(পূর্ব
প্রকাশের পর)
এখন
বৃষ্টি বেশ জোরে শোরে
শুরু হয়েছে। টিনের ছাদে
বৃষ্টির শব্দ শুনতে বেশ
লাগছে। মনটা কোন সুদুরে
হারিয়ে যেতে চাইছে। কিন্ত্তু
পারছি না। মনা পাগলা
নামক লোকটির একটি কথা
বেশ জোরে শোরেই যেন
প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। বার বার
মনে পড়ছে " এটা এমন একটা
বিষয় - যা দেখা যায়
না। ধরা যায় না
। কিন্ত্তু অনুভব
করা যায়। উপস্থিতি টের
পাওয়া যায়। সর্বত্রই তার
সরব উপস্থিতি। এই মনের মাঝেই
ভাবের আবেশেই সে ধরা
দেয় ভাবুকের কাছে। যারা তার
ভাবুক তাদেরকেই সে ভাবায়। তাদেরকেই
সে চিন্তার রাজ্যে বিচরণ করায়।
সেই চিন্তা রাজ্যে তারা
সারাক্ষণ ডুবে থাকে। "
আচ্ছা
অামি কি পাগল হয়ে
যাচ্ছি? ঠিক মনা পাগলার
মতো। আমার কাছে কেন
বার বার সে প্রশ্নটা
উঁকি দিচ্ছে? কি যে করি?
কার কাছে এই প্রশ্নের
উত্তরটা পাই? ঠিক বুঝে
উঠতে পারছি না। আবার
সমাধানও পাচ্ছি না। ভাবনার
ডানা কেবল বিস্তৃত হচ্ছে।
আচ্ছা ভাবনা কি? ভাবনার
প্রকারভেদ কি? কেন ভাবনা
আসে? ভাবনার সংজ্ঞাটা জানা
দরকার।
আমি
আর দেরি করলাম না।
বারান্দা থেকে রুমে প্রবেশ
করলাম। তারপর কাগজ কলম
বের করে লেখা শুরু
করলামঃ
ভাবনা
কি?
মনের কেন্দ্র
বিন্দুতে অবস্থিত চিত পদার্থ যা
অতি সূক্ষ্মকারে বিরাজিত তাই ভাবনার বিষয়।
সেই চিত পদার্থই একটি
জীব থেকে আরেকটি জীব
থেকে পার্থক্য সুচীত করে। এর
থেকে উত্তোরণের একমাত্র পথই হচ্ছে-ভাবনা।
ভাবনার মুল হচ্ছেঃ ভাব
+ না = ভাবনা। ভাব হচ্ছে
মনের গতি প্রকৃতি। মন
হচ্ছে চিত পদার্থ। চিত
পরমাণু হচ্ছে ঈশ্বরেরই অংশ।
ঈশ্ ধাতুর অর্থ হচ্ছে
শক্তি। ঈশ্বর হচ্ছেন সেই
শক্তির বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং যে চিত
পরমাণু ঈশ্বরের অংশ তা যদি
প্রতিটি জীবের মধ্যেই থাকে
তাহলে সেতো ঈশ্বরেরই অংশ।
আর সেই অংশ বিশেষ
যদি পুর্ণভাবে মিলিত না হয়,
তাহলে ঈশ্বরকেতো পূর্ণাংগ বলা যায় না।
না-কি ঈশ্বর পূর্ণাংগতা
প্রাপ্তির জন্যই তার দিকে
আহব্বান করে? যাকে আমরা
বলি ইন্নানিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি
রাজেউন। যেখান থেকে আমাদের
আগমণ সেখানেই প্রত্যাবর্তন। ঝর্ণার জল যেরুপ
সাগরের সাথে মিলিত হতে
ছুটে চলে অনন্ত পানে
আমরাও কি মৃত্যু নামক
স্রোতধারায় সেই দিকেই গমণ
করছি?
-স্যার
কি লিখছেন? শরীফ ভাই জিগ্যেস
করলেন।
-তেমন
কিছু না। একটা আর্টিকেল
লেখার চেষ্টা করছি।
-তা
লিখেন। রাত কয়টা বাজে
সেটা কি খেয়াল করেছেন?
শরীফ
ভাইয়ের কথা শুনে ঘড়ির
দিকে তাকিয়ে দেখি রাত
প্রায় একটা ছুই ছুই
করছে। সবাই যার যার
বিছানা পত্র গোছাতে ব্যস্ত।
কারো চাকুরি আছে। কারো
আছে ব্যবসা। আর আমার আছে
স্কুল। আমি লেখাটা বন্ধ
করে হাত মুখ ধোয়ার
জন্য আবার ওয়াশরুমের দিকে
গেলাম। যেয়ে দেখি বিরাট
লাইন লেগে আছে। অগত্যা
আমি আমার স্বস্থানে ফিরে
এলাম। লেখাটায় চোখ বোলালাম। আরো
কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে।
কিন্ত্তু পারছি কই? কর্ম
ব্যস্ততা আমায় দেয় না
অবসর। আমি আবার ওয়াশ
রুমের দিকে গেলাম। হাত
মুখ ভালো করে পানি
ওয়াশ করলাম। চোখে পানির
ঝাপটা দিলাম। ওয়াশ রুম
হতে বের হয়ে বিছানায়
সটান শুয়ে পড়লাম।
রুমের
বাতি নেভানো হয়েছে। চারি
দিকে হাল্কা অন্ধকার। সবাই
ঘুমুতে ব্যস্ত। কারো কারো নাক
ডাকার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।
কিন্ত্তু আমার ঘুম আসছে
না। শুয়ে শুয়ে চিন্তা
করতে লাগলাম।
ঘন
অন্ধকারে আমি যেরুপ জেগে
আছি। যখন আমি আমার
মায়ের পেটে ছিলাম তখনো
কি আমার চৈতন্য ছিল?
আমি কি জেগে ছিলাম
না সেখানেও ঘুমাতাম? যদি সেখানে আমার
ঘুমের স্থান হয় আর
আমি যদি ঘুমাতাম তাহলে
কে আমাকে ডাকতো? খিদে
লাগলে কে আমাকে খাওয়াতো?
বাথরুমের প্রয়োজন হলে কি করতাম?
আচ্ছা
কোরআন বলেঃ একটা সময়
তুমি অতিক্রান্ত করেছো যখন তুমি
উল্লেখ করার মতো কোন
কিছুই ছিলে না। না
আমার আকার ছিল না
রুপ ছিল? অর্থাৎ আমি
ছিলাম নিরাকার। নির+আকার। নিরাকার
অর্থ পানির আকার। তার
মানে আমি ছিলাম পানির
আকারে। তাহলে সেই পানিটা
কি? সেটা নিশ্চয়ই আমার
পিতার মণি তথা বীর্য।
আর সেটা তৈরী হয়
খাদ্যবস্তু হতে। খাদ্য পরিপাক
হয়ে হয় রক্তরসে। রক্ত
হতে বীর্য তথা মণি।
অর্থাৎ আমি মণির মধ্যেই
ছিলাম। অর্থাৎ অামার স্থান
ছিল বীর্যে। যদি তাই হয়
তাহলে কাকে লক্ষ্য করে
বলা হচ্ছেঃ পড় তোমার
প্রভুর নামে। যিনি তোমাকে
সৃষ্টি করেছেন জমাট বাঁধা
রক্তবিন্দু হতে? কোরআনের বাক্য
হচ্ছে আদেশ-নিষেধ মুলক।
তথা ইম্পারেটিভ সেনটেনস। সেখানে কর্তা ঊহ্য
থাকে। যে পড়ে তাকেই
উদ্দেশ্য করে যেন বলা
হচ্ছে। তাহলে কাকে উদ্দেশ্য
করে বলছে সেই কথা?
বিধেয়টা কে? যদি নুর
মুহাম্মদকে লক্ষ্য করে বলে
থাকে তাহলে কোথ্থথেকে এ
আদেশ আসছে? সেই আদেশ
কোথা থেকে উদিত হচ্ছে?
কোথা থেকে উরুয হচ্ছে
কোথায় নুজুল হচ্ছে?
মাথাটা
খারাপ করেই ছাড়বে দেখছি।
এ মনা পাগলার হাত
থেকে বাঁচতে হবে। নয়তো
এ সমস্ত উল্টা পাল্টা
প্রশ্নে পুরো মাথাটাই খারাপ
হয়ে যাবে। আমি আবারো
ঘুমাতে চেষ্ট করলাম। কিন্ত্তু
ঘুমটা হটাৎই উধাও হয়ে
গেছে। খাটে শুয়ে শুয়ে
এপাশ ওপাশ করছি। বৃষ্টিও
থেমে গেছে। আমিও আমার
চিন্তাকে থামানোর চেষ্টা করলাম। উবু
হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছি। দেখি
ঘুমটা আসে কি-না?
কারণ ঘুমটা জরুরী। পরদিন
আমার স্কুল আছে।
(চলবে)