পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৫

মনা পাগলার খোঁজে-দ্বিতীয় পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর)

মনা পাগলা আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললোঃ তুই কি জানিস কোন্ কথাটি বলার জন্য আল্লামা ইকবালকে একশত আলেম কাফের ফতুয়া দিয়েছিল?

-না। আমিতো সেই রকম কিছুই জানি না।

-শোন তাহলে। আল্লাহকে লক্ষ্য করে আল্লামা ইকবাল বলেছিলঃ "আল্লাহ তুমি দয়ালু নও।" একই ধরণের কথা বাট্রেন্ড রাসেলও বলেছিলঃ গড ইজ অলমাইটি টাইরেন্ট। ঈশ্বর হচ্ছেন জালিমের বাদশাহ। কিন্ত্তু মজার ব্যাপার কি জানিস? দুইজনের দৃষ্টি ভিন্ন। দুইজনের দর্শন ভিন্ন। এই উক্তি ঈশ্বর বা আল্লাহকে কে করতে পারে? সাধারণের দৃষ্টিতে অনেকেই বলবে-কাফিররা। অনেকেই বলবে মুরতাদরা। কিংবা যারা ধর্ম সর্ম্পকে অজ্ঞ তারাই একথা বলতে পারে। এই উক্তিটি যদি বিশ্লেষণ করতে হয়-তাহলে তাদের দর্শন তথা তাদের চিন্তা-ধারা সর্ম্পকে জানতে হবে আগে। কিংবা তাদের নিকট এর ব্যাখ্যা চাইতে হবে। কেন তারা এ ধরণের উক্তিটি করেছিল? কিন্ত্তু তাদেরকে কোন সুযোগ দেয়া হয়েছে বলে মনে হয় না। 
মনার এ কথা শুনে হয়তো অনেকেই ভুল বুঝতে পারে। যেহেতু তারা মনা পাগলাকে চেনে না। তার সাথে কথা বলেনি। এমনকি তার দর্শনও জানে না। আমি এদিক থেকে লাকি বলতে পারি। অামি মনাকে চিনি। তার সাথে কথা হয়েছে। সে মাঝে মধ্যেই আমার সাথে কথা বলতো। আমিও তার সাথে কথা বলে মজা পেতাম। তাই তার সাথে দেখা করার আরেকবার স্বাদ হলো। 

হাঁটতে হাঁটতে কখন যে হাইকোর্ট মাজারের মুল গেটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি তা খেয়ালই করিনি। মাজারের মুল গেটে সামনের দুধারে সারি করে অনেকেই খয়রাত করছে। কেউ বা বেশ ভুষায় পরিবর্তন এনে নিজেকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। আমি তাদের মধ্যে মনাকে খুঁজলাম। নাহ! মনা সেখানে নেই। কোথায় থাকতে পারে মনা? হয়তো ভিতরেই থাকতে পারে। আমি মৃদু পায়ে হাঁটতে হাঁটতে মাজারের দিকে রওনা হলাম। সেখানেও সারি ধরে দাঁড়িয়ে আছে ফকির মিসকিনরা। আমি তাদের দিকে তাকিয়ে মনাকে খোজার চেষ্টা করলাম। নাহ্! সেখানেও নেই।
আমি ওযুখানা হতে ওযু করে মাজারের ভেতর প্রবেশ করলাম। মাজারের মুল ফটকের সামনে লেখাঃ বাংলা ওলি। হযরত খাজা শরফু উদ্দিন চিশতী (রহঃ)।

অনেকেরই হয়তো জানা নেই হযরত খাজা শরফ উদ্দিন চিশতী (রহঃ) ছিলেন সুলতানুল হিন্দ হযরত খাজা মঈনউদ্দিন চিশতী (রহঃ) এর মেজ ছেলে। বিভিন্ন সুত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে সুনিশ্চিতভাবে জানা গেছে যে, ওলী--বাংলা হযরত খাজা শরফুদ্দিন চিশতী (রহঃ) সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীব উন নেওয়াজ হযরত খাজা মইনুদ্দিন হাসান চিশতী (রহঃ) এর ২য় পুত্র ছিলেন হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) এর ২য় স্ত্রী হযরত বিবি ইসমত - এর গর্ভে হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) এর ঔরসে ৬২৮ হিজরী মোতাবেক ১২৩০ খৃষ্টাব্দে আজমীর শরীফে জন্মগ্রহণ করেন।তার ওফাত দিবস ৯৯৮ হিজরি।

বিগত ৭৫০ বৎসর ব্যাপী লিখিত বিভিন্ন মালফুজাত, তাজকিরাত, মাকতুবাদ বিশেষ করে হযরত খাজা গরীব উন নেওয়াজ মইনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) এর দ্বিতীয় প্রধান খলিফা হযরত হামিদউদ্দিন সাভালী (রহঃ) কর্তৃক ১২৫০ খ্রীষ্টা্ব্দ রচিত "সুরুবাস সুদুর" - তথ্য প্রদত্ত হয়েছে হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রহঃ) রচিত "ফাতেয়াইদুল ফুয়াদ" এবং তার খলিফা হযরত নাসিরউদ্দিন চেরাগী রচিত "খায়রুল মন্ঞ্জিলপুস্তকের বর্ণনায় এই বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।ওলী--বাংলার পিতৃপ্রদত্ত প্রকৃত নাম ছিল খাজা হুসামউদ্দিন আবু সালেহ চিশতী (রহঃ) এবং জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হযরত খাজা ফখরউদ্দিন আবুল খায়ের চিশতী (রহঃ) হযরত খাজা গরীব উন নেওয়াজ (রহঃ) এর ১ম স্ত্রী বিবি আমাতুল্লাহর গর্ভজাত একই মাতার গর্ভে তার একমাত্র ভগ্নী হযরত বিবি হাফেজা জামাল (রহঃ) জন্মগ্রহণ করেন। তার কনিষ্ঠভ্রাতা হযরত খাজা গিয়াস উদ্দিন আবু সাইয়েদ চিশতী (রহঃ) তার গর্ভধারিণী মাতা বিবি ইসমত এর গর্ভজাত ছিলেন। পিতৃকুলে এই ওলী মহান ওলী সাইয়েদ ছিলেন এবং বংশধারা পিতা হযরত খাজা গরীব উন নেওয়াজ (রহঃ) মাধ্যমে রাসুল কারীম (সাঃ) এর রক্তধারার সাথে সংমিশ্রিত ছিল।তিনি হযরত শাহ্ জালাল(রহঃ)-এর সাথে ই বঙ্গদেশে ইসলাম প্রচার করার উদ্দেশ্যে আগমণ করেছিলেন। হযরত শাহ্ জালাল(রহঃ)সুলতানের সেনাবাহিনীর সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিনের বাহিনীর সাথে হুশামউদ্দিন শাহ্ জালাল (রহঃ) এর ৩৬০ জন ওলী দরবেশ হিজরী ৭০১ মোতাবেক ১৩০৩ খ্রীষ্টাব্দে বিজয়ীর বেশে শ্রীহট্টে প্রবেশ করেন। অতঃপর শ্রীহট্ট বা সিলেট হযরত শাহ্ জালাল (রহঃ) এর সাথে তিনি বৎসর অবস্থান করেন তার সহবতে ফায়েজ বরকত লাভ করেন। এই সময় খাজা গরীব উন নাওয়াজ (রহঃ) এর পুত্র হিসাবে পরিচিতি প্রকাশ পেলে হযরত শাহ্ জালাল (রহঃ) তাঁর নাম রাখলেন শরফউদ্দিন যার আরবী অর্থ হচ্ছে-বদলানো বা পাল্টানো। সেই থেকে হযরত হুসাম উদ্দিন চিশতী (রহঃ) হযরত খাজা শরফউদ্দিন চিশতী (রহঃ) নামে পরিচিত হন। 
আমি মাজারে গিয়ে তাজিমী সিজদাহ করে ফাতেহা পাঠ করলাম। অতঃপর মোনাজাত করে মাজার হতে বের হয়ে এলাম। কিন্ত্তু কি করা যায়? মি যাকে খুজছি তাকেতো পা্ছি না। কোথায় গেলে পাওয়া যেতে পারে? চিন্তা করলাম হয়তো হযরত খাজা ইয়ামিন(রহঃ)ওনার ওখানেই থাকতে পারে। পীর ইয়ামিনীকে বলা গোলাপ শাহ। আমি আবার হাঁটা শুরু করলাম। গোলাপ শাহ (রহঃ) এর মাজারের দিকে।পাগল ছাগলরাই মাজারকে তাদের প্রাণকেন্দ্র মনে করে। তারা দিনকে দিন মাজারেই পড়ে থাকে। মনা পাগলা সেই ধরণেরেই জাতের পাগল। কাজেই তাকে পেতে হলে বিভিন্ন মাজারে দরগাহতে হানা দিতে হবে। তাকে যে আমার ভীষণ দরকার 
(চলবে)