পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

মনা পাগলার আত্মবিলাপ-শেষ পর্ব

(পন্ঞ্চম পর্বের পর হতে)
কথায় আছে না " যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয় "। মনার সাথে যখন কথোকথনে ব্যস্ত ছিলাম ঠিক সেই মুহুর্তে কলিংবেলের আওয়াজ পেলাম। দরোজা খুলে দেখলামঃ আজহার এসেছে। আমাকে দেখে বললোঃ

-কি রে তুই এতো তাড়াতাড়ি কোথ্থথেকে এলি? তোর না আজ একটা ইন্টারভিউ দেয়ার কথা। গেছিলি সেখানে...
কথা বলতে বলতে রুমের ভেতর প্রবেশ করেই আজহার মনা পাগলাকে দেখে চমকে উঠলো। বললোঃ

-এই আপদ কোথ্থ থেকে নিয়ে আসলি? .....তোকে না বলেছি যেনতেন লোক নিয়ে আমার রুমে আসবি না?

-দোস্ত শোন্...

-আরে রাখ তোর শোনাশুনি। এইসব পাগল ছাগল নিয়ে তুই কোন্ সাহসে আমার রুমে আসলি? তুই কি জানিস না..আমার এই রুমে কতো দামি দামি পোষাক আষাক আছে...কত কোম্পানীর গুরুত্বপুর্ণ ফাইল পত্র আছে? তারপরও তু্‌ই কোন্ সাহসে আনলি...

-দোস্ত শোন মনা পাগলা আর দশটা পাগলের মতো চোর ছেচ্চর না..সে নিতান্তই ভালো একটা মানুষ

-ওহ...এর মধ্যে নামও জেনে গেছিস? ও কি তোর বাপ লাগে...কথা নেই বার্তা নেই পাগল ছাগল একটারে ধরে নিয়ে আসবি..

-দোস্ত একটু শান্ত হ। আমার কথাটা শোন। তারপর তোর যা বলার বলিস..

আমি আজহারকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। সেটা শোনার পর আজহার তাকে এক্ষুণি বিদেয় করে দেয়ার জন্য বলে গেল। আর বলে গেল - আমি যেন ফিরে এসে ঐ পাগল ছাগলরে না দেখি..যদি কোন কিছু চুরি হয় তার জন্য তুই দায়ী থাকবি...আমি গেলাম..দরজা লাগা...

ঘটনার আকর্ষিকতায় মনা বেশ হতচকিত হয়ে পড়লো। সে বেশ শংকিত হয়ে পড়লো। কি করবে বুঝতে পারছে না। চলে যাবে না থাকবে....মনার দোটানা ভাব দেখে আমি মনাকে বললামঃ

-আপনি শংকিত হবেন না..ও একটু এরকমই..এসব একদমই পছন্দ করে না...

-নারে বাবা আর থাকার উপায় নাই। আমারে যাইতে হইব। 
মনা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতে থাকে
বাবারে আমাগো কোন জায়গাতে শান্তি নাই। মসজিদে গেলে মোল্লাগো লগে ঝগড়া লাগে...মাজারে গেলে শিন্নি খাইতে যাইয়্যা মারামারি করন লাগে...মন্দিরে গেলে পুরোহিতরা ঘেড়ি ধইরা বাইর কইর‌া দেয়। রাইতে ঘুমাইতে গেলে ঘুমের জায়গা লইয়্যা পারাপারি করন লাগে...যেন আমরা একটা বোঝা হইয়্যা গেছি। অনেকটা ফুটবলের লাহান। যে যহন পায় লাথ্থি মারে...আমাগো সমস্যার শেষ নাই...

কথা বলতে বলতে মনার গলার স্বর রুদ্ধ হয়ে আসে।চোখের কোণে জলের ধারা কেমন যেন চকচক করে উঠে...নিজেকে সামলে নিয়ে মনা আবার বলা শুরু করে...

বাবারে..তোমার এইহানে আহনের পর বড়ো ভালো লাগছিল। জানি থাকতে পারুম না...আমরা কোন জায়গাতেই থাকতে পারি না...খাইয়্যা না খাইয়্যা অনাহারে অর্ধাহারে কতো দিন যে থাকন লাগে হেইডার কোন হিসাব নিকাষ নাই। আমাগো অপরাধটা কি? আমরা কি মানুষ ঠকাইয়্যা খাই? বরংণ্ঞ্চ মানুষই আমাগো ঠকাইয়্যা খায়। পাগলের ব্যাস ধইররা আমাগো ঠকায় আরেক পাগলরা। ওগো তামশা দেইখ্যা মানুষজন কামেল ভাইব্যা ভুলডা করে। এই বেরামের কোন চিকিৎসা নাই...

-আসলে আমি কি যে বলি...আজহার মানুষটা খুব ভালো। আমার কে আছে বলেন? আমারতো আপনার মতোই অবস্থা। আমারওতো থাকার জায়গা নেই। ও দয়া করে থাকতে দিয়েছে বলেইতো আছি। আজকের ঘটনার পর কি হয় বলা যায় না...তারপরও বলি...ও আসলে খুবই ভালো একজন মানুষ।

-বাবারে আমাগো ভালো মন্দ বুঝাইয়্যা লাভ নাই। মানুষের দরবারে পাগলদের মর্যাদা নাই। কিন্ত্তু মহান জাত পাক সুবহানের কাছে তার পাগলের মুল্য অনেক। ইচ্ছে করলেই কেউ পাগল হ্তই পারে না। কেউ তারে এ পথে নামাইয়্যা পাগল বানায়। যে বানায় সেই জানে সেই পাগলের মুল্য। তুমি মুল্য বিনিময়ে সত্যিকারের পাগল বানাইতে পারবা না। যতক্ষণ না সৃষ্টিকর্তা চাইবেন। যাইরে বাজান...ভালো থাকিস আর তোরে যা বলেছি মানলে মানিস, না মানলে না মানিস। জানতে চাইছস তাই বললাম।

এরপর সে তার পোটলা পুটলি নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে বের হয়ে গেল। আমি তার সাথে যেতে চাইলাম। সে বরণ করলো। অগত্যা কি আর করা...দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার চলে যাওয়া দেখলাম। 

রুমে এসে দেখি সেখানে এক টুকরো কাগজ পড়ে আছে। হয়তো মনা মনের ভুলে সেটা ফেলে গেছে...কিন্ত্তু কি লেখা আছে সেই কাগজে? আমি কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলাম সেখানে লেখাঃ

"এমন অনেক উসকো খুসকো চুল ও ধুলা মলীন বিশিষ্ট ওলি আছে, যাদেরকে মানুষের দরজা থেকে বিতাড়ন করা হয়। অথচ তারা যদি আল্লাহর কাছে কিছু দাবী করে বসে, তাহলে আল্লাহ তাদের সেই দাবী অবশ্যই পুরণ করেন।(মুসলিম শরীফ)