পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ভাবনার ডানা-পন্ঞ্চম পর্ব


(পূর্ব প্রকাশের পর)
ঘুমের মাঝে কি না জানি না আমি দেখতে পেলাম আমি মীন আকারে ভেসে বেড়াচ্ছি। কোটি কোটি মীন সাঁতার কাটছে। সবার মাঝে একটা প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে গেছে। কে কার আগে সেই লক্ষ্যবস্তুটাতে পৌঁছাতে পারবে? লক্ষ্যবস্তুটা দুর হতে সুর্যের আলোক ঝলকানির মতো মনে হচ্ছে। কখনো আমি আগে যাচ্ছি কখনো অন্য কেউ। মারামারি কাটাকাটিতে সবাই ব্যস্ত সময় পার করছে। লক্ষ্য সবার একটাই। ঐ আলোক পিন্ডের মধ্যে আশ্রয় নেওয়া। কিন্ত্তু আমি যেন দৃঢ় প্রতীজ্ঞ। আমার আগে আমি কাউকে সেটা স্পর্শ করতে দেব না। সবাইকে ঝটকা মেরে আমি এগিয়ে চলছি। এক সময় আমি সেটা স্পর্শ করতে পেরেছি। আমার সহযোদ্ধারা সবাই কে কোথায় হারিয়ে গেল জানি না। আমি প্রবেশ করলাম একটা সুর্য দীপ্ত আলোক পিন্ডে। মনে হচ্ছে সেটাই আমার স্থান। আমি সেখানে চল্লিশ দিন অবস্থান করলাম। এরপর আমার আকার আবার পরিবর্তিত হচ্ছে। দেখলাম আমি থেকে আরেক আমির সৃষ্টি হলো। আমি এক হতে দুইয়ে পরিবর্তিত হলাম। দুই হতে চারে। চার হতে আটে। এভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছি। বৃদ্ধি পেতে পেতে এক সময় আমি পূর্ণ হলাম। তারপর এ ধরাধামে এলাম।
কি দেখলাম জানি না। আমার ঘুম ভেংগে গেল। আমি উঠে বসলাম। বারান্দায় গেলাম। চারদিকে সুসান নীরবতা। মাঝে মাঝে দু চারটা কুকুরের ডাক শোনা যেতে লাগলো। বৃষ্টি হওয়ায় আবহাওয়া খানিকটা শীতল। আমি আবার রুমে ঢুকে সিগারেট আনলাম। তারপর আবার বারান্দায় গেলাম। সিগারেট ধরালাম। মনের মধ্যে আবারো উকি দিচ্ছে প্রশ্ন? আবার সেই ভাবনার বিষয়।
আচ্ছা আমি যে মীন রুপে ছিলাম তখন আমাকে সাঁতার কাটার জন্য শক্তিটা কে দিয়েছে? কে আমাকে প্রেরণা দিয়েছে সেই লক্ষ্যবস্তুতে যাওয়ার? কে আমাকে বিভাজন ঘটিয়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হতে পূর্ণাংগ রুপ দিয়েছে? শুনেছি লোকমুখে বাউলগণ মীনকেই ঈশ্বর বলে থাকেন। যদি তাই হয় তাহলেতো দেখা যায় সেই ঈশ্বরের সৃষ্টির উপকরণ হচ্ছে খাদ্য। খাদ্যের কারণেই বীর্য তৈরী হয়। তাহলে এখানে রিজিকের ভুমিকা অপরিসীম। কিন্ত্তু সেই মীনের মধ্যে আমার যে খুবী ছিল তাতো অস্বীকার করার কোন কারণই দেখছি না। আবার মীনের শক্তিকে সেটাকেওতো অস্বীকার করতে পারছি না। এতো দেখছি মহা ঝামেলা।
চিন্তা ভাবনার কারণে অঘুমোই রয়ে গেছি। মনে হচ্ছে রাতে আর ঘুম হবে না। আবার ঘুমেরও প্রয়োজন। না ঘুমালেতো সকালে স্কুলে যেতে পারবো না। ছেলে-মেয়েদের ক্লাসও করাতে পারবো না। সিগারেটটা শেষ করে আবারো ঘুমাতে গেলাম। দেখি ঘুম আসে কি-না?
কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানিনা। জেগে দেখি রুমে কেউ নেই। সবাই যার যার কর্মস্থানে চলে গেছে। শুধু আমি একাই রয়ে গেছি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এগারোটা বেজে গেছে। আজ মনে হয় স্কুলে আর যাওয়া হবে না।
(চলবে)