পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৫

সোনার মানুষ- সপ্তম পর্ব


(পুর্ব প্রকাশের পর)
ো তোমাকে যে কথা বলছিলাম। সেটা হআমাদের প্রথমে জানতে হবে আল্লাহ এবং র্শ সর্ম্পকে। এদুটো বিষয় জানা হলে আমরা হাদিসটির মুলার্থ ধরতে পারবো। প্রথমে আসি আল্লাহ শব্দটি প্রসঙ্গে।  "আল্লাহ" শব্দটি আরবি "আল" (বাংলায় যার অর্থ সুনির্দিষ্ট বা একমাত্র) এবং "ইলাহ" (বাংলায় যার অর্থ সৃষ্টিকর্তা) শব্দদ্বয়ের সম্মিলিত রূপ, যার অর্থ দাঁড়ায় "একমাত্র আললাহ" বা "একক আললাহ"। একই শব্দমূল-বিশিষ্ট শব্দ অন্যান্য সেমিটিক ভাষাতেও পাওয়া যায়। 

উদাহরণ স্বরূপ, বলা যায়, হিব্রু এবং আরামাইক ভাষার কথা। প্রাচীন হিব্রু ভাষায় শব্দটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বহুবচন এলোহিম אֱלֹהִ֔ים (কিন্ত্তু অর্থের দিক দিয়ে একবচন) হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। আর আরামাইক ভাষায় শব্দটির রূপ এলাহা ܐܠܗܐ বা আলাহা ܐܲܠܵܗܵܐ। কিন্ত্তু এই শব্দটির অর্থ এই সব ভাষাতেই সমার্থক, "একক আললাহ"। শিখ ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহিবে এই "আল্লাহ" (ਅਲਹੁ) শব্দটি ৩৭বার চেয়ে বেশি বার ব্যবহৃত হয়েছে।[তথ্যসুত্রঃউইকিপিডিয়া]

ইসলাম-পূর্ব আরবেও আল্লাহ  নামের ব্যবহার খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্ত্তু তা করতো শুধুমাত্র সৃষ্টিকারী দেবতা (খুব সম্ভবতঃ সবচেয়ে শক্তিশালী জন) বুঝাতে। তবে আল্লাহ  সম্পর্কে ধারনা বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্ন। ইসলাম-পূর্ব আরবে পৌত্তলিক আরবরা আল্লাহকে একক মনে করতো না। বরং তার সাথে সঙ্গী-সাথী, এবং পুত্র-কন্যার ধারনা সংযুক্ত করেছিলো, যা ইসলামী যুগে সমূলে উৎপাটন করা হয়। ইসলামে আল্লাহ  শব্দটি দ্বারা এক, অদ্বিতীয় এবং অবিনশ্বর ঈশ্বরের দিকে ইঙ্গিত করা হয় এবং সমস্ত স্বর্গীয় গুনবাচক নামকে সেই একক স্বত্তার নাম বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়। ইসলামিক ভাষ্যনুযায়ী, আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়, সমস্ত-জগতের-সৃষ্টিকর্তা, সর্বত্র বিরাজমান, একক অধীশ্বর। এই কারণে বর্তমান-যুগের আরব-খ্রীস্টানেরা মুসলিমদের থেকে পার্থক্য সৃষ্টি করতে Allāh al-ʾAb (الله الأب, "God the Father" (অর্থাৎ, ঈশ্বর-পিতা) শব্দ ব্যবহার করে। এমনিভাবে কুরআনে বর্ণিত আল্লাহ শব্দার্থ এবং হিব্রু বাইবেলে বর্ণিত আল্লাহ শব্দের অর্থে মিল এবং অমিল দুটি আছে [সুত্রঃউইকিপিডিয়া]। এটি হলো আল্লাহ শব্দের বাহ্যিক রুপ। আর ইলমে বাতিন অর্থাৎ গুপ্ত অর্থে আল্লাহ শব্দটির অন্য আরেকটি রুপ পাওয়া যায়।

পবিত্র কোরআন মতে, আল্লাহঃ- (আর্দ ও সামা) সৃষ্টির ও মনের কেন্দ্রবিন্দুটি হইলেন আল্লাহ্‌। আল+ইলাহ=আল্লাহ। অর্থাৎ একমাত্র উপাস্য। ইলাহ্‌ অর্থ কর্তা, নেতা, অধিকারী, তাই উপাস্য। সৃষ্টিময় আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ্‌ নাই। মোহাম্মদ (আ.) ব্যতীত নিরাকার আল্লাহ্‌র পরিচয়ের কোন প্রকাশ নাই। সৃষ্টি পরিচালনার জন্য তাঁহারই উপর সকল নেতৃত্ব কর্তৃত্ব এবং অধিকার ন্যস্ত রহিয়াছে। সুতরাং তিনিই হইলেন আল ইলাহ্‌'র প্রকাশ্য অভিব্যক্তি। সকল মহাপুরুষ ঐ জাহেরী ইলাহ্‌'রই পরিচয় প্রকাশক। একমাত্র সেই ইলাহ্‌'র নির্দেশ ব্যতীত মনুষ্য জীবনের নির্ভরের অন্যান্য বস্তু ও ব্যক্তিগনকে মানুষ যেইরূপ কর্তৃত্বের আসনে বসাইয়া থাকে তাহা কাল্পনিক বা মিথ্যা ইলাহ্‌। যেহেতু এই ইলাহ্‌সমূহ নিজেরাই অস্থায়ী এবং আল ইলাহ্‌'র নিয়ন্ত্রণাধীন। কাজেই 'ইলাহ' নির্ভরের আসন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি বা বিষয়। ইহাকে আমরা উপাস্য বলিয়া থাকি। যাহার উপর নির্ভরের আসন নেওয়া হয় তাহাই উপাস্য। উপ+আসন=উপাসন। কাহারও উপরে নির্ভরের আসন গ্রহণ করিবার নাম তাহার উপাসনা করা। যেহেতু প্রকৃতপক্ষে একমাত্র আল্লাহ্‌র উপরেই আজীবন নির্ভরের আসন গ্রহণ করা উচিত নতুবা ক্ষতিগ্রস্থ হইতে হয়, সেইহেতু আজীবন যোগ্য উপাস্য আল্লাহ্‌ ব্যতীত কেহই নাই। আল্লাহ্‌ মনোজগতের সম্যক গুরুরূপে বিশ্বময় বিরাজিত। সুতরাং মনুষ্য-জগতে তিনি ছাড়া আজীবন উপাসনা যোগ্য আর কেহ নাই। বিশ্বজগত আল্লাহ্‌র বিকাশিত রূপ, সেইজন্য আল্লাহই সব এবং সবই আল্লাহ্‌র প্রকাশ অর্থাৎ এই বিশ্বজগত আল্লাহ-সত্ত্বাময়। আল্লাহ্‌ ব্যতীত দ্বিতীয় কোন সত্ত্বা নাই। আল্লাহ্‌ নিজেকে প্রলম্বিত করিয়াই এই জগত বানাইয়াছেন। এই দৃশ্যমান ও অদৃশ্য জগতের সব কিছুই তাঁহারই শরীর। তাঁহার বাইরে কিছুই নাই। এই জগত তাঁহার সৃষ্ট নয় বরং তাঁহার নিজের প্রলম্বিত শরীর। মহাবিশ্বে মহিমান্বিত আল্লাহ্‌ নিজেকে তাঁহার মর্যাদা অনুযায়ী তিনটি স্তরে পরিব্যপ্তি ঘটাইয়াছেন। যথা— ১. আহাদ আল্লাহ্‌, ২. সামাদ আল্লাহ্‌ এবং ৩. লা-শারিক বা নিরাকার আল্লাহ্‌। [সুত্রঃ কোরআন দর্শন-সুফী সদরউদ্দিন আহমদ চিশতী]
(চলবে)