পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

মনা পাগলার আত্মবিলাপ - প্রথম পর্ব

তোমাকে একটা কথা বলি। তুমি রাগ করিও না। একটু বুঝে চলার চেষ্টা করো। কারণ, এই যে আমাকে দেখছো? তুমি কি সত্যিই আমাকে দেখছো? না-কি অন্য কাউকে দেখছো? একটু ভেবে উত্তর দেবার চেষ্টা করবে। আর আমার হাল দেখে তুমি বিচলিত হইও না। কারণ তুমি একা নও। এই জগতে কেউ একা নয়। কেউ একা থাকে না। থাকার চেষ্টা করলেও পারে না। একটা সময় দেখবে-তুমি হয়তো কোন একটা কারণে সম্পুর্ণ একা হয়ে গেছো। কারো কাছ থেকে সাহায্য সহযোগীতা পাচ্ছো না। কেউ তোমার দুঃখ বোঝার চেষ্টা করছে না। ভাবছো, তুমি একা হয়ে গেছো? নিঃস্ব, অসহায়, এবং সম্বলহীন একজন হয়ে গেছো? না...না...তুমি কখনোই একা নও। তোমার গুরু তোমার পাশেই রয়ে গেছে। তুমি টেরই পাওনি। যিনি তোমাকে দয়া করে বাচিয়ে রাখছেন, নিশ্চয়ই এর পেছনে কোন একটা কারণ রয়ে গেছে যা তুমি জানো না। তার যা ইচ্ছে হয়, তা তিনি করতেই পারেন। তার ইচ্ছের বিপরীতে তুমি চলার চেষ্টা করো না। পারবে না....কারণ তার দয়ার বারিধারা তোমার উপর পতিত হয়েছে....

আমি মনা পাগলার কথা শুনে অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। দেখলাম, তার চেহারা। মুখের একটা অংশে কালো শিটকে দাগ পড়ে গেছে। ঠোঁটের কোণে কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে হয়তো। এখনো ক্ষাণিকটা রক্ত শুকিয়ে দাগটা স্পর্শ করে তুলেছে। হাতের দিকে তাকাতেই শিউরে উঠলাম। বাঁ হাতের কনুইয়ের কাছে অনেক বড়ো ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। তা থেকে অনর্গল রক্ত চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। তা দেখে আমি সান্তনার স্বরে বললামঃ

-আপনাকে তো এখনই ডাক্তার দেখানো উচিত। রক্তটা বন্ধ না হলে তো আপনি দুর্বল হয়ে পড়বেন। তাছাড়া আপনাকে এটিএস দিতে হবে। নয়তো ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে?


আমার কথা শুনে তিনি তার স্বভাব সুলভ হাসি দিয়ে বললেনঃ

-যিনি আমাকে জীবন দান করেছেন, তিনি চাননি যে অামি চলে যাই? যদি চাইতেন, তাহলে সেইখানেই আমাকে শেষ করে দিতে পারতেন। যেহেতু তিনি চাননি, তাই তিনিই বাঁচিয়ে রেখেছেন। মহান গুরু, তার কৃপা ধন্য এ দাস কেবল তারই আজ্ঞাবহ...সে সেভাবেই কাজ করতে চাইছে....

আমি তার কথা শেষ হতে না দিয়েই হড় হড় করে টেনে নিয়ে গেলাম ধারের কাছের কোনো একটা ডিসপেন্সারীতে। সেখানে গিয়ে তার হাতটা ওয়াশ করে ব্যান্ডেজ করে দিল। আর তাকে একটি এটিএস ইনজেকশন দিয়ে দিল। রক্ত পড়ায় সে বেশ কাহিল হয়ে পড়েছে।  টাকা পরিশোধ করে আমরা বের হয়ে এলাম। দেখলাম মনার হাঁটতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। তাকে কিছু খাওয়ানো দরকার। একটা ফাস্টফুডের দোকানে ঢুকে দুটি চিকেন বার্গার আর কোল্ড ড্রিংস এর অর্ডার দিলাম। দোকানী আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তার অবাক হবার কারণ নিশ্চয়ই মনা। ফাস্টফুডের দোকানে ঢুকে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে। আর আমি ঢুকেছি একটা পাগলকে নিয়ে। অবাক হবারই কথা।

মনা আর আমি খাওয়া শেষ করে রাস্তায় বের হয়ে এলাম। ভাবলাম, কোথায় যাওয়া যায়? তার বিশ্রামের প্রয়োজন। কিন্ত্তু তাকে কোথায় নিয়ে রাখবো? আমার নিজেরইতো থাকার জায়গা নেই। এই অবস্থায় কোথায় যাওয়া যেতে পারে? শেষে সিধান্ত নিলাম। নাহ্ মেসেই ফিরে যাব। আমি একটা রিক্সাভাড়া করলাম। তারপর দুজন উঠলাম সেই। রিক্সায়। আমি রিক্সায় উঠেই মনার কাছে জানতে চাইলাম-কি হয়েছে?

আমার কথা শুনে মনা বললঃ

-তেমন কিছুই হয়নি। 

-তেমন কিছু না হলে আপনার এই অবস্থা হয়? 

-ধুর পাগল! গুরু সহায় ছিল বলেইতো তোকে গুরু আমার কাছে পাঠিয়েছে..

-ঐসব কথা রাখেন। সত্য করে বলেনতো, কি হয়েছিল?

-বললাম না? তেমন কিছুই হয়নি।

-আবারো শুরু করেছেন?

এবার একটু রাগত স্বরে বলায় মনা বললো তাহলে শোন
(চলবে)