পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৫

সোনার মানুষ-দশম পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর)

সুফী সাহেব চলে যেতেই রহমান ভাই সোলেমানের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ

-ভাই আপনি কি করেন?

-আমি একজন স্বর্ণকার। সোলেমান বললো।

-তাহলে তো ভালোই হলো। আপনাকে তাহলে স্বর্ণ দিয়েই বুঝাই। পৃথিবীর মধ্যে যতগুলো ধাতু আছে তার মধ্যে স্বর্ণ সবচেয়ে বেশি প্রচলিত এবং একটি মুল্যবান ধাতু। তো এই ধাতু দিয়ে যখন কোন অলংকার তৈরী করা হয় তখন তার সাথে খাদ মিশানো হয়। তারপর অলংকার তৈরী করা হয়। নিখাদ ধাতু দিয়ে অলংকার তৈরী হয় না। তাইতো?

-জি।

-কোন তৈরী করা অলংকার যখন ভেংগে চুরে আবার নতুন করে নির্মাণ করা হয় তখন প্রথমে কি করেন? স্বর্ণটিকে সোহাগা দিয়ে একটি মাটির পাত্রে রাখেন। তারপর সেই পাত্রটিকে আগুন দিয়ে জ্বাল দেয়া হয়। একসময় স্বর্ণটি গলে একটি খন্ডে পরিণত হয়। তখনও কিন্ত্তু স্বর্ণটি খাটি বা নিখাদ নয়। তাইতো?

-জ্বি।

-এরপর সেই স্বর্ণটিকে একোয়া রিজিয়া বা এসিডে চুবিয়ে রাখা হয়। কেন? স্বর্ণের মধ্যে যে খাদ আছে তা এসিড ধ্বংস করে ফেলে। ফলে একপর্যায়ে সেই স্বর্ণটি হয়ে যায় নিখাদ স্বর্ণ। এরমধ্যে আর কোন খাদ থাকে না। আর এসিডেরও কোন ক্ষমতা থাকে না সেটিকে ধ্বংস করার। তাইতো?

-জ্বি।

এবার আসি আমাদের আলোচনায়। পৃথিবীর মধ্যে যতপ্রকার জীব আছে তার মধ্যে মানব হচ্ছে আল্লাহর বহিঃপ্রকাশের সবোর্ত্তম মাধ্যম। সুরা তীন আয়াত নং-৪ এ বলা হয়েছেঃ "লাকাদ খালাকনাল ইনসানা ফি আহসানে তাকবীম" অর্থঃ
আমরা মানুষকে গঠন করিয়াছি সর্বোত্তম সাংগঠনিক পরিকল্পনা অনুসারে। আল্লাহ পাক এই মানবের মধ্যে নিজের একটি অংশ খুবই সুক্ষ্ম আকারে দিয়ে দিয়েছেন। সেটি হলো রুহ। যা এই নশ্বর পৃথিবীতে সৃষ্ট নয়। সমগ্র জগতই স্বয়ং আল্লাহপাকের সৃষ্ট হলেও তার মুল অংশ যা চিৎপরমাণু নামে পরিচিত, যাকে বলা হয় রুহ, তার অবস্থান হচ্ছে প্রাণে। প্রাণ ব্যতীত কোন প্রাণী নেই। এই প্রাণের স্পন্দন অনুভুত হয় হৃদপিন্ডে। যাকে বলা হয় কলব। এই কলবের মধ্যে ছুদুর নামক একটি মোকামের উল্লেখ আছে। যা থেকে ওয়াস ওয়াসা অর্থাৎ কুমন্ত্রণা বা খারাপ কাজের আদেশ দেয়া হয়। সুরা নাসে বলা হয়েছেঃ মিন শারিল্লিল ওয়াস ওয়াসিল খান্নাস। আবার অন্যত্র বলা হয়েছেঃ ইন্নামাল নাফসুল আম্মারা বিসসুয়ে। নিশ্চয়ই নফসে আম্মারা খারাপ আদেশ কলনেওয়ালা। তার মানে যে আত্মা কলুষিত সে আত্মাকে বলা হয় নাফসুল আম্মারা। নাফস হচ্ছে দেহ। নফসকে আম্মারা, লাউয়ামা এবং মুৎমায়িন্না এই তিনভাগে ভাগ করা যায় এবং এই নফস পন্ঞ্চভুতে তৈরী। এই নফস বা দেহ সংগঠনের তিনটি স্তর আছে। বহিঃস্তর বা দেহের বাহ্যিক অবয়ব। মধ্যঃস্তর বা সুক্ষ্ম দেহ অর্থাৎ প্রানময় শরীর। অন্তঃস্তর বা সুক্ষাতিসুক্ষ স্তর বা সুক্ষ্মদেহ বা জ্যোতিদেহ। এই জ্যোতিদেহই হচ্ছে রুহ। যা খালি চোখে দেখা যায় না। রুহ সর্ম্পকে জানতে চাওয়া হলে নবীপাক (সাঃ) মারফত আল্লাহ পাক বলেছেন পবিত্র কুরআনের ভাষ্যমতেঃ “কুল্লির রুহ মিনআমরি রাব্বি”। অর্থাৎ রুহ হচ্ছে আল্লাহ পাকের হুকুম। অন্যত্র বলা হয়েছেঃ ওয়া নাফাখতু ফিহে মেররুহি”। এর কোন ধ্বংস বা বিনাশ নাই। যেহেতু সে দেহে অবস্থান করে সেহেতু পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় আমরা জানি পদার্থের তিনটি গুণাবলী যথাঃ ওজন, অবস্থান, আকার এবং অায়তন আছে। বাতাসের আকার ব্যতীত অন্যান্য গুণাবলী থাকার কারণে তা একটি পদার্থ হিসেবে চিহ্নিত। যেমন খালি বেলুনে বাতাস ভর্তি করে ওজন নিলে ঐ বেলুনে বাতাসের কত ওজন তা পরিমাপ করা যায়। বিজ্ঞানীরা এই পদার্থ সর্ম্পকে ব্যাপক গবেষণা করে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, পদার্থ বিনষ্ট কিংবা সৃষ্টি হতে পারে না তবে একরুপ হতে অন্য রুপে রুপান্তর হতে পারে। বস্ত্তুর অবিনাশিতাবাদ সুত্রে বলা হয়েছেঃ Matter can not be destroyed, can not be created but can shaped from one to another. একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বুঝে নেয়া যাক। আমরা জানি পানি একটি তরল পদার্থ। পানিকে উত্তপ্ত করলে তা বাষ্পে পরিণত হয়। পানির এই অবস্থা হচ্ছে বায়বীয় অবস্থা। একইভাবে তরল পানিকে কম তাপমাত্রায় রাখলে তা বরফ হয়ে যায়। বরফ হচ্ছে কঠিন পদার্থ। একই পানির তিনটি অবস্থা থাকায় কোনটার বিনাশ সম্ভব হচ্ছে না বরং একটি থেকে অন্যটির অহরহ রুপান্তর হচ্ছে।এ পর্যায়ে রহমান সাহেব একটু বিরতি দিলেন।
(চলবে)