পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৬

মৃত্তিকা মায়াঃ মনার অনুভব


মনা একমুঠো মাটি নিয়ে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করছে। তার হাতে কিছু সিমের বীজ। আর কিছু খেজুরের বীজ। বীজগুলো নিয়েও সে নাড়াচাড়া করছে। উল্টে পাল্টে দেখছে। কিন্ত্তু কিছু বলছে না। মাটিগুলো একটি জায়গায় গর্ত করে তার থেকে উঠানো হয়েছে। গর্তটির মধ্যে সে বীজগুলো পুঁতে ফেলল। তারপর পানি ঢাললো। দুর থেকে অনেকেই মনার এ কীর্তিকলাপ দেখছে। কিত্তু কেউ কিছু বলছে না। সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে মনার কার্যটাই দেখছে। অার তা দেখে মনা মিটি মিটি হাসছে। কারণ কি?

এবার মনা হাসতে হাসতে উঠে এল। তারপর সোজা চলে এল মোবারক মামার চায়ের দোকানের সামনে। ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে মনা মোবারকের দিকে তাকিয়ে বললোঃ

-মোবারক ভাই, ফাস কেলাস একটা চা বানাইয়্যা দেনতো খাই।

-তাতো দিমু। তয় মামা এখখান কতা জিগাই।

-কি জিগাইব্যা তা আমি জানি। ঠিক আছে তারপরও তুমি কও...কি কতা...

-মামা, আপনেরে দেকলাম পরথত মাডি উডাইলেন। তারপর হেই মাডিডি চিপরাইলেন। ধুলা বানাইয়্যা হালাইলেন। আবার মাডিডি থুইয়্যা বীজগুলি লইয়্যা দাপাদাপি করলেন। গর্তের মইদ্যে হেডিরে হালাইয়্যা মাডি দিয়্যা পানি দিলেন। ঘটনাডা কি মামা?

-জানতাম তুমি জিগাইব্যা...আগে চা দেও। চা খাই আর একটা বিড়িও দিও। খাইতে খাইতে কই....

মোবারক মনার জন্য সুন্দর করে একটা চা বানালো এবং একটি সিগারেটও দিল। মনা উদাস ভংগিতে কি যেন ভাবতে ভাবতে চা খাচ্ছে আর সিগারেটে একটা করে টান দিচ্ছে। কিন্ত্তু কিছু বলছে না...চুপ থাকতে দেখে মোবারক আবারো মনাকে ইয়াদ করাইয়্যা দিল...চা সিগারেট শেষ করে মনা এবার তার মতো করে বলতে শুরু করলোঃ

-শুন মিয়া....পরথম মাডি উডাইয়্যা দেকবার চাইলাম - এই মাটি দিয়া আমাগো সৃষ্টি করছে। এই মাটিতেই আমাগো আবারো শোয়ানো অইবো। আবার এই মাডি থিক্ক্যাই আমাগো উডাইবো [মিনহা খালাকনাকুম....তারাতান উখরা]। আমি তার লাইগ্যা মাডিডারে ভাল কইর‌্যা দেকবার চাইলাম। কেমতে উডাইবো? সবতো এই মাডিই খাইয়্যা হালাইবো। তহন আড্ডি গুড্ডি ছাড়াতো কিছুই থাকবো না..একসময় হেইডাও থাকবো না.....তাইলে কেমতে কি? পরক্ষণেই মনে পড়লো আল্লাহয় কইছেঃ ওয়াল্লাহু আনবাতাকুম মিনাল আরদে নাবাতান-সুম্মা ইউয়িদুকুম ফিহা ওয়া ইউখরেজুকুম ইখরাজান। [ বরং অাল্লাহ তোমাদিগকে উদভুত করিয়াছেন ভুমি হইতে। উদ্ভিদের ন্যায়। অতঃপর তিনি উহাতে তোমাদিগকে ফিরাইয়্যা লইবেন এবং তিনি তোমাদিগকে সেখান হইতেই বাহির করিবেন-এক নুতন জাত হিসেবে।] হেইডা মনে অওনের পরথিকক্যা....হাসলাম...

-হ দেকলামতো আপনে খালি হাসতেছন। দোকানের বেবাকতেই দেকছে। আমারে খালি জিগায় মোবারক, মনায় খেজুর বিচি দেইখ্যা ওমনে হাসতাছে ক্যা....বিচির মইধ্যে কি দেকছে...

-ভাইরে বিচির মইধ্যে কি দেকছি হেই কতা সমাজের কাছে ভাইঙ্গ্যা চুইর‌্যা কওন যাইবো না...বিচির রহস্য বড়োই বিচিত্রময়...বিচিত্রময় এই মাডিও। একই মাডি থিক্ক্যা একেক রকমের গাছ অয়। মরিচের বিচ হালাইলে মরিচ অয়..হেইডা ঝাল..আওউক লাগায়। রস মিষ্টি। খেজুর লাগায়...রস মিষ্টি...কতো কি লাগায়...কত কি অয়...এইডারেই কয় কুদরত। এই কুদরতি খেলা খেলতে গিয়া ধরা দিল এই মাডির শরিলটাতে। এই শইল্যের মইধ্যেই হেয় অাছেরে বোকা...এই মাডিডায়ই মায়া লাগাইছে। মাডিরে ভালো বাসতে শিক। উচা উচা কতা কইয়্যা আর ফালাইয়্যা লাব নাই। হগ্গলরেই এই মাডির মধ্যে হান্দাইতে অইবো। সময় থাকতে মাডির মতো অইয়্যা যাগা....মায়া করতে শিক...দরদ দিয়া যত্নআত্তি কইর‌্যা যারে পালতাছস....হেয় একদিন উড়াল দিবই দিব...যুদি হেরে ধইর‌্যা রাখতে না পারস..তার কোন ঠিকানাও পাবি না,, কোন নিশানাও পাবি না.....কাঁহাছে আনা কাঁহাছে জানা...না নিশানা নাই ঠিকানা [কালামে হযরক থাজা শাহ্ পীর চিশতী (রঃ)]....। ধরতে পারলে আর মরণ নাইরে পাগলা.....কবরে হাশরে মাওলা থাকবোরে তোর সংগ যাই....দিন থাকিতে পন্থ ধরা চাই....[কালামে হযরত থাজা শাহ্ পীর চিশতী (রঃ)]।

মনা তার বুকের বাম পাশটায় হাত রেখে বললোঃ

" হৃদয়ও বনে অতি গোপনে একারও বাঁশি শুনেছি প্রাণে...মরমে মরি চাহি নেহারি...সন্ধানে আমার পাইবে দেখা" [কালামে হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ)]। গভীর রাইতে বইস্যা বইস্যা এই মাটির শইল্যের মধ্যে কান পাইত্তা হুনবি...হেয় কি কয়...হেরে সময় থাকতেই চিনন লাগেরে পাগলা....দিবসও ফুরাইয়্যা গেলে মতি গতির ঠিক নাই....দিন থাকিতে পন্থ ধরা চাই...রে অবোধ ভাই....যহন তারে চিনবি তহন কবি..উঠাও আবরণ দাও দরশন তোমারও আমার রবে না চিনন...তুমি আসিলে রব না আমি...তোমারও আমার হবে গো দেখ্যা..[কালামে হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ)]।

মনা উঠে যেতে যেতে বললো-যত্ন কর....এই মাডিটারে য্ত্ন কর....যতনে রতন মিলে...

মনার কথা শুনে উপস্থিত সকলেরই মুখ হা হয়ে গেল। কেউ কোন কথা বললো না। কেবল মোবারকের চোখের দেখা দিল....একফোঁটা বারিবিন্দু...যা সৃষ্টি হয় মহা সিন্ধু থেকে...এর উৎসও কেউ জানে না...ছোট্র এই দেহের মধ্যে কি অমুল্য ধনই না তিনি রেখেছেন...