(পূর্ব প্রকাশের পর)
আমি ভুত দেখার মতো চমকে গেলাম। দেখলাম মনা পাগলা আয়েশের ভংগীতে আমার
বিছানার উপর বসে আছে। প্রথমে ভীষণ ভয় পেলেও পরে ধাতস্থ হলাম। তারপর তাকে
প্রশ্ন করলামঃ
-আপনি? এখানে কিভাবে আসলেন?
-তুই ডাকলি। তাই চলে এলাম।
-আমি ডাকলাম মানে?
-এইতো কিছুক্ষণ আগেইতো বললি সুত্রটার মুলভাব ধরতে পেরেছিস। কি ধরতে পেরেছিস, তাই শুনতে আসলাম।
মনা পাগলাকে প্রথমে দেখে যে ভয়টা ছিল,তা কাটতে শুরু করায় বেশ স্বস্তি
হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তাই তার সাথে আলাপচারিতা করা যায়। আমি তাকে আমার
সুত্রটার কথা বললাম। দেখলাম সে তা শুনে স্মিত হাস্যবদনে মাথা নাড়ছে। তারপর
সে বলে বসলোঃ
-সুরা ইখলাসের কথা শুনেছিস?
-জ্বি।
-তার অর্থ বুঝিস ?
-বুঝি। কিন্ত্তু সেইভাবে না যেভাবে আপনি বুঝাতে চাইছেন?
-ঠিক আছে। তুই কি জানিস আগে সেটা বল। আমি সেটা শুনে তারপর তোর সাথে কথা বলছি।
-সুরা ইখলাস। খালেস তথা খাঁটি। অর্থাৎ নির্ভেজাল। বলা হয়েছেঃ ১। কুল্
হুওয়াল্লা-হু আহাদ্। ২। আল্লা-হুচ্ছমাদ্। লাম্ ইয়ালিদ্ অলাম্ ইয়ূলাদ্।
অলাম্ ইয়া কুল্লাহূ কুফুওয়ান্ আহাদ্। অর্থঃ বলুন, তিনি আল্লাহ, এক। আল্লাহ
অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। এবং তার
সমতুল্য কেউ নেই।
-তাই? ব্যাস এতটুকুই?
-আসলে সেভাবে তো ভাবি নাই। তাই বুঝতে পারছি না আপনি কি বুঝাতে চাইছেন?
-শোন। সুরা ইখলাস। খালেস হতে এসেছে। ঠিক আছে। এখানে দেখবি বলা হয়েছে
আল্লাহু আহাদ অর্থাৎ আহাদ আল্লাহ এবং সামাদ আল্লাহ। এবং সর্বশেষে বলা হয়েছে
কুফুওয়ান আহাদ। আবারো সেই আহাদ। ওয়াহেদ অর্থ এক। একটি সিংগেল বস্তু। আর
আহাদ হচ্ছে একক। সমষ্টিগত একক সত্ত্বা। সেই সত্ত্বা কারো মুখাপেক্ষী নয়।
কারণ সে ভিন্ন অন্য কোন দ্বিতীয় কোন কিছুরই অস্তিত্বই নেই। তাই সে সামাদ
আল্লাহরুপী। সেই স্বয়ং স্বয়ংভু। যদি সৃষ্টির মধ্যে অন্য কোন বস্তুর
অস্তিত্ব থাকতো তাহলে সে অবশ্যই শেরেক করতো। যেহেতু নেই সেহেতু সেই ঘোষণাই
সে দিচ্ছে। অন্য কোন বস্তুর অস্তিত্ব থাকলে মুখাপেক্ষী হবার প্রশ্ন আসতো ।
যেহেতু নেই তাই সেটা অবান্তর। শেষেও তাই আবার আহাদ। মুল সার কথা হচ্ছে –
স্রষ্টার অদ্বিতীয়তা অক্ষুন্ন রাখা। সর্বত্রই তার সরব উপস্থিতি। এটাকেই
তোরা তোদের ভাষায় বলিস সর্বেশ্বরবাদ তথা ওয়াহদাতুল অযুদ। এক কথায় বলা হয় –
লা মউজুদা ইল্লাল্লাহ। আচ্ছা, তুই কি হুসনে হাকীকী জানিস? শুনেছিস কখনো?
- না। হুসনে হাকীকী কি?
-হুসনে হাকীকীর অর্থ হচ্ছে সত্যের সৌন্দর্য্য। হযরত খাজা শেখ ফরিদ শকরগন্জ (রাহঃ) এর কালামে পাক।
আমি বলবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। আবার তার কথাও সঠিকভাবে বুঝতে পারছি
না। কিছুক্ষণ কেটে গেল নীরবতায়। দেখলাম মনা পাগলা চোখ বুজে গুণ গুণ করে
গাইছে হুসনে হাকীকীঃ-
এ্যায় হুনছে হাক্কীকি নুরে আযাল তেনু ওয়াজিব তে ইমকান ক্যাঁহু
তেনু খালিক জাত কাদিম ক্যাঁহু তেনু হাদিস খালক জাহান ক্যাঁহু
তেনু মুতলাক মেহিজ ওয়াজুত ক্যাঁহু তেনু আলমিয়া আইয়ান ক্যাঁহু
অরভি নাফস আকল ক্যাঁহু আসবাহ আইয়্যান ক্যাঁহু
তেনু আরশ ক্যাঁহু আফলাক ক্যাঁহু তেনু নাজ নাইম জাননান ক্যাঁহু
তেনু জাত জামাদাত নাবাত ক্যাঁহু হাইয়্যান ক্যাঁহু ইনসান ক্যাঁহু
তেনু মাসজিদ মান্দির দায়ির ক্যাঁহু তেনু পোথিতে কোরআন ক্যাঁহু
তাসবিহ ক্যাঁহু জুননার ক্যাঁহু তেনু কাফির ক্যাঁহু ইমান ক্যাঁহু
[সংক্ষিপ্ত]
তেনু খালিক জাত কাদিম ক্যাঁহু তেনু হাদিস খালক জাহান ক্যাঁহু
তেনু মুতলাক মেহিজ ওয়াজুত ক্যাঁহু তেনু আলমিয়া আইয়ান ক্যাঁহু
অরভি নাফস আকল ক্যাঁহু আসবাহ আইয়্যান ক্যাঁহু
তেনু আরশ ক্যাঁহু আফলাক ক্যাঁহু তেনু নাজ নাইম জাননান ক্যাঁহু
তেনু জাত জামাদাত নাবাত ক্যাঁহু হাইয়্যান ক্যাঁহু ইনসান ক্যাঁহু
তেনু মাসজিদ মান্দির দায়ির ক্যাঁহু তেনু পোথিতে কোরআন ক্যাঁহু
তাসবিহ ক্যাঁহু জুননার ক্যাঁহু তেনু কাফির ক্যাঁহু ইমান ক্যাঁহু
[সংক্ষিপ্ত]
গানটি শুনে ভাবে তন্ময় হয়ে রইলাম। এর ভাবার্থ বুঝতে চেষ্টা করলাম।
কিন্তু রান্না ঘর হতে কি যেন পোড়া গন্ধ পাচ্ছি। দৌড়ে রান্না ঘরে গেলাম।
যেয়ে দেখলাম চায়ের পানি শুকিয়ে পাতিলটা জ্বলে লাল হয়ে উঠছে। তাড়াতাড়ি
চুলাটা বন্ধ করলাম। তারপর রুমে এসে দেখি সে নেই। কিভাবে আসলো কিভাবে গেল
কিছুই বুঝলাম না। আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি আমার বিছানার দিকটাতে।
যেখানটায় মনা পাগলা বসেছিল। একটা চিরকুট দেখতে পেলাম। সেখানে লেখাঃ ” আমি
আর কেউ না। তোরই অবচেতন মনের কল্পনা “।
(সমাপ্ত)
(সমাপ্ত)