পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

রহিম সাহেবের কুরবাণী ও একটি প্রশ্ন - দ্বিতীয় পর্ব

(পূর্ব প্রকাশের পর)

রহিম সাহেবের অবস্থা দেখে সাত্তার সাহেব বেশ খানিকটা মর্মাহত হলেন। তিনি নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগলেন। কেন যে সব জায়গায় পান্ডিত্য ফলাতে চান? কি দরকার ছিল এসব বলার? বেচারা কেমন মনমরা হয়ে আছে? সাত্তার সাহেবের মনের কোণায় একটা মমত্ববোধ জন্মাতে লাগলো। তিনি বিষয়টি পরিস্কার করে বোঝার জন্য আবারো রহিম সাহেবের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করলেন। তারপর বলা শুরু করলেন। শুনুন রহিম ভাই

-ধর্ম সাধনার মুল উদ্দেশ্য মানুষের সমগ্র ইচ্ছাশক্তির সাহায্যে মানবীয় অবাধ্য প্রবৃত্তিকে সংযত করে বিশ্ব-প্রতিপালকের পরম কল্যানকর ইচ্ছার সাথে একসুত্রে গেঁথে ফেলা। এজন্য সর্বপ্রকার ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ভিতর এবং বাহির দুটি রুপ থাকে। প্রথমটি "নিয়ত" বা মনন-সৃষ্টি যা দ্বারা উহার বিশেষ লক্ষ্যে পৌঁছবার সংকল্প গ্রহণ করা যায়। তারপর প্রকাশ্য কোন ক্রিয়ার সাহায্যে সেই নিয়ত বা সংকল্পকে অধিকতর শক্তিশালী করে তোলা। এরুপে ভিতর-বাহির একটি অপরটির সহায়ক ও পরিপুরক এবং এজন্য তাদের সমন্বয় সাধনের দিকে অগ্রসর হইতে হয়।

কারণ সম্যক গুরুরা সত্যকে সাগর মনে করে এবং এই সাগরে সাঁতার কাটা সকলের পক্ষে সম্ভব নয় বলে সত্য সাগরের একটি বিন্দু সবার সামনে রেখে বলেন "এটা হলো অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানটুকু পালন করতে চেষ্টা কর "। এই বিন্দুটুকু দিতেই হয় দুটো কারণে। একটি হলোঃ কেউ গ্রহণ করুক আর নাই করুক কিন্ত্তু সবার জন্য অতি সহজ সরল একটি ব্যবস্থাপত্র আর অপরটি হলোঃ যদি যে কোন সত্যের অনুষ্ঠান অথবা রুপক কথার স্থুল চেহারাটি না থাকে তাহলে আসল সত্যটি হয়ে পড়ে বিমুর্ত তথা নিরাকার। সবার অনুভুতি এই বিমুর্তিকে অনুধাবন করতে পারে না। তাই বিন্দুর অনুষ্ঠান দিয়েই কিছুলোক সাগরের গন্ধ পায়।

-কিন্ত্তু তাই বলে কোরবাণী ঈদকে আপনি পশুহত্যার আনন্দানুষ্ঠান বলতে পারেন না। পশুরা মানব জাতির কল্যাণে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে নিজেদের ধন্য মনে করে। কারণ মানব জাতি হচ্ছে আশরাফুল মাখলুকাত। তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। আঠারো হাজার মাখলুকাতের মধ্যে মানবই শ্রেষ্ঠ। সেই শ্রেষ্ঠ জাতির প্রতি নিম্নবৃত্তি সম্পন্ন পশু তার জীবন বিসর্জন দিয়ে ধন্য হয়ে যায়।

-আপনার কথাগুলো ছেলে মানুষী হয়ে যাচ্ছে না রহিম সাহেব? একটু ভেবে দেখেনতো? যে আঠারো হাজার মাখলুকাতের কথা আপনি বলছেন সেই আঠারো হাজার মাখলুকাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হিসেবে নিজেকে জাহির করতে হলে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে আপনি ঐ পশুর চেয়েও শ্রেষ্ঠ। জীব জগতের দিকে তাকিয়ে দেখেনঃ হিংসাত্মক কার্য্যাবলীর জন্য কুকুর এবং বন্যপশু হায়েনা অন্যতম। আপনি যদি আপনার হিংসাবৃত্তি পরিত্যাগ করতে না পারলেন তাহলে আপনার আর কুকুরের মধ্যে পার্থক্য রইলো কোথায়? গর্ভবতী মহিষ কখনো ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় না। মানুষ করে। একটি নারী পশু একাধিক পুরুষ পশুর সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়। নিম্নস্তরের পশুদের মধ্যে কামপ্রবৃত্তি প্রবল। যেমনটা আমরা বর্তমানে পত্রিকা খুললেই দেখতে পাই-মানুষরুপী এই পশুদের। তাদের মধ্যে আর পশুদের মধ্যে স্বভাবগত পার্থক্য কোথায় রহিম সাহেব?

সাত্তার সাহেবের কথাগুলো শুনে রহিম সাহেব বেশ খানিকটা চিন্তাভাবনায় পতিত হলেন। তিনি বেশ গভীরভাবেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা শুরু করে দিয়েছেন। তার মনের মধ্যে খেলা করছে কুকুর স্বভাবের পশু মানুষ আর বাস্তবিক পশু কুকুরের মধ্যে কি কি মিল আছে তার সায়ুজ্য খুঁজে ফেরা। তিনি একবার অফিস হতে আসার পথে গলির মোড়ে দেখেছেন-একটি নারী কুকুরকে ঘিরে আছে একাধিক পুরুষ কুকুর। কেউ তার জননইন্দ্রিয়ে জিহ্বা দিয়ে চাটছে কেউ তার মুখ চাটছে....আবার তার বাড়িতে যে মিনি বিড়ালটা আছে সেখানেও তিনি দেখেছেন। মোরগ-মুরগী পাখি সব কিছুতেই তিনি কিছু না কিছু মিল বা সায়ুজ্য খুজে পাচ্ছেন। আর আধুনিক সভ্যতায় শিক্ষিতরাতো রীতিমতো প্রজনন ক্রিয়াকে আনন্দ উপকরণের নয়া হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। কিন্ত্তু তারা কি ভেবে দেখেছে এতে কি হচ্ছে? ইনপুট হিসেবে যা দেয়া হচ্ছে আউটপুট হিসেবে তাই বের হচ্ছে। অর্থাৎ কেউ যদি কামের বশে ক্রিয়া করে তার আউটপুট হিসেবে সেই শিশুটির মধ্যে কামভাব প্রবল থাকবে। 

-কি ব্যাপার রহিম সাহেব? হটাৎ এমন গম্ভীর হয়ে গেলেন কেন? কি ভাবছেন এত শত..

-আপনার কথাটার বাস্তব প্রতিফলনটা দেখার চেষ্টা করছিলাম।

রহিম সাহেবের কথা শুনে সাত্তার সাহেব বেশ ক্ষাণিকটা হাসলেন। তিনি বুঝতে পারলেন-রহিম ভাই বাস্তবতার আলোকে বিচার বিশ্লেষণ করা শুরু করে দিয়েছেন। যা একটি পজিটিভ দিক। ইংগিতটা ভালোই।

-আচ্ছা সাত্তার ভাই আপনি আমাকে কোরআনের আলোকে কোরবাণীর বিষয়টা একটু পরিস্কার করে বলেনতো? আচ্ছা আপনাকে অনেকক্ষণ ধরে বসিয়ে রেখেছি। একটু চায়ের কথা বলে আসি। 

রহিম সাহেব ভিতরে চলে গেলেন চায়ের কথা বলার জন্য। আর সাত্তার সাহেব চিন্তা করছেন কোথা থেকে শুরু করবেন? তিনি চিন্তা করলেন প্রথম থেকেই শুরু করবেন। তিনি রহিম সাহেবের জন্য অপেক্ষা করছেন।

(চলবে)