পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৫

সোনার মানুষ-চতুর্থ পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর)

কবিরদের ভেতর বাড়ীতে অতিথিরা সবাই অপেক্ষা করছে শাহ্ সাহেবের জন্য। তিনি নামায শেষ করে ভেতরে প্রবেশ করলেন। ভেতরে বেশ কয়েকজন মহিলা এবং পুরুষ অপেক্ষা করছে তার জন্য। তিনি আসছেন দেখে সবাই দাঁড়িয়ে গেল। শাহ্ সাহেব একটি সোফায় হেলান দিয়ে বসলেন। পুরুষ এবং মহিলারা তার সাথে সাক্ষাত করে বের হয়ে গেল। রুমটিতে হাতে গোনা কয়েকজন রইল। কবির শাহ্ সাহেবের জন্য কিছু নাস্তা ট্রেতে করে নিয়ে আসলো। সেটা একটা টেবিলের উপর রাখলো। আরেকটি প্লেট নিচে মেহমান যারা বসেছিল তাদের মাঝে রাখল। শাহ্ সাহেব বললেনঃ

-বাবা কবির, সবাইকে দিয়েছো তো?

-জ্বি বাজান। 

-নিন। আপনারা শুরু করুন। বিসমিল্লাহ বলে তিনি খেতে শুরু করলেন। 
তাকে অনুসরণ করে বাকীরাও খাওয়া শুরু করলো। নাস্তার মধ্যে ছিল কাটা আপেল, আঙ্গুর আর বেদানা। সবাই বেশ আয়েশ করে ভাগ যোগ করে খেল। খাওয়া শেষ হতেই শাহ্ সাহেব ছলেমানের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ

-তাহলে আমরা শুরু করতে পারি তো? কি বলেন আপনারা...

সবাই যেন উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছিল সেই কথা শোনার জন্য। তারা সমস্বরে সায় দিলঃ

-জ্বি হুুজুর।

তিনি শুরু করলেন।

পরম করুণাময় আল্লাহ জাল্লাশানুহুর হিকমত বোঝা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভবপর নয়। সাধারণ মানুষ বলতে সর্ব সাধারণ একেবারে আম লোককে বুঝানো হয়। সেই লোকগুলো সংখ্যাধিক্য বিধায় তারা জীবের পর্যায়ভুক্ত। তার মধ্যে তখনো ইনসানিয়াত প্রকাশ পায়নি। অর্থাৎ যে স্তরে সাধারণ জীব থেকে মানুষ বলা হয় সে তখনো সে স্তরে উপনীত হয়নি। সদ্য আসায় তার মধ্যে তখনো হায়ওয়ানী স্বভাব প্রবলভাবে বিরাজমান। সেই জীবদের উদ্ধারের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যুগে যুগে নবী-রসুল, অলী-আউলিয়া,গাউস-কুতুব প্রেরণ করেছেন কেবলমাত্র তাদের হেদায়েত করার জন্য। অার এই হেদায়েত কেবলমাত্র জীব পর্যায়ভুক্ত মানবদের জন্য। আর এজন্যই কুরআন পাকে বর্ণিত হয়েছেঃ "লি কুল্লি কাউমিন হাদিন।" প্রত্যেকটি সম্প্রদায়ে হাদিন অর্থাৎ পথ প্রদর্শক প্রেরণ করা হয়েছে।  তিনি আরো বলেছেনঃ লি কুল্লি জায়ালনা মিনকুম শিঁরাতাও ওয়া মিনহাজ।" শিঁরাতাও দ্বারা শরীয়ত এবং মিনহাজ দ্বারা একটি বিশেষ পথকে বুঝানো হয়। শরা হতে শরীয়ত তথা আইন-কানুন। কোন একটি রাষ্ট্র কিভাবে পরিচালিত হবে, সেজন্য রাষ্ট্র প্রধান কি করে? কিছু আইন-কানুন প্রণয়ন করেন। যাতে রাস্ট্রে বসবাসকারী নাগরিকগণ সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারে। সেই আইন ভংগ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তাই না? ঠিক তদ্রুপ আল্লাহ রব্বুল আলামিন তার সৃষ্টিরাজ্য পরিচালনা করার জন্য এই আইন কানুনের ব্যবস্থা সর্বসাধারণের জন্য প্রণয়ন করেছেন যাতে সেই আইন অনুযায়ী তার সৃষ্টিরাজ্যে বসবাসকারীগণ সকলেই সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারে। তদুপরি যারা বিশেষ লোক তথা সেই আইন মান্য করে আরো অধিক কিছু পাবার আশা রাখে তাদের জন্য তিনি এই বিশেষ পথটি অনুসরণ করার তাগিদ দিয়েছেন।

-আইচ্ছা হুজুর। আপনে যে কইলেন মিনহাজ মানি বিশেষ পথ। হেইডা কি? ছলেমান তার কৌতুহল নিরারণ করার জন্য জানতে চাইল।

-শুনেন। শরীয়ত সকলেরই জন্য প্রযোজ্য। এই আইন কেউ তরক করার ক্ষমতা রাখে না। তবে হ্যা যারা মজ্জুব অর্থাৎ আল্লাহ প্রেমে পাগল তাদের জন্যই কেবল সেই আইন শিথিলযোগ্য। অন্যথায় নয়। আর যে বিশেষ পথটির কথা বলা হয়েছে তাহলো তরীকত। তরীকত তরক হতে এসেছে। যার অর্থ রাস্তা। বিশেষ রাস্তা বা পথ। আর এই তরক ধাতুর সাথে শেষে আরবী হরফ "ত" যুক্ত থাকায় সেটাকে তৌহিদ তথা একত্ববাদ বলা হয়। সুতরাং তরীকত দ্বারা একত্ববাদের একটি বিশেষ পথকে বুঝাচ্ছে। সেটি কেবল তাদের জন্যই প্রযোজ্য যারা শরীয়তকে পুর্ণ পায়রবী পুর্বক হ্ক্ক পথে রয়েছে। শরীয়ত মেনেই তোমাকে তরীকতের পথে চলতে হবে। আর তার জন্য তাগিদও দেয়া হয়েছে।
(চলবে)