়েঃ

"তোমার আত্মা মিশে আছে আমার আত্মায়
মদ যেমন মিশে থাকে জলে;
যা কিছুই তুমি ম্পর্শ করো
আসলে ম্পর্শ করো আমাকে
আত্মার প্রতিটি ধাপে তুমিই আমি।"
হায়! এ কী আমি না তুমি? এ যে দুই খোদা!
সাবধান! সাবধান!! দুই বিশ্বাসের স্বীকৃতি হতে সাবধান
তোমার থাকা প্রকাশ হয়, আমার না থাকা'য়
আমার সমগ্র সমস্ত সমগ্র আমার সমস্ত জটিলতা।

হৃদয়ের দৃষ্টি মেলে দেখেছি প্রভুকে আমার
প্রশ্ন করি 'কে তুমি' সে বলে 'তুমি'
আনা মান আহওয়া ওয়া মান আহওয়া আনা
আমি যারে চাই আমি হয়ে গেছি সে
যাকে আমি চাই সে হয়ে গেছে আমি।


ফলে অামি ও আমার প্রেমাষ্পদ কস্তুরি আর কস্তুরি মৃগের মত অভিন্ন হয়ে গেছি। তাই আমরা এক সুতায় গাথা। মুনসুর হাল্লাজ যখন খোদার সংগে চুড়ান্ত বন্ধুত্বে পৌছালেন, তখন তিনি নিজেই নিজের শত্রু হয়ে খোদার প্রেমে প্রাণ উৎসর্গ করলেন। তিনি বলেছিলেনঃ 'আমি খোদা' মানে আমি আর নেই।  খোদাই শুধু আছে এখন। অতএব, যে বলেছিল, 'অামি খোদা' সে খোদা ছাড়া আর কেউ নয়, যেহেতু মুনসুর আগে থেকেই নেই হয়ে গেছে।
মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী বলেনঃ

গুফ তায়েউ গুফতায়ে আল্লাহ বুয়াদ
গারচে আজ হালকু মে আবদুল্লাহ বুয়াদ।।
অর্থঃ আল্লাহর কথা আল্লাহই বলেছেন অথচ উহা আল্লাহর দাসের মুখেই শুনা যায়।
(চলবে)