পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০১৭

মিশন ইমপসিবল-আদমের সাথে ইবলিশের দ্বন্দ্ব সংঘাত - চতুর্থ পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

করিম সাহেব লেখাটি পড়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি কি করবেন বা কি লিখবেন....এ নিয়ে তিনি সংশয়ে ভুগছেন। তিনি চিন্তা করে পেলেন না, কেন ও কি জন্যে ইবলিশ পতিত হলো? ইবলিশ তো খারাপ কিছু বলেনি...তাহলে তাকে কেন মহান স্র্রষ্টা কোন করুণা দেখালেন না? কেবল একটি সেজদা না করাই কি এর মুল কারণ? সেজদা তো কেবল আল্লাহ্ পাকের জন্যই। তাহলে এ কোন্ সেজদা? এবং সে সেজদার নাম কি? বিষয়টি তাকে ভাবিয়ে তুললো। তিনি পবিত্র কোরঅান শরীফের সুরা বাকারার ৩০ থেকে ৩৫ নং অায়াত কয়টি ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করলেন। এবং সাথে তফসীর গ্রন্থও রাখলেন। তারপর পড়া শুরু করলেনঃ

সুরা বাকারা আয়াত নং ৩০
--------------------------
ওয়া (এবং) ইজ (যখন) কালা (বলিলেন) রাব্বুকা (আপনার রব, পালনকর্তা) লিলমালাইকাতি (ফেরেস্তাদের জন্য) ইন্নি (নিশ্চয়ই আমি) জায়েলুন (নির্বাচন করিব) ফিল (মধ্যে) আরদি(পৃথিবীতে) খলিফাতান (প্রতিনিধি, খলিফা )। ক্কালু (তাহারা বলিল) আতাজআলু (তুমি কি নির্বাচন করিবে? ) ফিহা (ইহার মধ্যে ) ওয়া (এবং) ইয়াসফিকু (ঝরানো, প্রবাহিত করা) দিমাআ (রক্ত)
ওয়া (এবং) নাহনু (অামরা) নুসাববেহু (তাসবিহ করি) বিহামদিকা (তোমার প্রশংসা ) ওয়া (এবং) নুকাদদেসু (পবিত্রতা বর্ণনা করি) লাকা (তোমার) । কালা (বলিলন) ইন্নি (নিশ্চ য়ই আমি) আলামু (জানি) মা (যাহা) লা (না) তাঅালামুন (তোমরা জানো)। 

[ And (remember ) when your Lord said to the angels: "Verily, I am going to place (mandkind) generations after generations on earth." They said: "Will You place therein those who will make mischief therein and shed blood, --while we glorify You with praises and thanks and sanctify You." He praises and thanks and sanctify You." He (Allah) said: "I know that wich you do not know."  verse of Quran. Surah2. Al-Baqarah. Ayat No.30 ]

অর্থঃ এবং যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন, নিশ্চয়ইই আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করবো, তারা বললো আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যারা অশান্তি সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? আমরাইতো আপনার প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা করি। তিনি বললেন, আমি যা জানি, তোমরা তা জান না।

করিম সাহেব কাগজ কলম নিয়ে বসে পড়লেন এবং সুরা বাকারার ৩০ নং আয়াতের ব্যক্ষা এবং বিশ্লেষণ করা শুরু করে দিলেন। তিনি একটি শিরোনাম দিলেন এবং লিখলেনঃ

অাদম সৃষ্টির ব্যাপারে অাল্লাহ পাকের সাথে ফেরেস্তাদের কথোপকথনঃ
-----------------------------------------------------------------
এই আয়াতে দেখা যাচ্ছে যে, অাল্লাহ পাকের সাথে আদম সৃষ্টির ব্যাপারে কথোপকথন হচ্ছে। ফেরেস্তারা আল্লাহ পাকের কাছে জানতে চাচ্ছেন-কাকে তিনি প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করতে যাচ্ছেন? যারা দুনিয়াতে যেয়ে রক্তপাত করবে, মারামারি করবে, কাটাকাটি করবে? তারচেয়ে  তারাইতো ভালো আছেন। তারা মহান আল্লাহ পাকের পবিত্রতা ঘোষণা করছেন। সেটাইতো ভালো। কিন্তু আল্লাহ পাক তাদের প্রশ্নোত্তরে বললেন-অামি যা জানি, তোমরা তা জানো না। তার অর্থ হতে পারে - আদম সৃষ্টির ব্যাপারে আল্লাহপাকের বিশেষ কোন পরিকল্পনা ছিল। যে পরিকল্পনার ব্যাপারে ফেরেস্তারা ছিল সম্পুর্ণ অজ্ঞ। তাই তারা আদম সৃষ্টির ব্যাপারে ভেটো প্রদান করেছিল। আর এ আয়াতের বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছেঃ-

প্রথমতঃ সৃষ্টিজগতে মানুষের মর্যাদা এত উপরে যে মহান আল্লাহ মানুষের সৃষ্টি বা মানুষকে তার প্রতিনিধি বানাবার বিষয়টি ফেরেশতাদের কাছে উত্থাপন করেছেন।

দ্বিতীয়তঃ প্রতিনিধি নিয়োগের পুরো দায়িত্ব মহান আল্লাহর অন্য কারো নয়।

তৃতীয়তঃ কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বর্ণনার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম পন্থা হলো, প্রশ্ন উত্থাপন করা এবং পরে তার বর্ণনা দেয়া। মহান আল্লাহ মানব সৃষ্টি এবং মানুষকে তার প্রতিনিধি বানাবার ক্ষেত্রে এ পন্থা প্রয়োগ করেছেন এবং এ সম্পর্কে ফেরেশতাদের অজ্ঞতা দূর করেছেন।

চতুর্থতঃ শাসক বা ঐশী প্রতিনিধিকে ন্যায় বিচারক হতে হবে। ফাসেক বা কলুষিত ব্যক্তি এ মর্যাদার উপযুক্ত নয়। আর এ জন্যই ফেরেশতারা বলেছিলো, রক্তপাত ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী মানুষ কি করে পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি হতে পারে?

পঞ্চমতঃ নিজেকে অন্যদের সাথে তুলনা করার সময়, অপরের কেবল দোষ-ত্রুটি ও দুর্বল দিক, আর নিজের ভালো দিকটাই দেখা ঠিক নয়।

ষষ্ঠতঃ ইবাদত কেবল মর্যাদা বা শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি নয়। ফেরেশতারা আল্লাহর ইবাদত ও প্রশংসা জ্ঞাপনের ক্ষেত্রে মানুষের চেয়ে অগ্রগামী হওয়া সত্ত্বেও, পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি হতে পারেনি।

সপ্তমতঃ কিছু লোকের অনিষ্টতা ও বিভ্রান্তির কারণে, অন্যদের বিকাশ লাভের পথ রুদ্ধ করে দেয়া ঠিক নয়। মহান আল্লাহ এটা ভালো করেই জানতেন যে, এক শ্রেণীর মানুষ ভুল পথে চলবে, কিন্তু তারপরও তিনি মানুষকে তার প্রতিনিধিত্বের মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করেননি।

অষ্টমতঃ কোন কিছু সম্পর্কে জানার জন্য প্রশ্ন করতে দোষ নেই। ফেরেশতারা আল্লাহর কাজের প্রতিবাদ জানাবার জন্য প্রশ্ন করেননি বরং নিজেদের ধারণা আরো স্পষ্ট করার জন্যই প্রশ্ন করেছিলেন।

এ পর্যন্ত লিখে করিম সাহেব বেশ চমকিত হলেন। কারণ, তিনি বিষয়টিতে একটি আলোর দিক দেখতে পাচ্ছেন।  ফেরেস্তাদের চেয়েও মানব শ্রেষ্ঠ এবং মহান আল্লাহ পাক এ মানবের সৃষ্টির পরিকল্পনার একটি অংশ। এতে করে মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহু তা'য়ালার অসীম কৃপা এবং দয়া ছাড়াও আদম মহান স্র্রষ্টার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর একটি সুযোগ পেয়ে গেলেন। সে জন্যই হয়তো বলা হয়েছেঃ আদ্ দুনিয়া মাজরাতুল উখরা। অর্থাৎ দুনিয়া হচ্ছে আখেরাতের ক্ষেত্র স্বরুপ। দুনিয়াতে যা কিছু করা হবে, তার হিসাব তিনি অবশ্যই নিবেন। কারণ, প্রথম থেকেই ফেরেস্তাদের প্রকোপের মুখে পড়তে হয়েছিল আদমকে। তাই, অাদমের ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক যতোটাই কঠিন ঠিক ততোটাই সহজ। সহজ এই জন্য যে, তিনি জানেন, দুনিয়াতে যেয়ে অাদম হয়তো নানান গুনাহ খাতা করতে পারে এবং সেই গুনাহ-খাতা থেকে বেঁচে থাকার জন্য তার একটা দিক-নির্দেশনাও দিয়ে দিলেন এবং তাকে কিছু  বাক্য শিখিয়ে দিলেন। এবং তার রহমত হতে নিরাশ হওয়ার জন্য নিষেধ করে দিলেন।

করিম সাহেবের বুকটা ভরে গেল একটা অস্ফুট আনন্দে এবং মহান স্র্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতায় তার নয়ন অশ্রুু সিক্ত হলো। তিনি মনে মনে বললেনঃ হে মহান রব, তোমায় দয়া এবং করুণার কোন সীমা-পরিসীমা নেই। শেষ বিচারের দিন, তুমি আমাকে তোমার রহমত হতে নিরাশ করো না। আমি যেন তোমার রহমতের ছায়ায় থাকতে পারি.....

অতঃপর করিম সাহেব তার অশ্রু সংবরণ করে সুরা বাকারার ৩১ নং আয়াতের দিকে দৃষ্টি নিবন্ধন করলেনঃ
(চলবে)