পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫

মনা পাগলার খোঁজে - তৃতীয় পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর)

আমি পীর ইয়েমেনী যা গোলাপ শাহ্ র মাজার নামে পরিচিত সেইখানে গিয়ে উপস্থিত হলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম-আমি যাকে খুঁজছি সে সেখানেও নেই।  আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। সেখানে দু'চারজন আমার উৎসুক দৃষ্টি দেখে জানতে চাইলো-কোন মানত আছে কি-না? কিংবা কোন মিলাদ শরীফ দেব কি-না? আমি তাদের কোন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে এলাম। বাইরে এসে চিন্তা করতে লাগলাম কি করা যায়? কোথায় যাওয়া যায়? মনটা উসখুস করছে মনার জন্য। মনা যে কি জাদু করেছে আমায় কে জানে?

আমি রাস্তার একপাশে একটা টং দোকানে গিয়ে চা চাইলাম। দোকানী আমাকে চা দিল। আমি চায়ে চুমুক দিয়ে দেখি চায়ের বদলে কেবল গরম পানিতে কৌটার দুধ গুলিয়ে দিয়েছে। চা-টাও স্বাদ হয়নি। বিস্বাদযুক্ত চা বিষবৎ লাগলো। আমি দোকানীর কাছ থেকে একটি সিগারেট নিয়ে তার পাওনা মিটিয়ে দিলাম। মনে মনে ভাবলাম-যেখানে কোয়ানটিটি ভালো সেখানে কোয়ালিটি খারাপ হয়। আর যেখানে কোয়ালিটি ভালো সেখানে কোয়ানটিটি কম থাকে। কথাটা সত্য মনে হলো। যাক আমার কোয়ালিটি বা কোয়ানটিটি কোনটিই দরকার নেই। আমার দরকার মনা পাগলাকে। আমি মনে মনে চিন্তা করলাম মীরপুর মাজারের দিকে যাই। সেখানে হয়তো থাকতে পারে। আমি মীরপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পথে যেতে যেতে ভাবলাম মনার কথা।

মনা আমাকে বলেছিলঃ তুই কি মীর্যা গালিবের কথা শুনেছিস?

-হ্যা শুনেছি বৈকি। তার কিছু শায়েরও মুখস্ত ছিল। এখনো আছে দু'চারটা।

-তাহলে শোনা দেখি একটা ?

আমি মনার দিকে তাকিয়ে মীর্যা গালিবের একটি শায়ের বলার চেষ্টা করলামঃ

হার এক বাতপে ক্যাঁহেতে হো তুম কে তু ক্যাঁয়া হে
তুমহি কহো কে ইয়ে আন্দাজ গুফতেগু ক্যায়া হে।।
রগো মে দৌড়তে ফিরনে কে হাম নেহি কায়িল
যব আঁখোহিছে না টাপকা তো ফির লহু ক্যা হ্যায়।।

তা শুনে মনা বললোঃ

-তুই কি এর অর্থ ধরতে পেরেছিস? বুঝিস কিছু?

-না। সে ভাবে হয়তো বুঝিনি। যেভাবে আপনি কিছু বুঝাতে চাইছেন?

মনা মুচকি একটা হাসি দিল। সেই হাসির মধ্যে হয়তো একটা মিনিং ছিল। আমি সেটা ধরতে পারিনি। আমি তার দিকে তাকিয়ে সেই হাসি দেখছিলাম। জানতে চাইলাম সেই হাসি রহস্য। কিন্ত্তু মনা সেই কথার কোন উত্তর দিল না। সে কেবল মৌন রইল। হটাৎ মনা সেই মৌনতা ভেংগে বলে উঠলোঃ

-নিজেকে বড়ো ভাবার মধ্যে কোন আনন্দ নেই। নেই কোন বাহাদুরী। বড়ো বড়ো শায়ের আবৃত্তি করে যদি তার অর্থই ধরতে না পারিস,তাহলে তা মুখস্ত করে কি লাভ হলো? হয়তো কাউকে শুনালি। সে শুনে না বুঝে হয়তো ভাববে তুই বেশ বড়ো মাপের কেউ। অনেক জানিস তুই। তোকে সবাই জ্ঞানী ভেবে সম্মান করবে...যত্নআত্তি করবে...আর তা পেয়ে তুই আনন্দে গদ গদ করবি...তা-না রে? ঠিক বলছি কি না? বল...
আমি কি উত্তর দেব ভেবে পেলাম না। আমি মনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।  আমার তাকানোর ধরণ দেখে মনা আবারো বলতে শুরু করলোঃ

কেতাবত ভাই মানুষ নয় নিত্য নতুন কথা কয়
ভাবের ভাবুক হইয়া কেন কেতাব দেখ না।।
মস্তফার রুপ দেখি আবু বকর গেল মজি
আবু জাহেল ঘৃনা করি পায় যাতনা।।
 (চলবে)