পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০১৭

মিশন ইমপসিবলঃ ইবলিশের সাথে আদমের দ্বন্দ্ব সংঘাত

বিসমিলল্লাহির রাহমানির রাহিম।
নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লী আলা রাসুলিহিল কারিম।

অাল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন যখন দুনিয়ার মিশন শুরু করলেন তখন দুইটি মিশন দিয়ে তিনি শুরু করলেন। তার একটি হল ইবলিশ মিশন এবং অপরটি হলো নুরে মুহাম্মদী মিশন। এই দুটি মিশন কিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে। অার এই দুই মিশনের ফলে মানুষ ও জিনের মধ্যে মতভেদের সৃষ্টি হয়েছে। আযাযিলের পতনের পুর্বে তার অবস্থান দিয়ে মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছেন তার আসল রুপ। অপরদিকে, নুরে মুহাম্মদী বিকশিত হওয়ার সময় আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন দেখিয়েছেন তার বন্ধুর আসল রুপ।

প্রেমতত্ত্ব ও আধ্যাত্মিক সাধনার জগতে মনসুর কিংবদন্তীর নায়ক। তার নাম জানে না এমন মুসলমান খুবই বিরল। তার পুর্ণ নাম হলোঃ আল মুগিছ আল হুসাইন ইবনে মনসুর হাল্লাজ ইবনে মোহাম্মদ আল বায়জাবী। তবে তিনি মুনসুর হাল্লাজ নামে পরিচিতি লাভ করেন। তার আনাল হক বা আমিই মহাসত্য বা আমিই খোদা এই তত্ত্ব সারা বিশ্বের মরমী সাধকদের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। তিনি শরিয়ত ও মারিফতের নিগুঢ় রহস্য সর্ম্পকে জ্ঞান অর্জন করে নিজেকে সমৃদ্ধ করেন।

এই সময় তিনি তার মতবাদ 'সর্বেশ্বরবাদ' প্রচার করতে শুরু করেন এবং প্রচারের জন্য বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেন। এমন কি পুর্বাঞ্চলের দিকে তিনি অর্থাৎ ভারত বর্ষে ও আগমন করেন। ভারতবর্ষে তিনি বহু কিতাব লিখে মানুষকে দান করেন। অতঃপর তিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'কিতাব আল তাওয়াসিন' সমাপ্ত করেন। তাতে তিনি সর্বেশ্বরবাদ ব্যাখ্যা করেন। এই কিতাবে তিনি মানুষের উপর আল্লাহর গুণাবলীর নীতি প্রবর্তন করেন এবং ঐশী প্রেমের উম্মাদ আনাল হক এর তত্ত্ব প্রকাশ করেন। নিম্নে তার কিতাব আল তাওয়াসিন থেকে বর্ণনা করা হলোঃ

সুফী আবু উমর আল হুসাইন ইবনে মুনসুর হাল্লাজ বলেছেনঃ "ইবলিশ এবং মোহাম্মদের মিশন ছাড়া আর কোন মিশন প্রতিষ্ঠিত নাই, ইবলিশ শুধু পরম সারসত্ত্বার থেকে পতিত হয়েছিল। যখন মোহাম্মদ সারসত্ত্বার সারসত্ত্বাকে উপলব্দি করেছিলেন তখন ইবলিশকে বলা হয়েছিলঃ 

'সিজদা করো। এবং মোহাম্মদকে দেখ! 

কিন্তু ইবলিশ নিজেকে নত করেননি এবং মুহাম্মদকে দেখেননি, তিনি ডানে ও তাকাননি কিংবা বামেও তাকাননি। তার দৃষ্টি একপাশে সরে যায়নি। ধাবিত হয়নি বিশেষ পথে। ইবলিসের ক্ষেত্রে তার মিশন ঘোষিত হওয়ার পর, সে তার আধি ক্ষমতার উৎস থেকে আর ফিরে যায়নি এবং যখন মোহাম্মদের মিশন ঘোষনা করা হলো তিনি তার ক্ষমতার দিকে ফিরে গেলেন।"

আল্লাহ তাকে বললেনঃ 

"সিজদা করো।" 

সে বললোঃ "তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে নয়।" এমন কি তোমার অভিশাপ আমার উপর বর্ষিত হলেও না।
অভিশাপ আমাকে কোন শাস্তি দিতে পারবে না।"

সে নিপতিত হল করুণাময়ের অভিশপ্ত সমুদ্রে, সে অন্ধ হলো এবং বললোঃ 

তুমি অন্ধ হলে এবং বললে, তুমি ছাড়া আমার জন্য আর কোন পথ নেই। আমি একজন নিরহংকার প্রেমিক।"

তিনি (আল্লাহ) তাকে বলেনঃ 

তুমি অহংকারী হয়েছো। 

সে বললোঃ যদি আমি এক পলকের জন্য তোমাকে দেখতাম আমার গর্বিত ও উদ্ধর্ত হবার জন্য সেটা হতো যথেষ্ট। কিন্তু আমিতো সেইজন যে, তোমাকে জানে অনন্ত সময়ের আগে, "আমি তার থেকে উত্তম। কেননা, আমি অধিকতর সময়ের জন্য ইবাদত করেছি তোমার।

সিনাই পর্বতে ঢালে মুসার সাথে দেখা হল ইবলিশের সাথে। এবং তিনি তাকে বললেন, 'হে ইবলিস, সিজদা করতে কে তোমাকে বাধা দিলো?

সে বললোঃ "আমাকে  যা বাধা দিয়েছে তা হল আমার প্রেমাষ্পদের একত্বের ঘোষণা। আর আমি যদি সেজদা করতাম, আমি হতাম তোমার মত। কেননা, তোমাকেই কেবল একদা ডেকে আনা হয়েছিল, " পাহাড়ের দিকে দৃষ্টি দিতে' এবং তুমি তাকিয়ে ছিলে। আর আমার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, ডাকা হয়েছে আমাকে হাজার বার আদমকে সেজদা করতে কিন্তু আমি আমাকে আনতে পারিনি। কেননা, আমি আমার ঘোষণার অভিপ্রায়টির পক্ষেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। 

সাইয়্যেদেনা মুসা বললেনঃ " তুমি আদেশ অমান্য করেছ।"

ইবলিশ বললোঃ ওটা ছিল একটা পরীক্ষা। কোন আদেশ নয়।

সাইয়্যেদেনা মুসা বলেন, 'পাপ কি নয় সেটা? তোমার চেহারায় তো বিকৃতি দেখা গিয়েছিল।

ইবলিশ বললোঃ আহা মুসা! এটা অভ্যাসের দ্ব্যর্থকতা। আধ্যাত্মিক অবস্থা এর উপর নির্ভর করে না। বদলায়ও না। গুপ্তজ্ঞান একইভাবে সত্য থাকে যেমনটা আদিতে ছিল, বিশেষের পরিবর্তনে তা বদলায় না।"


এই পর্যন্ত পড়ে করিম সাহেবের মাথা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরতে লাগলো। তিনি কিতাব 'আল তাওয়াসিন' নামক বইটি একপাশে রেখে চোখ মুদে রইলেন। আর নিজেকে কল্পনার রাজ্যে সাজালেন ইবলিশের স্থানে।
(চলবে)