পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ভাবনার ডানা-তৃতীয় পর্ব

(পূর্ব প্রকাশের পর)

মনা পাগলা চলে যেতেই আমার মাথায় যেন চিন্তা ঢুকে গেল। আমিও নিজেরই অজান্তে সেই পথের দিকে তাকিয়ে থাকলাম আর মনে মনে বলতে লাগলামঃ

যেহন দিল পীতা ইশক. দা জাম
সা দিল মাস্ত ও মাস্ত মোদাম
হক্ব মওজুদ সদা মওজুদ।
সূলি তে মানসুর চড়হা কর
আনা আল হক. কালাম
হক্ব মওজুদ সদা মওজুদ।

মনা পাগলা চলতে চলতে হটাৎ মিলিয়ে গেল পথের বাঁকে। অামি হাটছি আর ভাবছি ১ + ১ = ১। এটা কিভাবে সম্ভব? জানি কেবল ভুল হলেই তা সম্ভব। কিন্ত্তু ভুল হলে সে কেন আমাকে ভুল অংক শিখাতে চাইছে..আমি আমার মেছে চলে এলাম। রুমে ঢুকতেই দেখলাম রুমমেটরা সবাই একাট্টা হয়ে কার্ড খেলছে। আমাকে দেখে তুর্য চেচিয়ে উঠলোঃ

-ঐ যে মাস্টার সাহেব আসছেন। তা মাষ্টার সাহেব এত দেরি করলেন কেন?

-বৃষ্টির জন্য দেরি হয়ে গেল।

-তাতো দেখতেই পাচ্ছি। একেবারে ভিজে কাক হয়ে গেছেন। মাথাটা মুছেন মাষ্টার সাহেব। নয়তো ঠান্ডা লেগে জ্বর হতে পারে। সর্দি জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন।

সে আমার দিকে তোয়ালে ছুঁড়ে দিল। আমি তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছলাম। ভিজে জামাটা খুলে টি শার্ট গায়ে দিলাম। প্যান্টটা খুলে লুঙ্গি পড়ে বাথ রুমে যেয়ে জামা-কাপড় বালতিতে রেখে হাত মুখ ভালোভাবে ধুয়ে বের হলাম। কেমন যেন লাগছে। একটু একটু ঠান্ডা লাগছে। মনে হচ্ছে যেন জ্বর আসতে পারে। সবাই কার্ড খেলছে। আমি সেদিকে গেলাম না। আমার খিদে লেগেছে। আমি দেখতে চাইলাম রাতে খালা কি রান্না করেছে?

দেখলাম আলু দিয়ে ডিম রান্না করেছে। আর ডাল। সস্তা খাবার। ঝামেলা কম। মনে হয় এই রান্নায় খালারা খুব খুশি হয়। আমি খাবার শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। বিছানায় যাবার আগে পাশেই আমার বুক শেল্ফ থেকে একটা বই বের করলাম। নাম জীবনানন্দ দাসের শ্রেষ্ঠ কবিতা। বইটা হাতে নিয়ে পড়তে যা'ব ঠিক সেই মুহুর্তে মনে হল মনা পাগলার কথা ১ + ১ = ১ । একটা পাগল কি বললো না বললো সেটা নিয়ে মাথা ঘামাবার কোন দরকার নেই। ভাবনার বিষয় হতে পারে পজিটিভ। নেগেটিভ নয়। নেগেটিভ চিন্তা মানুষকে পেছনে ফেলে দেয়। অামি কবিতার বইটি হাতে নিয়ে কবিতা পড়া শুরু করলামঃ

নীলিমা
রৌদ্র-ঝিলমিল
ঊষার আকাশ, মধ্যনিশীথের নীল,
অপার ঐশ্বর্য্যবেশে দেখা তুমি দাও বারে বারে
নিঃসহায় নগরীর কারাগার-প্রাচীরের পারে।

-কি ব্যাপার মাষ্টার সাহেব? শরীর খারাপ না-কি? না মুড অফ। কারো সাথে কোন কথা বলছেন না?
শরীফ ভাই জানতে চাইলো।

-নাহ তেমন কিছু না। বৃষ্টিতে ভিজেছিতো..তাই খানিকটা জ্বর জ্বর লাগছে। হাল্কা একটু মাথা ব্যাথা করছে।

-তাহলে রং চা খান। ভালো লাগবে। আদা দিয়ে রং চা।

-মন্দ হয় না।
আমি রান্না ঘরে যেয়ে চায়ের পানি বসালাম। আর ঠিক তক্ষুণি আবার মনে পড়লো ১ + ১ = ১। অামি শরীফ ভাইকে বললামঃ
- আচ্ছা শরীফ ভাই ১ + ১ = ১ কখন হয়?

- ১ + ১ = ২ হবারইতো কথা। ১ কখন হয়? সেটাতো জানি না। মনে হয় কেউ ভুল করলে তখনই হবার কথা। তাছাড়া অন্য কোন উপায়ইতো দেখছি না।

- আমিওতো জানি তাই। কিন্ত্তু একজন বললো এক + এক = এক। এটা অামার মাথায় ঢুকছে না। এর মানে টা কি?

-মনে হয় কেউ আপনার সাথে ফাপর নিছে?

-আরে না। সেটা না।

-তাহলে কি?

-ঠিক আছে। বাদ দেন। নিন চা খান।

আমি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বারান্দায় গেলাম। একটা সিগারেট ধরালাম। বৃষ্টি হচ্ছে ঝুম বৃষ্টি। আমি বৃষ্টিটা বেশ উপভোগ করছি। বৃষ্টির পানির ফোঁটার দিকে হটাৎ দৃষ্টি আটকে গেল। অঝোর ধারায় যে বৃষ্টি হচ্ছে সেই পানি পড়ে তা আবার মিলিয়ে যাচ্ছে পানির সাথেই। কিন্ত্তু এর সাথে কি অংকটার কোন যোগ সুত্র আছে? কাকে জিগ্যেস করা যায়...সেটাই ভাবছি মনে মনে...

(চলবে)