(পূর্ব প্রকাশের পর)
আমি বিছানা ছেড়ে উঠলাম। মনে মনে ভাবলাম যেহেতু আজ আর
স্কুলে যাওয়া হচ্ছে না, তাই আজকে সারাটা দিন মনা পাগলার বিষয়টা নিয়ে ভাববো। তাই
প্রাতঃরাশ সেরে হাত-মুখ ধুয়ে জামাটা গায়ে দিলাম। তারপর সকালের নাস্তাটা করার জন্য
বেরিয়ে পড়লাম। হোটেলে ঢুকে নাস্তা সেরে বের হয়ে এলাম। সিগারেট কিনে রুমে ফিরলাম।
এবার নিঃচিন্তে চিন্তা করা যাবে।কিন্ত্তু কোথা থেকে শুরু করবো বুঝতে পারছি না।
বারান্দায় বসে সিগারেট ধরিয়ে চিন্ত্তা করলাম যেহেতু মনা বলেছে বিষয়টি জাগতিক নয়
আধ্যাত্মিক। তাই আমি এ বিষয়টার প্রতিই আমার দৃষ্টি নিবন্ধ করলাম। কাগজ কলম বের করে
লেখা শুরু করলাম। হেডিং দিলাম আধ্যাত্মিকতা ও এর পারিপাশ্বিক বিষয়াবলী।
আধ্যাত্মিকতা
ও এর পারিপাশ্বিক বিষয়াবলী
আধ্যাত্মিকতা কি? আধ্যাত্মিকতা হচ্ছে আত্মা লব্দজ্ঞান।
আত্মা কি? আত্মা হচ্ছে পন্ঞ্চভুতের সংমিশ্রণে গঠিত দেহ। পন্ঞ্চভুতের উপাদান কি? ক্ষিতি,
অপ, তেজ মরুৎ, বোম। মাটি, পানি, আগুণ, বাতাস, আকাশ। পন্ঞ্চভুতের মুল উপাদান হচ্ছে
চিৎ পরমাণু। চিৎ পরমাণু হচ্ছে ঈশ্বরের অংশ। ঈশ্ ধাতু হতে ঈশ্বর। ঈশ্ হচ্ছে শক্তি।
শক্তির মুল হচ্ছে আলো বা নুর। সুতরাং নুরময় পন্ঞ্চ উপাদান দ্বারাই যে দেহ গঠিত তা
অসংখ্য নুরের সমষ্টি ব্যতীত অন্য কিছু নয়। আর এজন্যই বলা হয় আল্লাহ সর্বশক্তিমান। সমগ্র
শক্তির মুলাধার। মুল+আধার। আর এই দেহই হচ্ছে নুরে নুরময় জ্ঞানের পুণ্যভুমি। এই
ভুমিতেই সেই সর্বশক্তিমানের বাস। কিভাবে? কারণ আল্লাহ পাক যখন দেহ সৃষ্টি করেছেন
সেই দেহে রুহ নামক একটি উপাদানও দিয়ে দিয়েছেন। রুহ্ হচ্ছে অতিচেতনাময় সূক্ষ্মদেহ
বিশিষ্ট। যার আকার একটি চুলের সহস্রভাগের একভাগ। এটি এতো সূক্ষ্ম যে একে দেখা
দুষ্কর। কিন্ত্তু অনুভব করা যায়। যেমনঃ পন্ঞ্চ উপাদান দ্বারা যে দেহ তৈরী করা হয়
সেই একই উপাদান দ্বারা যদি মুর্তি তৈরী করা হয় সেটি চৈতন্য প্রাপ্ত হয় না। কেন?
কারণ সেটির মধ্যে রুহ নামক অতিচেতন চিৎ পরমাণু তথা স্বয়ং রবের হুকুম নেই। যেমনঃ
বলা হয়েছে-কুল্লির রুহ মিন আমরি রাব্বি।
তার মানে কি দাঁড়ালো? তার মানে দাঁড়ালো – মানবদেহ তথা
আদম আর কেউ নন। স্বয়ং আল্লাহ পাকেরই কৌশলে সৃষ্টি একটি রহস্যময় অথচ দৃশ্যমান
বাস্তবতার প্রতীক। এই আদমের মধ্যেই পুং এবং স্ত্রী বিদ্যমান। কিভাবে?
এই দেহ তৈরী হয় দুটি ভিন্ন উপাদান তথা পুরুষ এবং নারীর
মৈথুনাত্মক মিলন ক্রিয়ায়। এক পুরুষ এবং এক নারী সংযোগ তথা সৃষ্টি। আবার সেই
সৃষ্টির মাঝেই একক সৃষ্টি। তার মানে কি দাঁড়ালো? এক + এক = এক । মহাসৃষ্টির কৌশলী
আল্লাহপাক হয়তো এ কারণেই বলেছেনঃ হাল আতা আলাল ইনসানি হীনুমম্মিনাদ্দাহরি লাম
ইয়াকুম শাইয়াম মাযকুরা। সেই সৃষ্টিটা কিরুপঃ “লাকাদ খালাকনাল ইনসানা ফি আহসানে
তাকবীম”। সেই আহসানে তাকবীমে যখন রুহ প্রবেশ করানো হলো অর্থাৎ নাফাকতু ফি মির রুহী
তখন আদম একটা হাঁচি দিল এবং বললোঃ আলহামদুলিল্লাহ। জবাবে রবের তরফ থেকে বলা হলোঃ
ইয়ারহামুকাল্লাহ।
পর্যালোচনাঃ আদম সৃষ্টির রহস্যটা পবিত্র কোরআনে
স্পষ্টভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্ত্তু হাওয়ার ব্যাপারে সেরুপ কিছু বলা হয়নি। বলা
হয়েছে তিনি সৃষ্টি করেন নারী-পুরুষ জোড়ায় জোড়ায়। আদমের জাওজ হচ্ছে হাওয়া। সাধারণ ভাষায়
হাওয়া বলতে আমরা বায়ুকেই বুঝে থাকি। কিন্ত্তু সেই বায়ুকে আমরা উপলব্দি করতে পারি
তথা এর যে স্পর্শগুণ তা অনুভব করতে পারি। পরিপুর্ণ মানবাকারে তা পাই না। অথচ
প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে তার রুপ দেওয়া হয়েছে দেবতারুপে। পন্ঞ্চভুতের সব ভুত তথা আত্মাকে
দেবত্বোরুপ দেয়া হয়েছে। কোন মানবকে অতি মানবে তথা দেবত্ব আরোপ করাকে বলা হয় নরোত্তরোপ
করা বা নরমরফিইজম। বলা হয়- ইসলাম এটা স্বীকার করে না। অথচ আদম এবং তার জাওজ তথা
জোড়া যা আদমের বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে সেটাকে স্বীকার করতে দ্বিধা
নেই। কারণটা কি? কারণ হচ্ছেঃ বস্তুর স্বরুপ উপস্থিতি। স্বরুপ উপস্থিতি না থাকলে
কল্পনায় তার বিভিন্নরুপ অংকিত হতে থাকে। অংকিত কল্পরুপ বাস্তবতার সাথে না মিললে
বিশ্বাসে আঘাত আসতে পারে। একটা প্রচন্ড আঘাত খেতে পারে। এটা হওয়াই কি স্বাভাবিক
নয়?
জগতে ভালো এবং মন্দ এ দুটো রুপ দেয়া হয়েছে। এখান থেকে
রেজান্ট আসবে একটা। হয় ভালো নয়তো মন্দ। ১+১=১। সুত্রটা স্বাভাবিক। সমগ্র
শক্তিজগতেরও দুটো রুপ রয়েছে। শুভ শক্তি এবং অশুভ শক্তি। আহুরা-মাজদা। শুভ শক্তিকে
গ্রহণ করে ফলাফল শুভ হয়। এবং অশুভ শক্তিকে গ্রহণ করলে ফলাফল অশুভ হয়। প্রশ্ন হলো এ
অশুভ শক্তির মুল কি? বলা হয়েছেঃ “ওয়া নাফসিও ওয়ামা সাও ওয়াহা ফা আলহামাহা ফুজুরাহা
ওয়া তাক্কওয়াহা”[সুরা শামস ৭-৮]। নফস এবং উহাকে সুগঠিতরুপে সৃষ্টিকারীর শপথ, যিনি
তাদের অন্তরে ভাল এবং মন্দ ঢেলে দিয়েছেন। অর্থাৎ মহান সৃষ্টিকর্তা নফসের মধ্যেই
ভালো এবং মন্দ মিশ্রিত করে দিয়েছেন। এখানেও ভালো=১ এবং মন্দ=১। সৃষ্টি=১। সুত্রটা
দাঁড়ালোঃ ১+১=১। ফল ভালো হলে রব সেই ভালো নফসেরও একটা নাম দিয়েছেন এবং তাকে আহ্বান
করেছেন এভাবেঃ “ইয়া আইয়্যুতুহান্নাফসুল মুতমাইন্না ইরজিয়ী ইলা রাব্বিকি
রাদ্বিইয়াতাম্মারদিয়্যা, ফাদখুলী ফী ঈবাদী ওয়াদখুলী জান্নাতী”। হে প্রশান্ত আত্মা!
স্বীয় প্রভুর কাছে প্রত্যাবর্তন কর। তুমিও তার উপর সন্ত্তুষ্ট এবং তিনিও তোমার ওপর
সন্ত্তুষ্ট। সুতরাং আমার বান্দাদের মাঝে প্রবেশ কর এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর[সুরা
ফজর আয়াতঃ ২৭-২৮]। আর অশুভ শক্তিতে কার্যরত নফসকে লক্ষ্য করে স্বীয় রব বলছেনঃ “ওয়া
লাও তারা ইযিযলিমুনা ফী গামাতিল মাওতি ওয়ালমালায়িকাতু বাসিতু আইদীহিম আখরিজু
আনফুসাকুম”।
এ পর্যন্ত লিখে মনে মনে প্রশান্ত হলাম এই ভেবে যে হয়তো
আমি এর সমাধানটা খুঁজে পেয়েছি। সুত্রটার মুলভাব ধরতে পেরেছি। দেখাই যাক না কি হয়?
এবার মনাকে পাগলটাকে বলতে পারবো-এই নাও তোমার উত্তর। তখন মনা পাগলা কি বলে? সেটা
শোনার অপেক্ষায় থাকবো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। বারান্দায় বসে সিগারেট খাবো। চায়েরও
বড্ড নেশা পেয়েছে। তাই রান্না ঘরে যেয়ে চায়ের পানি বসিয়ে বারান্দায় আসবো ঠিক সেই
মুহুর্তে ঘটে গেল এক অত্যাশ্চর্য্য ঘটনা।
চলবে।