পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ক্কালবঃ হৃদয় Heart


ক্বালব সম্বন্ধে হাদিস শরীফেও এ মর্মে উক্তি এসেছে,
আলা ইন্না ফিল জাছাদি মুদগাতুন। ইজা ছালুহাত ছালুহাল জাছাদু কুল্লুহু ওয়া ইজা ফাছাদাত ফাছাদাল জাছাদু কুল্লুহু আলা ওয়া হিয়াল ক্বালব। (বুখারী-৭৩ হাদিস)।
অর্থাৎ"নিশ্চয় নিশ্চয় মানব দেহের ভিতরে এক খন্ড গোশত রয়েছে। যদি ঐ গোশত খন্ড পাক ছাফ হয়ে যায়, তবে তার সারা দেহ মাথা থেকে পা পর্যন্ত পাক ছাফ হয়ে যায়। আর ঐ গোশত খন্ড যখন নাপাক থাকে তখন তার সম্পূর্ণ দেহটি নাপাক থেকে যায় এবং ঐ গোশত খন্ডের নামই হচ্ছে ক্বালব"।
ক্বালব সম্বন্ধে বোখারী শরীফে উল্লেখ রয়েছে, "লা সালাতা ইল্লা বি হুজুরি ক্কালব" অর্থঃ "হুজুরী ক্বালব ছাড়া নামাজ কামেল হবেনা"।
অন্যত্র হাদিস শরীফে এসেছে,
"আশ্বাইতানু জাছিমুন আলা ক্বালবে বানি আদামা ফা ইজা জাকারাল্লাহা খানাছা ওয়া ইজা গাফালা ওয়াছ ওয়াছা। (আল-হাদিস, বুখারী শরীফ)
"বনী আদমের অর্থাৎ মানুষের ক্বালবের উপরে শয়তান সাওয়ার হয়ে ( ক্বালবটিকে জালে মাছ জড়ানোর মত জড়িয়ে) আছে। যখন মানুষ আল্লাহর জেকের( ঐ ক্বালবে) করে শয়তান ভিমরি খেয়ে পড়ে যায়। ( তার ক্বালব জাগ্রত হয়, সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর আরশও জাগ্রত হয়। তার নামাজে মাওলার সাথে দিদার হয়ে যায়। আর যখন ঐ ক্বালবে আল্লাহর জেকের থাকে না, যখন মানুষ গাফেল হয়, শয়তান তাকে ওয়াছওয়াছা ( কুমন্ত্রণা) দিয়ে গুনাহের কাজে লিপ্ত করে দেয়। ( নামাজে মনে নানা কুচিন্তা ভাবনা ঢুকিয়ে নামাজীকে আল্লাহর দিদার থেকে মাহরুম করে রাখে) "।
বলা বাহুল্য ক্বালবই হচ্ছে আল্লাহ্ পাকের আরশ। হাদিস শরীফে অন্যত্র আছেঃ
ছুয়িলা আন্ রাসূলিল্লাহি ( সাঃ) আইনা বাইতাল্লাহি ক্কালা রাসূলুল্লাহি (সাঃ) ফি কুলুবিল মু'মিনিন। ( আল হাদিস)
" রাসূলুল্লাহ্ ( সাঃ) - কে প্রশ্ন করা হয়েছিল আল্লাহর বাড়ী কোথায়? অর্থাৎ তিনি কোথায় থাকেন? তিনি উত্তর দিলেন, মোমিনের ক্বালবের ভিতরে ( আল্লাহর বাড়ী)" এ মর্মে আল্লাহ্ পাকও ফরমায়েছেন-
ওয়াফি- আনফুছিকুম আফালা তুবছিরুন। ( আল- কোরআন, সূরা জারিয়াত ২১)
অর্থাৎ" আমি তোমার আনফাসের ভিতরে আছি ( সিনার মধ্যে) কেন তুমি আমাকে দেখ না?"
দেহের ভিতরে আনফাছ তো বিরাট স্থান, আল্লাহ্ ঠিক কোথায় আছেন, কে আপনাকে চিনিয়ে দিবে? আল্লাহ্ পাক কোথায় আছেন, দেহের ভিতরে সঠিক করে যে জেনেছে, কষ্ট ও রিয়াজাত করে তার নিকট থেকেই সত্য জানতে হবে। এ স্থান যিনি নির্দেশ করে দিতে পারেন, তাকেই পীর বা মোর্শেদ বলা হয়। যিনি, মাবুদের সঠিক সন্ধান কোথায় মিলে (যদিও তিনি মানুষের ভেতর থাকেন) দিতে পারেন, তাকেই পীর বলে। পীর বা ওস্তাদ ছাড়া এটা কিছুতেই সম্ভব নয়।
হাদিস শরীফে অন্যত্র আছে-
লিকুল্লি শাইয়িন ছিকালাতুন ওয়া ছিকালাতুল ক্কুলুবি জিকরুল্লাহ্। ( আল- হাদিস)
অর্থাৎ" প্রতিটি জিনিস পরিস্কার করার রেত আছে, ক্বালব পরিস্কার করার রেত হচ্ছে আল্লাহর জেকের"।
হাদিস শরীফ শুনতে সহজ সরল কিন্ত আভ্যন্তরীণ মাহাত্ম গভীর ভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে যে, এটি খুবই একটি কঠিন কাজ।
একটি লোহায় মরিচা ধরলে তার জং পরিস্কার করার জন্য একটি রেতের প্রয়োজন। শুধু ঘষা দিলেই জং ছাফ হয় কিন্ত একটি করাতে জং বা মরিচা ধরলে ক' জনে তা পরিস্কার করে করাতটাকে ধারালো করতে পারে? করাতের মরিচা পরিস্কার করে তাকে ধারালো করতে হলে সোজাসুজি রেতে তা সম্ভব হবেনা। ত্রিকোণ বিশিষ্ট রেত লাগবে এবং তা একজন মিস্ত্রীর নিকট থেকে চালনা শিখতে হবে। ক্বালবটি কি এত সহজ একটি ফালতু লোহার মত হয়ে গেল নাকি যার ভিতর স্বয়ং মাওলা পাক অবস্থান করছেন? ত্রিকোণ বিশিষ্ট রেত যেমন ওস্তাদের নিকট থেকে শিক্ষা না করে চালনা করলে করাতের দাঁত নষ্ট হয়ে যায় অর্থাৎ ঈস্পিত ফল লাভ হয়না ঐ রকম আল্লাহর জিকির দিয়ে ক্বালব ছাফ করা শিক্ষা না করে যেন তেন জিকির করলে ক্বালব তথা আল্লাহর আরশ জাগ্রত হয়না। নামাজেও দিদার হয়না। এমন কি ওস্তাদের নিকট থেকে উত্তম রুপে শিক্ষা বিধান না করে যেন তেন করে জেকের করলে মানুষ পাগলও হয়ে যেতে পারে। ভাল জিনিস ভালভাবে পরিচালনা করতে না জানলে তার বিপরীত ফল ঐ ভালর অনুপাতে মন্দের দিকেও ঐ রকম মন্দ হতে পারে। এ মর্মেই একজন হক্কানী খাঁটি পীরের নিকট থেকে ক্বালবের মরিচা পরিস্কার করার কায়দা কানুন উত্তম রুপে শিক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন পড়ে। এজন্যই আল্লাহ্ পাক বলেন,( ওয়াত্তাবিয়ি) অর্থাৎ সেই মানুষকে পুংখানুপুঙ্খ রুপে অনুসরন কর, মান্য কর। আল্লাহর হুকুমটি কি খেল তামাশা হল নাকি যে মানুষের কাছে যাবার প্রয়োজন হল না। এ মর্মে আরও বলেন-
কু- নু- মাআসসাদিকিন। ( সূরা তাওবাঃ১১৯)
অর্থাৎ" তোমরা একজন সাদিক লোকের সঙ্গে লেগে থাক"।