পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৫

সোনার মানুষ - নবম পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর)
এবার আসি আল্লাহর আরশ সর্ম্পকে। 
আল্লাহর পবিত্রতার বিকাশ মানুষ এবং জিনের মন ছাড়া সমগ্র সৃষ্টিতে প্রাকৃতিক নিয়মেই চলছে। এ সকল সৃষ্টি হলো আল্লাহর কুরসী। এর মধ্যে আল্লাহর পবিত্রতা তাঁর রচিত বিধান অনুযায়ী আপনা আপনি প্রকাশিত হচ্ছে। আল্লাহর আদেশ নির্দেশ যে মনের মধ্যে পরিপুর্ণভাবে কার্যকরী হয় সেই মনকে আরশ বলে। মানুষ এবং জিনের মন যখন তসবীহ করতে সক্ষম হয় তখনই তসবীহ হামদ হয়ে যায়। এবং সেই মন বা নফস আরশে পরিণত হয়ে যায়। আরশের মধ্যে আল্লাহর আদেশ, নির্দেশ পুর্ণভাবে কার্যকরী থাকে। আরশ আল্লাহর কর্তৃত্ব।

তাহলে " কুলুবুল মোমিনিনা আরশু আল্লাহ " বলতে আমরা যা বুঝলাম তাহলোঃ কোন আমানু যখন কোরআনের আদেশ নির্দেশ অনুযায়ী আমল করতে থাকেন তখন সেই আমানু মোমিন হয়ে যান। আর সেই মোমিনের কলবেই আল্লাহর আরশ। তাই মোমিন আল্লাহর আদেশের ব্যতিক্রম কাজ আর কখনো করেন না। অবিরাম সালাত প্রক্রিয়ায় সংযোগ থেকে উদয়-বিলয়ের মাধ্যমে মন-মস্তিষ্কে আগত ধর্মরাশি সমুহকে ভেংগে চুরে ফেললে লা মোকাম তৈরী হয়। লা মোকামকেই মোকামে মাহমুদা বলা হয়। এটি একটি উচ্চস্তরের মোকাম। এই শুন্য মোকামে পৌঁছা প্রতিটি জীবের কর্তব্য। কোরআন সেই আদেশই দিতেছে। কিন্ত্তু বস্ত্তু মোহে নিমজ্জিত কলুষিত নফস সেই মোকামে পৌঁছাতে বাঁধা দেয়। তাই সেই বাঁধাকে অতিক্রম করার জন্য কোরআন আদেশ দিচ্ছেঃ " ইয়া আয়্যুহাললাযিনা আমানুত্তাকুল্লাহা ইয়াবতাগু ইলাহিল ওসিলাতা ওয়া জাহিদু ফি সাবিলিল্লাহি লা আল্লাকুম তুফলিহুন।" কারণ মান হাদি আল্লাহু ফা হুয়াল মুহতাদি ওয়ামাইইয়ুদ দলিল ফালান তাজিদালাহু ওয়ালিয়াম মুর্শিদা [সুরা কাহাফ]। সেই মুর্শিদের আদেশ নির্দেশ মেনে চললে আমানু মোমিন হয়ে যান এবং তার জাহেরী জিন্দেগী অবসানের পর তিনি লা মউতের অধিকারী হয়ে যায়। মোমিনের নফসকেই নফসে মুৎমাইন্না বলা হয়। নফসের মধ্যে রুহ প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে। সালাতের মাধ্যমে সেই রুহ যখন জাগ্রত হয় তখন তাকে হুর বলে।  হুর দর্শনই আত্মদর্শন। সেই নফসকে লক্ষ্য করে কোরআনে সুরা ফজরে বলা হয়েছেঃ "ইয়া আইয়্যুহাতুহান্নাফসুল মুতমাইন্না, ইরজিয়ী ইলা রাব্বিকি রাদ্বিইয়্যাতাম্মারদিয়্যা, ফাদ্বখুলী ফী ঈবাদী ওয়াদখুলী জান্নাতি [সুরা ফজর, আয়াতঃ২৭-২৯]।"

এই পর্যন্ত বলে সুফী সাহেব একটু বিরতি দিলেন। তিনি তাকালেন উপস্থিত সকলের দিকে। কেউ কোন কথা বলছে না। কেবল ছলেমান মাথা নিচু করে বসে আছে। মনে হচ্ছে সে ঝিমুচ্ছে। ঝিমানেরই কথা। তিনি যে দার্শনিক আলাপচারিতা করছেন তা বোঝার মতো কোন মানুষ সেখানে ছিল বলে মনে হয় না। সুফী সাহেব মনে মনে ভীষণ লজ্জা পেলেন।  তিনি প্রায়ই ভুলে গেছেন সেই কথাটি। "কাল্লিমান নাসা আলা উকুলিহিম"- যে যতটুকু বোঝে তার সাথে ততটুকু আলাপচারিতা কর। তিনি একটু ঝেড়ে কাশলেন। তার কাশি শুনে ছলোমান মাথা উচু করলো। তিনি তাকালেন সুফী সাহেবের দিকে। সুফী সাহেব জিগ্যেস করলেনঃ-

- কি বলেছি তুমি বুঝতে পেরেছো?

-হুজুর, আমরা কি ওমন শক্ত কতা বুঝি? আমাগো তো হেই ক্ষেমতা নাই যে আপনের কতা বুঝতে পারুম?

-ওহ! সুফী সাহেব তার পাশে বসা রহমান সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন

-রহমান তুমি ছলেমানকে ওর বিষয়টি ভালোভাবে সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দাও।

এ কথা বলেই সুফী সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। এশার আযান হচ্ছে। লোকজনের বেশ উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আর দেরী করলেন না। তিনি দ্রুত উঠে দাঁড়ালেন। তিনি উঠে দাঁড়াতেই সকলে সমভাবে উঠে দাঁড়ালো। কবির তাকে রুম থেকে বাহিরে খানকাহ শরীফের দিকে নিয়ে গেল। ছলেমান আর রহমান সাহেব এবং হাতে গোনা দু'চারজন ছাড়া আর কোন লোক সেখানে থাকলো না। বাকীরা সবাই সুফী সাহেবের সাথে খানকাহ্ শরীফের দিকে চলে গেল।
(চলবে)