পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৫

লেজওয়ালা মানুষ-শেষ পর্ব

(পূর্ব প্রকাশের পর)

-কিন্ত্তু জীবন ধারণের প্রয়োজনে আমাকে তো সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। তাই না ?

-তাই বলে কি ঐ পশুর পথ ধরে? সালাতে তুই কি বলিস সুরা ফাতেহায়?
এহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম। মুস্তাকামাত তথা মস্তানী সাহায্য চাস। সহজ সরল সুন্দর পথে চলতে চাস। গায়রিল মাগদুবি আলাইহিম এর পথেতো চলতে চাস না। নাকি চাস?

-না তা চাই না।

-না চাইলে তোকে সিরাতুল মোস্তাকীমের পথ অনুসরণ করতে হবে।

-তা নাইলে করলাম। কিন্ত্তু লেজওয়ালা মানুষের কথা জানার জন্য তো আপনি আমাকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসছিলেন। তো সেই লেজওয়ালা মানুষের কথাতো কিছুই বলছেন না?

-শোন লেজওয়ালা মানুষ চিনতে হলে তোকে তো কুরআন বুঝতে হবে। জানতে হবে। দর্শন করতে হবে। তবে তো চিনবি। দর্শন না হলে না চেনালে কিভাবে তুই চিনবি? শোন্ মানুষের জন্মবীজ যখন মাতৃজঠরে প্রবেশ করে তখন সেই বীজগুলো থাকে ব্যাঙাচির মতো লেজওয়ালা। সেগুলো সাঁতার কাটে। ভেসে বেড়ায়। সেখান থেকে সে একটি বীজ মাতৃবীজের মধ্যে প্রবেশ করে। প্রবেশ করার সাথে সাথেই তার লেজটি বিলীন হয়ে যায়। সে শুন্যের সাথে মিশে শুন্য তথা গোলাকার পিন্ডে পরিণত হয়। এরপর ধাপে ধাপে মানব আকারে পৃথিবীতে আসে। যে বীজটির কথা বলা হলো তা অনেক সাধনার পথ ধরে মানব আকার প্রাপ্ত হয়। সনাতন ধর্ম মতে চুরাশি লক্ষ যোনী ভ্রমণের কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। যোনী ভ্রমণ করার অর্থ হলো অধঃস্তন পথ হতে উর্ধ্ব স্তরে উত্তোরণ করা। জন্মান্তর মতবাদ প্রতিটি ধর্ম গ্রন্থের মধ্যেই উল্লেখ আছে। কোরআনে আছে প্রচ্ছন্নভাবে। কোরআনের ভাষা মাধুর্য্যে তা উদ্ধার করা সহজসাধ্য কাজ নয়। অনেক গভীর স্তরের চিন্তা ভাবনার কাজ। যেমন ধর বলা হয়েছেঃ “ফেতরাতাল্লাহিল্লাতি ফাতারান্নাসা আলায়হা” তার সেই স্বভাব বা প্রকৃতির উপর – এখানে তার সেই স্বভাব কথাটি দ্বারা পূর্ব নির্ধারিত কোন কার্য যা অতীত কালে সংঘটিত হইয়াছে সেই কথাটিই পুণঃব্যক্ত করা হয়েছে এবং সেই স্বভাবেই তাকে সৃষ্টি করা হইয়াছে। অর্থাৎ তার কর্ম যদি সৎকার্য হয় সেটিই তাকে প্রতিদান রুপে দেয়া হবে। এজন্যই পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে “লাতাবাদিলা লিখালক্বিল্লাহ” অর্থাৎ তার কোন পরিবর্তন বা রদ নেই। অর্থাৎ যেমন কর্ম তেমন ফল। তার জন্যই সৎগুণাবলী অর্জনের উপদেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছেঃ “তাখালল্লাখু বি আখলাখিল্লাহ” অর্থঃ আল্লাহর গুণে গুণাম্বিত হও। আর রাসুল বলছেনঃ ইন্নামা বুইছতু লি-উতামমিমা মা কারিমাল আখলাখ। “নিশ্চয়ই আমি প্রেরিত হয়েছি স্বভাবের উৎকৃষ্ট গুণসমুহকে ফুটিয়ে তোলার জন্য।

যারা আল্লাহর গুণে গুণে গুণাম্বিত নয় তারা কার গুণ অর্জন করেছে? তারা নিঃসন্দেহে খারাপ গুণগুলোই অর্জন করেছে। অার অসৎগুণের কারণে তারা তাদের স্বীয়রুপে সৃষ্টি হবে। এইটাই সৃষ্টির বিধান। এর কোন ব্যত্যয় নেই( লাতাবাদিলা লিখালক্বিল্লাহ )। কারণ সৎ এবং অসৎ গুণ উভয়ই মানবের মধ্যে দেখা যায়। অসৎ গুণের কারণেই তাকে পশুতুল্য বিবেচনা করা হয়। আকারে প্রকারে মানুষ। কিন্ত্তু আচার আচরণে পশু। তার কাঠামো ফি আহসানে তাকবীম হলেও সে মুলতঃ অদৃশ্যলেজওয়ালা একটি পশুসদৃশ্য মানব। এরাই সমাজে বিশৃংখলার সৃষ্টি করে। সমাজকে কলুষিত করে। মানবতাকে হত্যা করে। তাদের অদৃশ্য লেজ থাকায় মানব সমাজে বিচরণ করা থাকা সত্ত্বেও তাদের ধরা যায় না। তাদের ধরতে হয় আচার আচরণ দেখে। কারণ তার আচার আচরণই পশুবৎতুল্য।

একটা পাগলগোছের মানুষ। যিনি মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ফেরেন। তাড়া খান কোন লেজওয়ালা মানুষের। যিনি খুঁজে ফেরেন কোন অচেনা অজানা কোন একটা কিছুকে। যিনি কাছের কোন প্রিয় মানুষকে পেলে মেলে ধরেন তার দর্শন, তার চিন্তা-চেতনা। সভ্যসমাজ যাকে আদর করে ডাকেন পাগলের প্রলাপ বলে। অথচ সেই পাগলই আজকে পরিচয় করিয়ে দিল একটা অচেনা অদৃশ্য লেজওয়ালা মানব সমাজের। কি বিচিত্র তার সৃষ্টি রহস্য।

হে জগদীশ!
এ বিশ্বে তোমার, মানুষই সৃষ্টির মাঝে সার।
আছে তার জ্ঞানের অপার ভান্ডার।

ওমর খৈয়ামের কবিতাটি পাঠ করে ভবার দিকে তাকালাম। বেলা পড়ে আসছে। নিলীমার নীল বিলীন হতে চলেছে। পাখিরাও নীড়ে ফেরতে শুরু করেছে। আমাদের ফিরতে হবে। বললামঃ

-চলুন ওঠা যাক।

ভবা তার ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে চটের ছালাটি কাঁধে চড়িয়ে চলা শুরু করলো। যেতে যেতে বললোঃ

রাতি জাগেঁ তে শেখ সদা ওয়েঁ
পর রাত নু জাগন কুত্তে তেঁ থি উতহে।
রাতি ভোকন বাস না করদে
ফ্যয়র যা লারান ভিচ সুতে, তেঁ থি উতহে।
য়ার দা বুহা মুল না ছাড়-দে
পাওয়েঁ মারো সও সও জুতে, তেঁ থি উতহে।
বুল্লে শাহ উঠ য়ার মানা লে
নাই তো বাযি লে গ্যায়ে কুত্তে তেঁ থি উতহে।