পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৬

ময়না ও মনা পাগলার কথোপকথনঃ অনুভবের এক নতুন দিগন্ত

মনা একটি ময়না পাখি কিনে এনেছে। মনা শুনেছে ময়নার ভোকালকড নাকি মানুষের কাছাকাছি। তাকে শিক্ষা দিলে সে সবকিছু বলতে পারে। তাই মনার খেয়াল হলো সে তার কেনা ময়নাটিকে কথা শেখাবে। কিন্ত্তু কি শিখাবে? অনেক ভেবেচিন্তে সে ঠিক করলো তার যা ইচ্ছা তাই সে শেখাবে। তার আগে তাকে তার নিজের ভাষা শেখাবে। যাতে সে সব কিছুই বলতে পারে।
মনার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সে ময়নাটিকে কথা বলাতে সমর্থ্য হলো। একদিন মনা তার প্রিয় ময়নাটিকে জিগ্যেস করলোঃ
-আচ্ছা তুই যখন জঙ্গলে ছিলি তখন কি ভালো ছিলি না-কি এখন ভালো আছিস?
উত্তরে ময়নাটি বললোঃ
-আমি যখন জঙ্গলে ছিলাম তখন স্বাধীন ছিলাম। উন্মুক্ত আকাশে দিগন্ত জোড়া ডানা মেলে উড়তে পারতাম। দিক বিদিগ ছুটে বেড়াতে পারতাম। আমার স্বজাতীয়দের সাথে কথা ভাব-ভালোবাসা বিনিময় করতে পারতাম। কতো সুখে ছিলাম আমি। তুমি আমাকে ঐ মুক্ত অবস্থা হতে ধরে এনে এই খাঁচায় বন্দী করেছো। এখন আমি না পারছি ঐ নির্মল আকাশে উড়তে, না পারছি আমার স্বজাতীয়দের সাথে মেলা মেশা করতে? তুমিই আমার সর্বনাশ করেছো?
-কিভাবে আমি তোর সর্বনাশ করলাম?
-তুমি আমাকে তোমার ভাষা শিখিয়ে তোমার মতো করে গড়ে তুলেছো। তোমার ভাষায় আমি আমার স্বজাতীয়দের সাথে ভাব-ভালোবাসা বিনিময় করতে পারবো না। তারা আমার কথা বুঝবে না...যেহেতু তুমি তোমার মতো করেই আমাকে বির্নিমাণ করেছো।
-তাহলে তুই আমার ভাষা কেন শিখলি?
-তুমি শিখিয়েছো তাই। আমিতো প্রথমে শিখতেই চাইনি। তুমি আমাকে বন্ধী করে জোর করে শিখিয়েছো। না শিখতে চাইলে তুমি আমাকে মারতে...আহার বন্ধ করে দিতে...আমি অনাহারে থেকে শিখেছি....এ থেকে আমার মুক্তি নেই। আমাকে মুক্ত হতে হলে অবশ্যই তোমার আনুগত্য করতে হবে। তাই তোমার আনুগত্য স্বীকার করে আমি তোমার মতো করে নিজেকে বির্নিমাণ করার কাজে মনোযোগী হলাম।
এখন দ্যাখ, আমি কতো সুখে আছি। প্রতিদিন কতো মানুষ আসে আমাকে দেখবার জন্য। যারাই আসে তারাই অবাক হয়। ভাবে,..বন্যপাখি কি ভাবে তাদের ভাষায় ভাব বিনিময় করে? তারা জানে না, আমার গুরু ইনসানে কামিল।
ময়নার মুখে কথাগুলো শোনার পর মনা একটা চিৎকার দিয়ে বলে উঠলোঃ-
আন্তা ফাওক্কী,আন্তা তাহতী, আন্তা আমামী, আন্তা খালফী, আন্তা ফি ওয়া আনা মা'আল জিহাতি ফিহা আয়নামাতুয়াল্লু ফা ছাম্মা ওয়াজহুল্লা।"
উঠাও আবরণ দাও দরশন, তোমার আমার রবে না চিনন
তুমি আসিলে রব না আমি, তোমার আমার হবেগো দেখা।।
[ কালামে পাক হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী(রহঃ)]