পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১১ জুন, ২০১৭

মিশন ইমপসিবল-আদমের সাথে ইবলিশের দ্বন্দ্ব সংঘাত-দ্বিতীয় পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

করিম সাহেব কিছুটা বেসামাল হয়ে পড়লেন। তিনি চিন্তা করে পেলেন না - যে ইবলিশ  প্রথম অবস্থায় আজাজিল ফেরেস্তারুপে ফেরেস্তাদের সর্দার ছিল , সে কেমন করে একটি হুকুম না মেনে থাকতে পারে? কি এমন আদেশ ছিল, যা তার কাছে মানা অসাধ্য ছিল? মুলতঃ সত্যিই কি তার কাছে সেই আদেশটি না-মানার মতো ছিল? যদি তা-ই হতো, তাহলে যিনি আজাজিলকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি অন্তর্যামী নন-তিনি কি জানতেন না ইবলিশ সেটা মানতে পারবে না? না-কি তিনি জেনে শুনেই সেই আদেশটি দিলেন, যা ইবলিশের কাছে মানা দুঃসাধ্য ছিল?

তিনি মাথা চুলকাতে চুলকাতে আবার সেই বইটি হাতে নিলেন। এবং যেখানে তিনি পড়া শেষ করেছিলেন, সেখান হতে আবার পড়া শুরু করলেনঃ









সাইয়্যেদেনা মুসা বললেনঃ

- "তাকে (আল্লাহ পাক) কি মনে করতে পারো এখন?

-ওহে মুসা, শুদ্ধ মনের দরকার নেই কোন স্মৃতির। তার দ্বারা আমি ম্বরিত হই এবং তিনিও স্বরিত হন। তার স্বরণই আমার স্বরণ এবং আমার স্বরণই হল তার স্বরণ। কিভাবে আমাদেরকে পরস্পরকে স্বরণ করার ভেতর দিয়ে আমরা পৃথক হতে পারি? আমার উপাসনা এখন আরো বেশি আনন্দপুর্ণ। আমার স্বরণ আরো বেশি মহিমান্বিত। কেননা, আমি তাকে তার পরমত্বে ইবাদত করেছি আমার সৌভাগ্যের জন্য। এখন আমি তার ইবাদত করি তার (পরম) নিজের জন্য।"
যদি তিনি (পরম) আমাকে তার পরম আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেন নিখিলের আর কাউকেই আমি সেজদা করবো না এবং কোন ব্যক্তি বা কারো সামনে খাটো করবো না, আমার মর্যাদা। কেননা, আমি পরমের কোন প্রতিপক্ষ দাড় করাই না। আমার ঘোষণা অকৃত্রিম এবং আমি প্রেমিকদেরই একজন।

আল হাল্লাজ বলেনঃ আযাযিলের (ইবলিশের পতনের পৃর্ব নাম ) আধ্যাত্মিক অবস্থা নিয়ে নানা তত্ত্ব আছে। একটি তত্ত্ব বলে, বেহেশতে তার একটি মিশন ছিল এবং দুনিয়াতে আরেকটি মিশন। বেহেশতে সে সৎকাজ দেখিয়ে ফেরেস্তাদেরকে শিখিয়েছে এবং পৃথিবীতে মানুষ এবং জিনদের কাছে মন্দ কাজের মাধ্যমে তার মিশন প্রচার করেছে।

যখন ইবলিশ বলেছে, "আমি তার থেকে উত্তম, তখন সে নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দেখতে পায়নি।" যখন ফারাও বলেছে, আমি জানি না যে আমার থেকে পৃথক স্বর্গীয়ত্ব তোমার আছে। সে তখন উপলব্দি করেননি, যে তার লোকদের মধ্যে আর কেউ সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে প্রভেদ করতে পারে। এবং আমি বললামঃ যদি তুমি তাকে (পরম) না জানো, তবে তার চিন্হ (তাজাল্লি) এবং আমিই সত্য। কেননা, আমাতে সত্যের উপলব্দি থেমে নেই।

তিনি তাকে বললেনঃ তুমি সেজদা করো নাই, হে ঘৃণ্যজন!
সে বললোঃ তারচেয়ে বলো প্রেমিক। কেননা প্রেমিক জনই হয় ঘৃণিতজন। তুমি তাই আমাকে বল ঘৃণ্য। হে সর্ব ক্ষমতাধর এবং অবিচল, অবতীর্ণ কিতাবে আমি পড়েছি যে আমার উপর এমনটাই ঘটবে। তাই কি করে আমি আদমকে সেজদা করি যখন তুমি তাকে বানিয়েছো মাটি থেকে আর আমাকে আগুন থেকে? এই দুই বিপরীতে খাপ খায় কি করে? তারচেয়ে বেশি সময় ধরে ইবাদত করেছি আর আমার আছে উচ্চতর সদগুণ ও বিস্তারিত জ্ঞান এবং আরো শুদ্ধ তৎপরতা।

আল্লাহ তিনি প্রশংসিত হোন, তাকে বললেনঃ 
-মনোনয়ন করা আমার কাজ। তোমার কাজ নয়।

সে বললোঃ 
- সব রকম পছন্দ এবং আমার পছন্দটাও তোমারই। কেননা, আমার কি ঘটবে তা তুমি ইতিমধ্যে ঠিক করে রেখেছো, হে স্র্রষ্টা। তাকে সেজদা করা থেকে যদি তুমি আমাকে বিরত করে থাকো, বিরত রাথার তুমিই তার কারণ। যদি আমি ভুল বলে থাকি, তুমি আমাকে পরিত্যাগ করতে পারো না। কেননা, তুমি শুনতে পাও সব। যদি তোমার ইচ্ছা থাকতো যে আমি তাকে সেজদা করি, আমি বাধ্য হতে পারতাম। জ্ঞানীদের এমন কাউকেই তো অামি জানি না যে, আমার চেয়ে তোমাকে বেশি জানে।"

 অন্য ফেরেস্তারা সেজদা করল সমর্থন দিতে এবং ইবলিশ অস্বীকার করল, কেননা ইতিমধ্যে সে অনেকটা কাল ধ্যানে অতিবাহিত করেছে। কিন্তু তার ঘটনা বিভ্রান্তিকর হয়ে পড়েছিল এবং তার চিন্তা বিপথে গিয়েছিল, তাই সে বললঃ "আমি তার থেকে উত্তম। " সে থাকলো অবগুন্ঠনে আবৃত এবং মুল্য দিল না ধুলাকে, তার নিজের জন্য অনন্ত সময়ের পরের, অনন্ত সময়ের জন্য বয়ে আনল নরক যন্ত্রণা।

নোটঃ ইবলিশ আদমকে সেজদা করে তার একত্বের ঘোষণার সংগে স্ববিরোধ সৃষ্টি করতে চায়নি। একদিকে আদেশ মান্য করা এবং অন্যদিকে একত্বের ঘোষণার প্রতি অবিচল থাক। এই দুই বিকল্প থেকে একটিকে নির্বাচনের সংকটে পড়েছে সে। ইবলিসের ভবিষ্যৎ আল্লাহ জানেন, ইবলিশের ইচ্ছা ও পরমের ইচ্ছার অধীন। তবু যে পতিত হয়েছে, তার প্রাককালীন শুদ্ধতা থেকে, আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন ইবলিশের বিষয়ে সবচেয়ে ভালো জানেন।

(চলবে)