পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বেলুন বাঁশি - প্রথম পর্ব

আজ সকালে ছেলে-মেয়েরা সবাই তাড়াতাড়ি করে মেলায় চলে এসেছে। মেলা শেষ হতে আর বেশি দিন বাকী নেই। তাই যারা বাদ পড়েছিল কেনাকাটায়, তারা আজ খুব সকাল সকাল চলে এসেছে। সাথে ছেলে-মেয়েদের হৈ-হুল্লোড় , চিৎকার চেঁচামেঁচিতে যেন মৃতবৎ মেলাটি প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

দোকানীরা ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে। শেষ সময়ে যাতে পুঁজি নিয়ে ঘরে ফিরে যেতে পারে, তারই একটা প্রতিযোগীতা চলছে। সকল দোকানদাররা তাদের জিনিস পত্রের দাম কমিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে তৈজস জিনিস পত্রের দাম কম হওয়ায় গৃহিণীরা ব্যস্ত হয়ে তাড়াতাড়ি তাদের পছন্দ মাফিক জিনিস কিনছে। কিন্তু একটা জিনিসের দাম কিছুতেই কমছে না। সেটা হলোঃ বেলুন বাঁশি। একটা বাঁশের বাঁশি ও একটি বেলুন একত্র করে বানানো হয়েছে। বাঁশিটিতে ফুঁ দিয়ে ফুলিয়ে দিলেই বাঁশিটি বাজতে শুরু করে। বাশিটি আহামরি কিছুই নয়। কিন্তু সেই বাঁশিটি কেনার জন্যও মনা পাগলাও ছেলে-মেয়েদের সাথে বাঁশিওয়ালার সাথে দাঁড়িয়ে আছে। সেও একটি বাঁশি কিনতে চাইছে। কিন্তু বাঁশিওয়ালার এককথা। দাম দশ ট্যাকা। এক ট্যাকাও কম না।
মনা বাঁশিওয়ালাকে লক্ষ্য করে বলছেঃ

-বাই, দুই ট্যাকা কম রাখেন। এই ধরেন আট ট্যাকা...

-কইলাম না, একট্যাকাও কম অইবো না....

-দেননারে বাই...এই আপনের পায়ে দরি...বাই বাই দেন...

-অই মিয়া, তুমি এই বাঁশি দিয়া কি করব্যা...

-হেইড্যা জাননের কাম নাই।

মনার অনেক পীড়াপিড়িতে বাধ্য হয়েই দোকানী মনার কাছে একটি বেলুন বাঁশি বিক্রি করে। বাঁশিটি হাতে পেয়ে মনা এতই খুশি হয়ে গেছে যে ভাষায় প্রকাশ করা যাচ্ছে না....তার এই উল্লাসের কারণ কি? কেউ তা ধরতে পারছে না। আর মনাও সেটা বলতে চাচ্ছে না...
বাঁশিটি পেয়ে মনা সেটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। দেখছে আর ফুঁ দিয়ে বেলুনটি ফুঁলিয়ে বাঁশিটি বাজাচ্ছে। বাঁশিটি বাজছে আর মনা হাসছে। তার হাসি আর কিছুতেই থামতে চাচ্ছে না...হাসির থমকে সে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। একটা মানুষ বাঁশি বাজাচ্ছে আর সেই বাঁশিটি বাজার সাথে সাথেই সে হাসছে আর গড়াগড়ি খাচ্ছে - এমন অভুতপুর্ব দৃশ্যটি দেখে সকলেই মনাকে ঘিরে ধরেছে। মনা তাদের দেখে বিরক্ত হয়ে বলছেঃ

-কি বাইরা, খাড়াইয়্যা খাড়াইয়্যা কি দেকতাছো?

কিন্তু কেউ কোন কথা বলছে না। সকলেই কেমন অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনা সেখান থেকে বের হয়েই একটা টং ঘরে ঢুকলো। তারপর সেখানে বসে বাঁশিটি খুললো। দেখলো একটা বাঁশের কন্ঞ্চি দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। বাশের চিকন কন্ঞ্চিটি কেটে একটা পাতলা আবরণ তুলে নেয়া হয়েছে এবং সেটি সেখানেই লেগে আছে। আরেকটি বাঁশের মোটা কন্ঞ্চি গোল করে কেটে সেটার সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে। বাতাস যাতে বেরিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য কাগজ দিয়ে পেঁচিয়ে দেয়া হয়েছে। মোটা বাঁশের কন্ঞ্চির শেষ প্রান্তে একটা বেলুন বেঁধে দেয়া হয়েছে। ছোট চিকন বাঁশের কন্ঞ্চিটিতে ফুঁ দিয়ে বেলুনটি ফুলালে যতক্ষণ ফুঁ দেয়া বাতাস থাকে, ততক্ষণ বাঁশিটি বাজতে থাকে। এটা এমন কিছু আহমরি কিছু নয়। সবাই তা দেখেছে। কিন্তু মনার দেখা আর তাদের দেখার মধ্যে একটা বিশাল ব্যবধান আছে। সে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে...সেটা দেখে মোবারক মামা তাকে জিগ্যাসা করে...

-বাই, এমুন কইর‌্যা তাকাইয়্যা তাকাইয়্যা কি দেকতাছেন....

-কি দেকতাছি, হেইডা তোমাগো কাছে কইলে মিয়া এই বাঁশির লিগ্গ্যা দেওয়ানা অইয়্যা যাইব্যা গা...

-কন কি বাই?

-ঠিকই কইতাছি।

-তয় হুনি দেহি আপনের বয়ান....

-মিয়া, বয়ান হুননের আগে চা খাওয়াও আর সিগারেট দেও...চা খাইতে খাইতে কই...

মোবারক মামা মনাকে চা এবং সিগারেট দেয়। মনা চায়ে চুমুক দিয়ে বলতে থাকে...

(চলবে)