পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বাবার ডায়রী-প্রথম পর্ব


এ্যাই ছেলে, এ্যাই... ইউ, ইউ স্ট্যাডআপ...দাঁড়াও বলছি....

মজিদ স্যার হুংন্কার দিয়ে নিশাদের দিকে তাকালো। তারপর ইশারা করে তাকে বেন্ঞ্চ এর উপর উঠে দাঁড়াতে বললো। মজিদ স্যারকে চেনে না এমন ছাত্র এই স্কুলে খুবই কম আছে। মজিদ স্যার খুব বদরাগী মানুষ। কিন্তু শিক্ষক হিসেবে তিনি বরাবরই ভালো। স্কুুলের লেখা পড়া ঠিক মতো হচ্ছে কি-না, সেটা পরিদর্শন করতে এসে সোবহান সাহেবও মজিদ স্যারের ব্যাপক প্রশংসা করলেন। সেই মজিদ স্যারের ক্লাসে নিশাদের মতো একটা পুছকে ছেলে পড়া শোনা করবে না, তা-কি হয়? তিনি নিশাদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ

-বল কি পড়ানো হচ্ছিল...

-স্যার ভুগোল। 

-তাতো বুঝলাম। কিন্তু ভুগোলের কোন্ অধ্যায়টি পড়ানো হচ্ছিল? সেটা বল্..

নিশাদ আমতা অামতা করে বললোঃ

-উত্তর আমেরিকা...

আমি অবাক না হয়ে পারলাম না। নিশাদকে দেখলাম একটা ডায়েরী বের করে পড়ছে। স্যার কি পড়াচ্ছে সেই দিকে তার খেয়ালও ছিল না। অথচ কি আশ্চর্য্যের কথা, নিশাদ নির্ভুলভাবে সঠিক উত্তরটা দিতে পারলো...ও কি তাহলে ডায়েরী পড়ার ফাঁকে ফাঁকে স্যারের পড়ার দিকেও মন দিয়েছিল...একসাথে দুইটা....টু ইন ওয়ান...গুড, ভেরী গুড.....মনে মনে বললাম। আমি নিশাদকে মানা করেছিলাম। তুই এখন ওটা পড়িস না। ও আমার কোন বারণই শুনলো না। ও ডায়েরীটা বের করে পড়া চালিয়ে যেতে লাগলো। আর ঠিক সেই সময় স্যার দেখে ফেললেন। ইস্ স্যারটা যে কি? কোন মতেই স্যারের চোখকে ফাঁকি দেয়া যায় না। ঠিকই দেখে ফেলে...
স্যার নিশাদের দিতে তাকিয়ে বললেনঃ

-হুম...তা বাছাধন, তোর হাতে ওটা কি?

-স্যার ডায়েরী...

-ডায়েরী?....

ডায়েরীর কথা শুনে স্যার যেন রীতিমতো ভুত দেখার মতো চমকে উঠলেন। তিনি ভেবেছিলেন, ভুগোলের বই। কিন্ত্তু ডায়েরী? তিনি বললেনঃ

-এই দিকে নিয়ে আয়...দেখি তুই পড়া বাদ দিয়ে কি ডায়েরী পড়ছিস?
স্যারের তর্জন-গর্জন শুনে নিশাদ ডায়েরীটা হাতে নিয়ে মজিদ স্যাারের দিকে গেল। ক্লাসের সকল ছেলেরা অবাক করা সেই ডায়েরীটা দেখতে পেল। কিন্তু ডায়েরীর মধ্যে কি লেখা আছে...সেটা জানা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া ডায়েরীটা কার....তাও জানা সম্ভব হয়নি। কেন সে পড়া বাদ দিয়ে ডায়েরী পড়ছিল...সেটাও রহস্য রয়ে গেল। নিশাদ ভীরু পদক্ষেপে ধীরে ধীরে মজিদ স্যারের দিকে আগাতে লাগলো। পুরো ক্লাসে তখন পিন পতন নীরবতা....এক সময় নিশাদ মজিদ স্যারের কাছে ডায়েরীটা দিল।

ডায়েরীটা হাতে নিয়ে মজিদ স্যার বেশ অবাক হলেন। তিনি পুরো ডায়েরীটা উল্টে পাল্টে দেখলেন। তারপর গম্ভীর হয়ে জিগ্যোস করলেনঃ

-কার ডায়েরী?

-স্যার অামার বাবার ডায়েরী।

-ডায়েরীটা আমার কাছেই থাক। ক্লাস শেষ হলে পাবি। এখন যা....

নিশাদ কিছু না বলে মাথা নিচু করে তার জায়গায় বসে পড়লো। তারপর ভুগোল বই বের করে পাঠ্যসুচীটা দেখতে লাগলো। ক্লাসে কেউ কোন কথা বলছে না...অধিকাংশ ছাত্ররা ধরেই নিয়ে ছিল, আজকে নিশাদের কপালে খারাপিই আছে। কিন্তু সেটা না দেখতে পেয়ে অনেকেই বেশ ঘাবড়ে গেল। তারা লক্ষ্য করলো-মজিদ স্যার নিজেই সেই ডায়েরীটা পড়ছেন। বেশ মনোযোগ দিয়েই পড়ছেন।

(ক্রমশঃ)