পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০১৭

এ কেমন মুসলিম আমরা?

শুক্রবার দিন সাধারণতঃ জহির সাহেবের তেমন কোন কাজ থাকে না। থাকলেও তিনি তেমন কোন কাজে আগ্রহ দেখান না। তিনি ভাবেনঃ সপ্তাহের বাকী দিনগুলোতে তো কাজেই ব্যস্ত থাকি। তাই এই দিনটি তিনি রেষ্টে থাকবেন। ঘুমাবেন। বেলা করে উঠে গোসল করে জুম্মাার নামায পড়তে যাবেন। নামায শেষ হলে সোজা বাড়ীতে চলে আসবেন। খাওয়া দাওয়া করবেন। এরপর আরামসে বসে টিভি দেখবেন। নয়তো কোন বই অথবা পত্রিকা পড়বেন। বরাবর এটাই ছিল জহির সাহেবের রুটিন। তিনি এই নিয়মেই চলে আসছেন। কিন্তু কথায় বলে-সব দিন সমান যায় না। 

আজ তেমনি হলো। তার এক নিকট আত্মীয় হটাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে করাতে দেরী হয়ে গেল। এ দিকে জুম্মাার নামাযের সময়ও ঘনিয়ে এল। তিনি কোন রকমে রোগীকে হাসপাতালে রেখে দ্রুত মসজিদের দিকে ছুটলেন। আর যেতে যেতে যেতে তার আত্মীয়-স্বজনদেরকে রোগীর পাশে বসে থাকতে বলে দ্রুত চলে গেলেন।

জহির সাহেব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন একটা দশ বাজে। তার মানে এখনো বিশ মিনিটের মতো সময় আছে। তিনি আর দেরী করলেন না। দ্রুত কাছাকাছি কোন মসজিদের দিকে ছুটলেন। মসজিদটা কাছেই ছিল। হাসপাতালের সাথেই লাগোয়া মসজিদ। জহির সাহেব মসজিদের ভিতরের দিকে তাকিয়ে দেখলেনঃ 
মুসল্লিরা কেউ কেউ সুন্নাত নামায আদায় করছেন। কেউ বা বসে আছেন। কেউ বা হাঁটু মুড়ে বসেছে। কেউ বা ঝিঁমুনি দিয়ে পড়ে আবার সোজা হয়ে বসছেন। কিন্তু জহির সাহেব মসজিদের ভিতরে না ঢুকে আগে ওযুখানায় যেতে চাইলেন। কারণ তাকে আগে ওজু করতে হবে। তারও আগে তাকে হাম্মাামখানায় (প্রস্র্রাব-পায়খানার স্থান, গোসলের স্থান) যেতে হবে। তিনি আশে পাশে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করছেন - কোন কিছু নজরে পড়ে কি-না?
তিনি দেখলেনঃ 
মসজিদের বারান্দার পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা গিয়েছে, সেদিকটায় একটা সাইনবোর্ডে তীর চিন্হ দিয়ে লেখাঃ "অযু খানা এইদিকে।"

জহির সাহেব আর দেরি করলেন না। তিনি দ্রুত সেদিকটায় চলে গেলেন। তারপর দেখলেনঃ 
মসজিদটিতে ওযু করার চমৎকার ব্যবস্থা রয়েছে। আর পাশেই রয়েছে প্রস্র্রাবখানা। তিনি সেদিকটায় ঢুকে ভিমরি খাবারমতো অবস্থায় পড়ে গেলেন। দেখলেনঃ 
মুসল্লিরা যারা প্রসাব করেছেন, তাদের অনেকেই একহাতে পুংলিঙ্গটিকে চেপে ধরে নাচানাচি করছেন। একবার বাম পা কাত করে ডানদিকে নিচ্ছেন আরেকবার ডান পা কাত করে বাম দিকে নিচ্ছেন। তিনি একজনকে জিগ্যস করলেনঃ
ভাই সাহেব, এমনটা করার কারণ কি? ...এভাবে নাচছেন কেন?

-কি কন, ভাই? নাচি করতাছি কই? 

-এই যে প্রস্র্রাব করার পর উঠে দাঁড়াচ্ছেন তারপর এইভাবে নাচানাচি করছেন....

-আরে ভাই, এইভাবে না করলেতো প্রস্র্রাব ক্লিয়ার অয় না...তাছাড়া প্রস্র্রাব ক্লিয়ার না অইলে তো কিছু প্রস্র্রাবতো আটকাইয়া থাকে। এইভাবে করলে হেইটা ক্লিয়ার অইয়্যা টিস্যু পেপারে পইড়্যা যায়। তারপর ভালো কইর‌্যা মুইছ্যা হালাইলেই তো অইয়্যা গেল। হের পর ওযু করলেই অইলো।

-কিন্তু আমরা তো আগে দেখেছি প্রস্র্রাব করার পর ভালো করে পানি ঢাললে পানির সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে প্রস্র্রাবের আটকে থাকা অংশটি একটু চাপ দিলেই বেরিয়ে আসে। এরপর পানি ঢাললেই চলে। ক্ষেত্রবিশেষে টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে ফেললেই হলো। লাফালাফির তো প্রয়োজন পড়ে না....

-আরে ভাই, আগের দিন বাগে খায়। হেই দিনের কথা ভুইল্যা যান...এহন আধুনিক যুগ...

-তাই আধুনিক যুগে আপনারা এভাবে লিংগ ধরে লাফালাফি করবেন? আপনারা কি বুঝতে পারছেন, যারা আপনাদের এ বিদ্যা শেখাচ্ছে তারা ইসলামটাকে একটা বাজে বিষয় শিক্ষা দিচ্ছেন...তাছাড়া এটা দেখতেও দৃষ্টি কটু লাগে....এটাকে তারা একটা জঘন্য বিষয় শিক্ষা দিচ্ছেন...

-ভাই আপনার বক্তৃতা থামান। আপনার কথা আপনার কাছেই রাখেন...আপনে এই সবের কি বুঝেন?

জহির সাহেব অগ্যতা আর কি করবেন? তিনি চুপ করে গেলেন। ঐদিকে সানি আজানের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তিনি তার প্রয়োজনীয় কাজ সেরে দ্রুত ওযুখানায় গেলেন। ওযু করলেন। তারপর একটা জায়গা দেখে ফরয নামাযের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। আর মনে মনে ভাবলেনঃ
আমরা কি দিন দিন রাসুলের সুন্নাত ভুলে যাচ্ছি...দিনকে দিন মসজিদ পাকা হচ্ছে আর আমাদের ঈমান-আমান কাঁচা হচ্ছে...সেজদার স্থানে জুতো রাখা হয়েছে...নামাযের মধ্যে বলা হয়েছেঃ তুমি যখন নামায পড়তে দাঁড়াবে তখন খেয়াল করবে তুমি আল্লাহ পাককে দেখছো আর যদি তা না পারো, তাহলে মনে মনে খেয়াল করবে আল্লাহ পাক তোমাকে দেখছেন...যেস্থানে সেজদা দিয়েছো সেদিকটায় খেয়াল করবে....এখন সেদিকটায় খেয়াল করলে তো জুতো ছাড়া আর কিছু দেখতে পাওয়ার কথা না....তাহলে যে নামায পড়ছি তা-কি আল্লাহ পাকের দরবারে কবুল হবে...তার রেজা-মন্দি সন্তুষ্টি বিধান করা কি হচ্ছে....

তার চিন্তা-ধারায় ছেদ পড়লো যখন সবাই নামাযে কাতার বন্দী হবার জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। জহির সাহেবও দাঁড়ালেন....তারপর নামায শেষ করে হাসপাতালের পথ ধরলেন।