পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

রহিম সাহেবের কুরবাণী ও একটি প্রশ্ন -শেষ পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর)

সাত্তার সাহেব একটি একটি করে কোরআনের আয়াত বলছেন আর তার ব্যাখা বিশ্লেষণ দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্ত্তু রহিম সাহেবের বিক্ষিপ্ত মন তা শুনতে নারাজ। সাত্তার সাহেব বিষয়টা আঁচ করতে পেরে তিনি তার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করছেন। তিনি রহিম সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন

সুরা বাকারার ৭০ নং অায়াতে বলা হয়েছেঃ " তাহারা বলিল আপনার রবকে ডাকিয়া আমাদের জন্য ব্যাখা করিতে বলুন ইহা কি ( অর্থাৎ বাকারাটি আসলে কিরুপ?)  নিশ্চয়ই গাভী জাতি আমাদের নিকট (সকলই) একরুপ। এবং নিশ্চয় আমরা যদি আল্লাহর ইচ্ছা অসীম রাখিয়া থাকি তবে অবশ্য আমরা হেদায়েত প্রাপ্ত আছি "।

ব্যাখ্যাঃ এতদুর বলার পরেও যখন কোরবাণী হওয়ার যোগ্য একটি গাভীর স্বরুপ জিগ্যাসা করিল এবয তাহারা আরো জানাইলো যে, আল্লাহ লাভের ইচ্ছা যদি তাহারা অসীমভাবে মনে পোষণ করিয়া খাকে তবে অবশ্য তাহারা হেদায়েত প্রাপ্তদের মধ্যেই গণ হইয়া থাকিবে।

আবার ঐ সুরার ৭১ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ নিশ্চয়ই তিনি বলিলেনঃ " অবশ্য ইহা একটি বাকারা, জমি চাষে (বা দেহচাষে) হীন হয় নাই এবং ক্ষেত্র বিশেষকে পান করায় নাই। সালামত প্রাপ্ত এবং ইহাতে নাই কোন কলংক (বা দুর্বলতা)। তাহারা বলিলঃ এখন আপনি সত্যসহ আনয়ন করিয়াছেন। তারপর তাহারা ইহাকে জবাই করিল কিন্ত্তু তাহারা জবাই ক্রিয়ার মানসিকতা (সৃষ্টি) করে নাই (বা দুঃখ স্বীকার করে নাই) "।


ব্যাখ্যাঃ এই প্রশ্নের জবাবে মুসা নবী বলিলেন যে তাহার রব বলিতেছেন অবশ্য ইহা একটি বাকারা কিন্ত্তু ইহা দেহ চাষ করিয়া হীন হয় নাই। এবং বিশেষ প্রকার ক্ষেত্রকে পান করায় নাই। এর অর্থ সে হইবে এমন এক ব্যক্তি যে বীর্যস্খলন করে নাই। সুতরাং সে সালামত প্রাপ্ত অর্থাৎ নিরাপত্তা প্রাপ্ত হইয়া থাকে এবং নারী মোহ বা বস্তুমোহের কোন কলংক বা দুর্বলতা তাহাতে থাকে না। তিনি হবেন বীর্যবান জিতেন্দ্রিয় পুরুষ। যৌবন প্রাপ্তির কাল হইতে আত্মিক সাধনায় অনুশীলন সম্যক গুরুর মাধ্যমে না করিলে উক্তরুপ গুণাবলী অর্জন করা যায় না। নিশ্চয় করিয়া স্ত্রীলিংগ রুপে গাভী বলার উদ্দেশ্য হইল সে এখনও পুরুষ হওয়ার পথে সে একজন সাধক।

এতদুর বলিবার পর শিষ্যবর্গ কোরবাণীর বিষয়টির গুরুত্ব বুঝিতে পারিল। তাই তাহারা বলিলঃ এখন আপনি বিষয়টির ব্যাখাসহ সত্য আনয়ন করিয়াছেন। কিন্ত্তু তাহারা কেহই কোরবাণী করিল না। অর্থাৎ তাহাদের কেহই গুরুর হাতে ঐরুপ একটি সন্তান সঁপিয়া দিল না। পক্ষান্তরে তাহারা একটি চতুষ্পদী গাভী আনিয়া কোরবাণীর নামে হত্যা করিল। উহা দ্বারা তাহারা শুদ্ধি ক্রিয়ার মানসিক হাল অর্জন করে নাই এবং ঐরুপ করিতেও পারে নাই। সেই জন্য কোরআন মতে তাহারা কোরবাণী করে নাই।

একথা বললে সাত্তার সাহেব রহিম সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ

-এবার বলুন রহিম ভাই, কোরআন মতে,  আপনি যে কোরবাণী করতে চাচ্ছেন তা কি নিছক একটি পশু হত্যার আনুষ্ঠানিকতা বৈ অন্য কিছু কি-না? কারণ আপনি তো সেই মুসা নবীর অনুসারীদের মতোই গাভী খরিদ করার মানসিকতায় ভুগছেন?

রহিম সাহেব প্রথম থেকেই আনমনা থাকায় সাত্তার সাহেবের কোন কথাই তিনি হৃদয়াংগম করতে পারেননি। সাত্তার সাহেবের হটাৎ এ প্রশ্নে কিংকর্তব্যবিমূঢ় রহিম সাহেব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন। তিনি কি বলবেন ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারছেন না। আর অন্যদিকে সাত্তার সাহেব সোফা সেটে হেলান দিয়ে চোখ মুদে গাইছেনঃ

গুরু আমার কোরবানি হয় কিসে
আত্মার সাথে পশু বেঁধেছি
কাম যাতনার ফাঁসে,
গুরু আমার কোরবানি হয় কিসে
কারোর ভাল সহ্য হয়না
অন্তর ভরা হিংসে,

গুরু আমার কোরবানি হয় কিসে
শাক ভাত আর কত খামু
মন মজেছে আমিষে,
গুরু আমার কোরবানি হয় কিসে
২ পয়সার লোভ সহ্য হয়না
ফিৎনা বাঁধি কষে,
গুরু আমার কোরবানি হয় কিসে
"মনের পশু বড় পশু
তারে দেইনা বলি,
মিছে মিছি জীব হত্যার
আজব খেলা খেলি "
[সংগৃহীত]