পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

মনা পাগলার আত্মবিলাপ-দ্বিতীয় পর্ব

(প্রথম পর্বের পর হতে)

মনা রিক্সাটির একপাশে হেলান দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করলোঃ

-তুই তো জানিস আমি তেমন নামায টামাজ পড়ি না। মাঝে মাঝে মনটা টানলে হয়তো মসজিদে যাই। তাও কদাচিৎ। তো সেদিন আমি গেছি মীরপুর মাজারে। মাজারের পাশেই একটা নির্জন জায়গায় বসে আছি। সেই সময় মাজার কমিটির লোকজন সবাইকে জুম্মার নামাজে আসার জন্য দারোয়ানকে বলে দিল। দারোয়ান সবাইকে বলছিল যথারীতি। আমিও শুনলাম সেই কথাঃ ওই সবাই আউসক্যা জুম্মার নামাজ পড়বি। নাইলে কইলাম খবর আছে? সেই কথা শুনে আমার মনটা চাইলো মসজিদে যাই। নামায পড়ি। কিন্ত্তু আমার যে বেশ ভুষা তাতে নামায হয় কিনা সন্দেহ আছে? কিন্ত্তু কি করবো? মাজার কমিটির হুকুম। না মানলেতো থাকতে দিবে না। অগ্যতা গেলাম।

যেই অযুখানায় গেছি অযু করতে অম্মনিই একজন বললোঃ আইগ্যা হোছে না, মুইত্যা লয় পানি। হালারপো আইছে নামাজ পড়তে? ঐ ব্যাটা তুই কি জানস না, জুম্মার দিনে নামায পড়তে আসলে অজু গোসল লাগে? ভালো জামা কাপড় পইড়্যা আহন লাগে...এই ছালার জামা পইড়্যা কি নামায অয়?

লোকটির কথা শুনে কিছু বলতে চাইছিলাম। কিন্ত্তু পরক্ষণেই গুরুর আদেশ পেয়ে কিছু বললাম না। গুরু নিষেধ করলো তর্ক করার জন্য। 

-গুরু নিষেধ করলো মানে? আপনার গুরু কি সেই সময় উপস্থিত ছিল?

-ছিল মানে? সেতো সবসময়ই উপস্থিত থাকে। তাকে যারা চিনে তারা তার উপস্থিতি সর্বত্রই টের পায়। তো শোন এরপর কি হলো-

মনা তার কথা আবার বলা শুরু করলোঃ

তাদের কথা শুনে আমি চুপ চাপ অযু করছিলাম... কোন কথা বলছিলাম না..

আমাকে অজু করতে দেখে অনেকেই বেশ উৎসাহ বোধ করছিল। কেউ হয়তো ঠাট্রা বিদ্রুপ করছিল...কেউ টিটকারি মারছিল। কেউ বা কোন কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল। আমি অযু করা শেষ করে মসজিদের ভেতরে গেছি। আর তারপরই শুরু হলো আসল ঘটনা...

কথা থামিয়ে একপর্যায়ে মনাকে দেখলাম সে তার গালের পাশটাতে হাত দিয়ে ব্যথাটা জানান দিচ্ছে।  ক্ষতস্থানটিতে হাত বুলাতে লাগলো। মনে হলো তার ব্যথা যেন এখনো পুরোপুরি যায়নি। মনে হচ্ছে কথা বলতে তার বেশ কষ্ট হচ্ছে। তাকে আমি আর জোড় করলাম না। সে আবারও বলা শুরু করছে-

ইমাম সাহেব কাবলাল জুম্মা আদায় করার জন্য মুসল্লিদের আহব্বান জানালেন। অামি নামায পড়ার জন্য যেখানে দাঁড়িয়েছি সেখানে দেখলাম একজন মুসল্লি তার জুতাজোড়া সামনে রেখে দিল। আমি সেটা নিয়ে দুরে সরিয়ে রাখলাম। আর তখনোই বেঁধে গেল গোলযোগ। সে তার জুতাজোড়া আবারো সামনে এনে রাখলো। আমি সরিয়ে রাখলাম। তারপর সে চেঁচিয়ে বলতে লাগলোঃ

-ওই ব্যাটা কি হইছে? হ্যাঁ...খালি বার বার জুতাগুলি সরায় রাখস?

-ভাই সেজদা দেওনের সময় মাথায় জুতাটা লাগবো? তাই সরিয়ে রাখলাম

-সাইট দিয়া রাখ..

-ভাই আপনার পাশ দিয়া রাখেন..

-কেন্ এই পাশে রাখলে সমস্যা কি?

-সমস্যা আছে। আপনার জুতা আপনার পাশ দিয়ে রাখেন। আমি এখানে রাখতে দিব না..

-জুতা এইখানেই থাকবো..দরকার হইলে...

আমার জেদ চেপে যাওয়ায় আমি জুতা জোড়া নিয়ে দুরে ফেলে দেই। তারপরই শুরু হয় আসল ঘটনা....

(চলবে)