পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বেলুন বাঁশি - দ্বিতীয় পর্ব


(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)
-ঐ মিয়া, তুমি কি মসনবী শরীফ পড়ছো? মনা মোবারকের দিকে তাকিয়ে বললো..
মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী (রহঃ) তার মসনবী শরীফের প্রথমেই কইছেঃ
বিশনু আজ না এচু হেকাইযে মিকুনাদ
ওয়াজ জুদাই হা শিকাইয়েত মীকুনাদ।
 অর্থঃ মাওলানা রুমী (রহঃ) বলেনঃ বাঁশের বাঁশি যখন বাজে,তখন তোমরা মন দিয়ে শোনো, সে কি বলে? সে তার বিরহ বেদনায় অনুতপ্ত হয়ে ক্রন্দন করছে।
এই দেহডা অইতাছে বাঁশের বাঁশি। এই দেহডারে মাওলানা বাঁশের বাঁশির সাথে তুলনা করছে। বাঁশের ঝাড় থিক্ক্যা বাঁশটা কাইট্র্যা আননের ফলে ঐ কাডা বাঁশটা যেইডা দিয়া বাঁশি বানাইছে,হেইডা তার আগের জায়গায় মানে অইলো ঐ বাঁশ ঝাড়ে যাওনের লিগ্গ্যা কানতাছে।

-এইহানে কান্দনের কি অইলো?

-ধুর ব্যাটা..তুই বুঝলে তো কামই অইছিলো। বাঁশের ঝাড় মানে অইলো আলমে অারওয়াহ। যেহানে সমস্ত রুহগুলিরে আল্লাহ্ বানাইয়্যা রাকছিল..হেই হান থিক্ক্যা এই জমিনে আওনের ফলে অর মনে যে ব্যাথা বেদনা, হেইডা মনে কইর‌্যাই কান্দে...বুছবার পারছো?

-এইডা তো মাউলানা সাহেবের কতা...আপনে যে বেলুন বাঁশির কতা কইতাছিলেন,হেঁইডা কন হুনি...

-হুন। আমাগো দেহের মইধ্যে বাতাস ধইর‌্যা রাখনের লিগা যেইডা আল্লাহয় বানাইছে, হেইডারে আমি বেলুন দিয়া বুঝাইছি। আর ছোড এই যে কন্ঞ্চিটা দেকবার পারতাস..এইডা অইলো গিয়া গলা....আর এই যে বড় বাঁশের মোডা অংশডা দেকতাছস, যেইডা দিয়া বাতাস বাইর অইলে বাজে, হেইডা অইলো হলকুম...এই যে গলার মোডা অংশডা।
আল্লাহয় যখন রুহ ফুঁইক্যা দেয়, তহন একটা বাতাস আদমের দেহতনে ঢূইক্ক্যা যায় নাক দিয়া.....এইডা অইলো আধ্যাত্মিক বাতাস। আল্লাহর এই ফুঁ দেওনের ফলে আদম চৈতন্য পায়। মানে অইলো আদম জাইগ্গ্যা যায়..হেই বাতাসটা হেইহানেই বইয়্যাই হেয় দেহরাজ্যে রাজত্ব করতাছে...এই যে ডুব ডুব শব্দ হুনতাছোস, এইডাই অইলো হেইডা। বেলুন বাঁশি....হের বাঁশি হেয় যেমতে মন চায়, হেমতে বাঁজায়....অামরা খালি হুনি....

আমার হৃদয় বীণায় কেমন করে বাজাও তুমি সুর
আমি শুনি সেই সুর, বড় সুমধুর।।
তোমার সুরে মাতওয়ারা এই জাহান, করে এই আহব্বান
লা হু আল্লাহু, ওয়াহ্ দাহু লা শারিকা লাহু।।

এইডা অইলো হেইডা, যেইডারে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন নাফাক্ তু ফি মির রুহি কয়....

মনার কথা শুনে মোবারক কি বুঝলো কে জানে, সে বিকট একটা চিৎকার দিয়ে কান্না কাটি শুরু করে দিল। ঘটনার আকষ্মিকতায় মনা হতভম্ব হয়ে যায়...সে কি বলবে...কিছুই বুঝতে পারছে না....সে কেবল অাউড়াচ্ছেঃ

ছিনাহ খাহাম শরাহ অাজ ফেরাক
তা বগুইয়াম শরহে দরদে ইশতিয়াক।
অর্থঃ অামার বিচ্ছেদের ব্যথা অনুভব করার জন্য ভুক্তভুগী অন্তর দরকার। পাষাণ অন্তঃকরণ আমার যাতনা বুঝতে পারবে না...তাই যে অন্তঃকরণ বিচ্ছেদের ব্যথায় টুকরো টুকরো হয়ে গেছে, সেই অন্তঃকরণ পেলেই আমার ব্যথা ব্যক্ত করিবো। অন্যথায় আমার রোদন বৃথা যাবে।