পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

রহিম সাহেবের কুরবাণী ও একটি প্রশ্ন - তৃতীয় পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর)

রহিম সাহেব একটি ট্রেতে চা আর বিস্কুট নিয়ে আসলেন। টেবিলের উপর তা রেখে সাত্তার ভাইকে বললেন

-নিন। শুরু করুন। বলেই তিনি বিস্কুটের প্লেটটি সামনে এগিয়ে ধরলেন।

সাত্তার সাহেব বিস্কুট  খেতে খেতে বললেনঃ

-শুনুন ভাই, আল্লাহ পাক সুরা বাকারার ৬৭ নং আয়াতে বলছেনঃ

 "এবং যখন মুসা তাহার কাওমের জন্য বলিলেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদিগকে আদেশ দিতেছেন যেন তোমরা একটি বাকারা জবেহ কর। তাহারা বলিলঃ আপনি কি আমাদিগকে উপহাস্যরুপে গ্রহণ করিতেছেন? তিনি বলিলেনঃ আমি আল্লাহর সংগে আশ্রয় গ্রহণ করি যেন মুর্খগণের অর্ন্তভুক্ত না হই "।
ব্যাখ্যাঃ বাকারা = 'বে' অর্থ সহিত, 'ক্কাফ' অর্থ মহাশক্তি, 'রে' অর্থ রাজি। সুতরাং বাকারা অর্থ মহাশক্তির সহিত যে রাজি হইয়া আছে। সম্যক গুরু একজন সম্মুখে মহা শক্তিরুপে বিরাজমান। গুরু হইতে সেই শক্তি অর্জন করার বিষয়ে যে শিষ্য রাজি হইয়া থাকে তাহাকেই শুধু কোরবাণী করা যাইতে পারে। অর্থাৎ সত্যের সেবায় নিয়োজিত করার যোগ্য করিয়া গড়িয়া তোলা যাইতে পারে। এই অর্থে মুসা নবীর বারংবার একজন শিষ্যকেই একটি গাভী (বাকারা) বলিতেছেন। এই গাভী অবশ্য একজন যুবক যে এখনও বীর্যপাত করে নাই এবং সংসারের ঘানি টানে নাই। তাই সে সবার আকর্ষণীয়।
ইব্রাহীম (আঃ) যেমন ইসমাইলকে তাহার মনের মোহ হইতে কোরবাণি করিয়াছিলেন এখানেও ঠিক সেইভাবেই শিষ্যদের মন হইতে জবেহ করিয়া মুসা নবীকে দান করার জন্য আদেশ করিতেছেন। অবশেষে রুপক কথাটি সঠিক বুঝিয়া লইবার পরও কেহই উহা পালন করে নাই এবং একটা চুতষ্পদী গাভী "জবেহ" এর নামে হত্যা করিল। এ কারণেই মুসা নবীর রব বলিলেন যে, তাহারা কেহই জবেহ করে নাই।

কোরআন বলিতেছেঃ " ফাক্কতুলু আনফুসাকুম জালিকা খাইরুল্লাহকুম ইনকুনতুম তা'লামুন "। অর্থাৎ অতএব তোমাদের নফসের কোরবানি (কতল) কর ইহা তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা জ্ঞানী হইয়া থাক। প্রত্যেক মানুষকে তাহার নফসের কোরবানি আদেশ দিতেছেন। কোন পশু কোরবানির আদেশ দিতেছেন না। নফসের কোরবানি হইলেই মুক্তি নামক মহা কল্যাণ আসিয়া থাকে। শিষ্যদিগকে কেহ বলিতেছেন মেষ। তাই তাদের নবী ছিলেন মেষ পালক। কেহ ধেনু, কেহ বা বাকারা ইত্যাদি। সঠিক রুপক গ্রহণ না করিয়া স্থুলতাকে গ্রহণ করার প্রবণতা বস্তুবাদী ধার্মিকগণের মধ্যে প্রবল।

কতল = "ক্কাফ" অক্ষর দ্বারা আল্লাহর ছয়টি শক্তিশালী গুণের সমষ্টিকে বুঝায়। 'তে' অক্ষর দ্বারা বিস্তার বুঝায়। 'লাম' দ্বারা লা অর্থাৎ না বুঝায়। অতএব কতল অর্থ "না" এর বিস্তার সাধন করিয়া ক্কাফ শক্তির অধিকারী হওয়া। মনের মধ্যে মহা শুণ্যতা অর্জন করাই কতল করা।

সাত্তার ভাইয়ের হাইথট শুনতে শুনতে রহিম সাহেবের মাথা ঘুরতে লাগলো। তিনি আগা-মাথা কিছুই বুঝলেন না। তিনি শুধু চিন্তা করতে লাগলেন-কিভাবে টাকা সংগ্রহ করে একটি গরু কেনা যেতে পারে? তার কাছে গচ্ছিত আছে হাজার চল্লিশেক টাকা। আর হাজার বিশেক হলে একটা মোটা সোটা গরু কিনতে পারে। সে টাকার চিন্তায় বিভোর। কিন্ত্তু মনোযোগী শ্রোতার মতো ভান করে পাগল বিদেয় হবার অপেক্ষায় আছেন। তিনি তাকালেন সাত্তার সাহেবের দিকে...দেখলেন তিনি তার কথা বলেই যাচ্ছেন

-বুঝলেন ভাই, মুসা নবী যখন তার কাওমের স্বার্থে শিষ্যগণকে বলিলেন যে, আল্লাহ একটি বাকারা জবেহ করিতে আদেশ করিতেছেন তখন শিষ্যবর্গ ইহাকে উপহাস বাক্যরুপে গ্রহণ করিল। নবীর শিক্ষাপ্রাপ্ত হইয়া তাহারা ভালরুপেই জানিয়াছে যে চতুষ্পদী পশু হত্যা করা জবাই ক্রিয়া নয়। সুতরাং ইহা আল্লাহর আদেশ হইতে পারে না। যখন বুঝিল ইহা পরিহাস নয় তখন "বাকারা বা গাভী " এই রুপক দ্বারা কি বুঝাইতেছেন তাহা নবীর আপন রব হইতে জানিয়া লইয়া তাহাদিগের নিকট প্রকাশ করিতে বলিল। নবীর মধ্যে তাহার রব জাগ্রত। তাই আপন রবের সংগে কথোপকথন হইয়া থাকে। শিষ্যগণের মধ্যে রব জাগ্রত হয় নাই। তাই তাহারা নবীর রব হইতে ইহার অর্থ জানিবার প্রার্থনা জানাইল।

সুরা বাকারার ৬৮-৬৯ নং আয়াতঃ "তাহারা বলিল আপনার রবকে আমাদের জন্য ডাকিয়া আমাদের জন্য ব্যাখ্যা করিতে বলুন ইহা কি? (অর্থাৎ বাকারাটি আসলে কি বা কিরুপ)। তিনি বলিলেনঃ নিশ্চয়ই তিনি বলেন ইহা অবশ্য একটি বাকারা-বৃদ্ধ নয় এবং কুমারীও নয়। ইহার মধ্যবর্তী জোয়ান। সুতরাং ক্রিয়া কর যেমন আদিষ্ট হইয়াছ । তাহারা বলিল আপনার রবকে আমাদের জন্য ডাকিয়া আমাদের জন্য ব্যাখ্যা করিতে বলুন ইহার রং কেমন? তিনি বলিলেনঃ নিশ্চয় তিনি বলেন ইহা একটি বাকারা, চির হলুদ-বিশুদ্ধ রং, আনন্দিত হয় দ্রষ্টাগণ।

সাত্তার ভাই চা খান। চা তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। চা খেতে খেতে বলুন। রহিম সাহেবের কথা শুনে সাত্তার সাহেব চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চুমুক দিতে দিতে আবারো বলা শুরু করছেন। আর রহিম সাহেব চাচ্ছেন সে চা খেয়ে কেটে পড়ুক। কারণ তিনি এখন আর কোরবাণী বিষয়ক কোন হাইহট শোনার জন্য আগ্রহবোধ করছেন না। তার চিন্তা একটাই। একটা মোটা-সোটা স্বাস্থ্যবান গরু।

ব্যাখ্যাঃ প্রতি উত্তরে তিনি দৃঢ়তার সহিত বলিলেন-ইহা অবশ্য একটি বাকারা। তবে ইহা বৃদ্ধাও নয় কুমারীও নয়। ইহাতে
যৌবনের জোয়ার আসিয়াছে। ইহাতেও যখন তাহারা  রুপক শব্দটি বুঝিতে পারে নাই তখন তাহারা ইহার রং কিরুপ তাহা জিগ্যাসা করিল। তিনি জবাব দিলেন যে ইহা চির হলুদ। অর্থাৎ অত্যন্ত আকর্ষণীয় রং। যে রং অত্যন্ত বিশুদ্ধ এবং দর্শনকারীর নিকট আনন্দদায়ক। এই কারণে তাহার দিকে যাহারা তাকাইয়া থাকিবে তাহাদিগের মনের শুদ্ধি ক্রিয়া থাকিবে। জবেহ যে হয় সে হয় সৌন্দর্য বিতরণকারী পুরুষ।
(চলবে)