পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৫

সোনার মানুষ - শেষ পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর)

বিরতির পর রহমান সাহেব সলোমানের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ

-আমার কথা বুঝতে আপনার কোন কষ্ট হচ্ছে না-তো?

সলোমান হাসি মাখা মুখ নিয়ে বললোঃ

-না তেমুন কষ্ট হয় না। তয় আপনে যে কোরানের আয়াত দিয়া বুঝাইতাছেন হেইডা আমার জানা নাই।

-সমস্যা নাই। আপনি কোরআন হতে দেখে নিয়েন। তো যা বলছিলাম
রহমান সাহেব আবারো শুরু করলেন

দ্যাখেন আল্লাহ পাক সৃষ্টির বিকাশ ঘটিয়েছেন নুরে মুহম্মদী দ্বারা। এই নুরে মুহম্মদীর মধ্যে রুহ প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে। সাধনা দ্বারা নুরে মুহম্মদীর মধ্যে তার জাগরণ ঘটাতে হয়। রুহ যখন সাধক নফসের মধ্যে জাগ্রত হয় তখন তা স্বমুর্তিতে রুপ ধারণ করে সম্মুখে এসে দাঁড়ায়। এই রুহকে দেখার মানেই হলো আত্মদর্শন লাভ করা। তথা মান আরাফা রাব্বাহু ফাক্কাদ আরাফা রাব্বাহু। তার মানে নিজেকে নিজে দেখা। নিজেকে নিজে চেনা। এর কোন ধ্বংস বা বিনাশ নেই। এটি অপরিবর্তিত তথা স্বয়ং সম্পুর্ণরুপ ।
সুরা মরিয়মের ১৭ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ "ফাততাখাজাত ( সুতরাং তিনি [মরিয়ম] গ্রহণ করিলেন) মিন দুনিহিম (তাহাদের হইতে) হিজাবান (পর্দা) ফা আরসালনা (সুতরাং আমরা [আল্লাহ] পাঠাইলাম) ইলাইহা (তাহার দিকে) রুহানা (আমাদের [আল্লাহর]রুহ) ফাতামাসসালা (সুতরাং উহা প্রকাশিত হইল) লাহা (তাহার জন) বাশারান (বাশার[মানুষ]) সাউইইয়ান (পরিপুর্ণ)। অর্থাৎ এই আয়াতে বলা হলোঃ সুতরাং তিনি(মরিয়ম) পর্দা গ্রহণ করিলেন তাহাদের হইতে, সুতরাং আমরা (আল্লাহ) পাঠাইলাম তাহার দিকে আমাদের (আল্লাহ) রুহ। সুতরাং উহা প্রকাশিত হইল তাহার জন্য পরিপুর্ণ বাশার(মানুষ)। 
এছাড়া সুরা আননাহল আয়াত নং ১০২ তে বলা হয়েছেঃ কুল(বলুন) নাজজালাহু (তিনিই নাজিল করেন) রুহুল কুদুসি (রুহুল কুদ্দুস) মির(হইতে) রাববিকা (তোমার রব) বিল হাককি(সত্যসহ) লিইউসাববিতাল(প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য) আললাজিনা(যাহারা) আমানু(ইমান আনিয়াছে) ওয়া(এবং) হুদাও(হেদায়েত) ওয়া(এবং) বুশরা(সুসংবাদ)লিল(জন্য) মুসলিমিনা(মুসলমা[আত্মসমর্পণকারী]দের)। অর্থঃ তিনিই নাজেল করেন রুহুল কুদ্দুস তোমার রব হইতে সত্যসহ প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য যাহারা ইমান আনিয়াছে এবং হেদায়েত এবং সুসংবাদ মুসলমানদের[আত্মসমর্পণকারী]জন্য। এই আয়াতে প্রথমেই বলা হয়েছে রুহুল কুদ্দুস তিনিই নাজেল করেন তোমার রব হইতে। 
খেয়াল করুন, এখানে 'মিররাব্বিকুম' তথা তোমাদের রব হইতে বলা হয় নি বরং নিছক তোমার রব হইতে রুহুল কু্দ্দুস নাজেল করা হয়। তারপরেই বলা হয়েছেঃ সত্যসহ এবং তারপরে বলা হয়েছেঃ প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কাদের জন্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য নাজেল করা হয়? উত্তরটি হলো যারা ইমান এনেছে এবং হেদায়েত এবং যারা মুসলমান (আত্মসমর্পণকারী) তাদের জন্য । এই বিষয়টি একটি বিরাট সুসংবাদ। এই রুহুল কুদ্দুস যারা মুসলমান এবং ইমান ও হেদায়েত লাভ করেছেন তাদের জন্য বিরাট একটি সুসংবাদ।

তাহলে সোলেমান ভাই এইবার আমরা পুর্বের কথায় ফিরে যাই।

খাঁটি স্বর্ণের কথা বলছিলাম। সেই খাঁটি স্বর্ণ হলো এই রুহুল কুদ্দুস যা একটি পরিপুর্ণ বাশার রুপ ধারণ করে। এইটিকেই বলা হয় সোনার মানুষ। মনের মানুষ। মানুষ রতন।  তো সেই স্বর্ণটির মধ্যে খাদ তথা দুনিয়াবী চিন্তা-ধারা কামনা-বাসনার লোভ মোহ মায়া ইত্যাদি মেশানো হয়, তখন তা আর তার স্বরুপটি ধরে রাখতে না পেরে আত্মার ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ফেলে। যখন মৃত্যু নামক বিষয়টি তথা সোহাগা মেশানো হয় এবং এসিডে পোড়ানো হয় তথা মাটিতে বা কবরে শোয়ানো হয় তখনই তার এসিড টেষ্ট হয়। সে যদি খাঁটি হয় তাহলে তার দেহ কখনো মাটি ধ্বংস করতে পারে না। কারণ " ইন্নাল্লাহা হারামা আলাল আরদে আরশাদুল আম্বিয়া "।

- তো সলেমান ভাই কি বুঝলেন?

সলেমান রহমান ভাইয়ের কথা শুনে তাজ্জব হয়ে গেল। সে মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো-জীবনে কতো স্বর্ণ গলিয়ে অলংকার তৈরী করেছি। অলংকার ভেংগে স্বর্ণ বের করেছি। কিন্ত্তু কখনো এভাবে চিন্তা করিনি। মৃত্যু নামক এই বিষয়টিকে কেউ এড়িয়ে যেয়ে পারে না। সবাইকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। কিন্ত্তু তারপরও আমরা অচেতন। কতো পাপ করেছি....চিন্তা করতে করতে সলেমানের দুচোখ জলে ভিজে এল।

রহমান ভাই লক্ষ্য করলেন-সলেমানের চোখ দুটো ছলছল করছে। তিনি কিছু বললেন না। তিনি কেবল চিন্তা করতে লাগলেন - আরো কিছু বলার ছিল। কিন্ত্তু সলেমানের কথা চিন্তা করে তা বাদ দিলেন। কেউ বিশ্বাস করুক বা না করুক প্রমাণতো আল্লাহ পাক নিজেই দু'চারটা করে নজির দেখান। যে লোকটির কথা বলা হলো - তার নজিরতো পুরো গ্রামের মানুষ দেখেছে। তারাই বিচার বিবেচনা করুক। চিন্তা ভাবনা করুক। কোন্ টা সত্য কোন্ টা মিথ্যা...