মনা পাগলার সাথে কবে দেখা হয়েছিল সেই দিনক্ষণ মনে নেই। মনে আছে কেবল দেখা হবার স্মৃতিটুকু। সেই স্মৃতিটুকু হাতড়ে বেড়াবার কোন মানে হয় না। কিন্ত্তু মনের মাঝে খস খস করছে সেই স্মৃতিটুকু। বার বার ফিরে এসে কেবল মনের জানালায় উঁকি দিচ্ছে। তাইতো তার সাথে দেখা করার জন্য মনটা উতালা হয়ে আছে। সবাই তার প্রেমিকার সাথে দেখা করার জন্য পাগল থাকে। আর আমি উতালা হয়ে আছি একটি পাগলের সাথে দেখা করার জন্য। মনা যে আমাকে কি যাদু করেছে কে জানে?
আমি আর দেরি করলাম না। ঘর হতে বের হয়ে এলাম। কিন্ত্তু মনাকে কোথায় খুঁজবো? কোথায় পাওয়া যাবে তাকে? সে কোথায় থাকে তাতো জানি না। আমি হাঁটতে হাঁটতে হাইকোর্ট মাজারের দিকে গেলাম। মাজার হচ্ছে পাগলদের আস্তানা। বলা চলে সবধরণের পাগলদের সাক্ষাৎ পাওয়া যায় মাজারে। এখানে নানান জাতের মানুষ ঘুরে বেড়ায়। নানা ধান্দায় থাকে মানুষ সব। ভাল-মন্দ মিলিয়েই সেই মিলন মেলা হলো মাজার কেন্দ্রিক। যার মাজার সে কি জানে তাকে কেন্দ্র করে কতো জাত বেজাতের মানুষজন নানা ধান্দায় ঘুরে বেড়ায়? মনার কাছে শুনেছি মাজার তারই হয় যার ভেতর অন্তরের মানুষ থাকে। সেই অন্তরের মানুষকে যারা জাগাতে পারে তারা মরেও অমর হয় এই ধরাতে। তারা নরাধম মানুষদের মাঝেই স্বশরীরে বিরাজ করে। কিভাবে সম্ভব কে জানে? মনাকে বলতেই সে বললঃ
করিলে স্বরণ হবে না মরণ
যদি সে থাকে মরু সাহারায়।।*
মনাকে জিগ্যেস করেছিলাম এ ব্যাপারে। আপনি বলেছেনঃ
-"অলি আউলিয়ারা মরে না। তাঁরা জীবিত। এর কি কোন দলিল কোরআনে আছে?"
মনা হাসতে হাসতে জবাব দিল
-আছে মানে? পুরা কোরআনইতো সেই শিক্ষা দিবার জন্য নাজিল হয়েছে। মানবজাতি তা ভুলে বসে আছে। কোরআনের মুল শিক্ষা হলোঃ
"অসতো মা সদগয়মঃ
তমস্য মা জ্যোতিগয়মঃ
মৃতং মা অমৃত গয়মঃ
অর্থঃ" হে দয়াময় প্রভু! তুমি আমাকে অসৎ হতে সত্যের দিকে নিয়ে যাও। অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে আলোর দিকে ধাবিত করো। মৃত থেকে অমৃতের দিকে নিয়ে যাও।
-কিন্ত্তু এটাতো কোরআনের কোন আয়াত নয়। আমি চাচ্ছি কোরআন কি বলে সেটা জানতে?
আমার কথা শুনে মনা বিরক্ত হয়ে বলেছিলঃ
-আরে গাধা শোন। সুরা বাকারার ১৫৪নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ[وَلَا تَقُولُوا لِمَن يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَٰكِن لَّا
تَشْعُرُونَ [٢:١٥٤] "ওয়ালাতাকুলু লিমাইয়াখতালু ফি সাবিলিল্লাহি আমওয়াতু বাল আহ্হিয়া। ওয়ালাকিল্লা তাশউরুন।" অর্থাৎ আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো
না। বরং তারা জীবিত। কিন্ত্তু তোমরা তা বুঝ না। সুরা আলে-ইমরানের ১৬৯ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ [وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ
عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ [٣:١٦٩] "ওয়ালা-তাসাবান্নাল্লাযিনা কুতিলু ফি সাবিলিল্লা-হি আমওয়া-তা বাল আহ্ইয়াউন ইন্দা রাব্বিহিম ইউরযাকুন।" অর্থঃ আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি
কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত।" সুরা ইউনুসের ৬২-৬৪নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ[أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
[١٠:٦٢] আলা ইন্না অলিআউলিয়াহে লা খাওফুন আলাইহিম। অর্থঃ মনে রেখো যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের না কোন ভয় ভীতি আছে, না তারা চিন্তান্বিত
হবে। الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ[١٠:٦٣] আল্লাযিনা আমানু ওয়া কা-নু ইয়াত্তাকুন। অর্থঃ যারা ঈমান এনেছে এবং ভয় করতে রয়েছে। لَهُمُ الْبُشْرَىٰ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۚ لَا تَبْدِيلَ
لِكَلِمَاتِ اللَّهِ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ [١٠:٦٤] লাহুমুল বুশরা-ফিল হায়া-তিত দুননিয়া ওয়াফিল আ-খিরাতি; লা -তাবদিলা লিকালিমাতিল লা-হি;যা-লিকাহুওয়াল ফাওযুল আযিম। অর্থঃ তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন
জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হের-ফের হয় না। এটাই হল মহা সফলতা।
-আল্লাহর রাস্তা কোন্ টা? মনা আমাকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিল।
-আমার জানা নেই। আপনিই বলুন। কোন্ টি আল্লাহর রাস্তা।
-মনা হেসে জবাব দিয়েছিলঃ যে রাস্তায় গেলে আল্লাহকে পাওয়া যায় সেই রাস্তাটাই হচ্ছে আল্লাহর রাস্তা। যখন কেউ সেই রাস্তার দিকে হাঁটা শুরু করে তখন সে পদে পদে বিপদের সম্মুখীন হয়। হওয়াটাইতো স্বাভাবিক। যার জীবনে উত্থান-পতন নেই তার জীবনের মানে কোথায়? মনে উদয়-বিলয় না ঘটলে সেটা কিসের মন? তুই কি আল্লামা ইকবালের নাম শুনেছিস? যাকে একশো মুফতি কাফের ফতুয়া দিয়েছিল?
-হ্যাঁ শুনেছি। কিন্ত্তু বিশেষ কিছু তার সম্পর্কে জানি না।
-শোন্ আল্লামা ইকবাল তার এক শিকোয়ায় বলেছিলঃ
"তেরে যমিরপর যবতক না হো নুযুলে কিতাব
শেরা কে শাহে রাজি না সাহেবে কাশশাফ।"
যতক্ষণ তোমার অন্তরে কেতাব নাজিল না হয় ততক্ষণ পযর্ন্ত বিখ্যাত তফসীরকার আল্লামা রাজিই হোন আর আল্লামা যামাকশারীই হোন কেউ এর মর্মগ্রন্থি খুলতে পারবে না। অন্য এক জবাবে আল্লামা ইকবাল বলেছিলঃ "কি হ্যাকছে ফেরেস্তাউনে ইকবালকো গামরাজি আদমকো শিখাতাহে আদাবে খোদাবান্দি।"
(চলবে)
[*সুত্রঃ হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী কর্তৃক রচিত চিশতী উদ্যান হতে সংকলিত]