পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৫

মনা পাগলার ভাব-সাব ও একটি প্রশ্ন


মনা পাগলা বেশ ক্ষাণিকটা বিরক্তি প্রকাশ করছিল সে আশা করেছিল তার সেই ভাষণ শুনে হয়তো লোকজন হামলে পড়বে না তা হয়নি বরং তাকে একটি খেতাব দেয়া হয়েছে শিয়া বলে আরে শিয়া না বলে শিয়াল বললেইতো পারত। মরা মুরগী,পঁচা-গলা হাবি যাবি ইত্যাদি কচকচ কইর‌্যা খাইতাম। এম্মতিতেইতো ভালো জিনিস কপালে জোটে না। তার উপর পাবলিকের খুনসুটিতো আছেই। কেন যে বললো না সেই আক্ষেপটাই তাকে বার বার কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে সে চিন্তা করে বললোঃ নাহ অনেক হইছে আর না এবার থেকে সে নিজের মতো পাগলামি করেই চলবে কোন ঝুট ঝামেলায় সে যাবে না কিন্ত্তু ঝামেলা যে তার পিছ ছাড়ে না কি করবে সে

মনা হাঁটতে হাঁটতে বটতলার মেলায় গেল। আজ দুর্গাার বিসর্জন হবে। অনেক হিন্দুরা উপস্থিত হয়েছে।পুজার মন্ডপের সামনে অনেক  সুন্দরী সুন্দরী রমণীরাও পুজা করছে কারো কারো চেহারা একেবারে দেবীর মতোন। মনা অপলক দৃষ্টিতে একবার দেবীর দিকে আরেকবার সুন্দরীদের দিকে দৃষ্টিপাত করছে। তার কৌতুহল দৃষ্টি অন্যদের দৃষ্টি এড়ালো না। তারা পুজার মন্ডপ হতে মনাকে বের করে দিল। মারলো না বটে। কিন্ত্তু ঘাড় ধরে বের করে দিল। মনা কেবল তাদের দিকে তাকিয়ে বললোঃ

-বাইর কইর‌্যা দিতাছেন ক্যা? আমার কি দেবীগো দেহনের স্বাদ নাই?

- ব্যাটা এটা কি অাচার? যে চেখে দেখবি স্বাদ ভালো না মন্দ? যা ব্যাটা ভাগ এখান থেকে

গলা ধাক্কা খেয়ে মনার মন বেশ খারাপ হয়ে গেল। সে দেখলো পুজার আসরে যে দেবীকে সাজানো হয়েছে তাকে অনেকটা বলিউডের নায়িকার মতো লাগছে। মনার মনে প্রশ্ন জাগে-পুর্বের যে দুর্গা ছিল তাকে কি দেখতে এই বলিউডের নায়িকার মতো ছিল কি-না? সে শুনেছে হিন্দুরা পুর্ণজন্ম বিশ্বাস করে। হয়তো সেই দেবী দুর্গাই বর্তমানে বলিউডের কোন নায়িকা হবে ? সে আরো ভাবলো-কৃষ্ণ কালো। তাকে তো ফেয়ার এন্ড লাভলী মেখে সাদা বানানো হচ্ছে না। তাহলে দুর্গাকে নায়িকার মতো সাজানোর অর্থ কি? সে এর কোন সদুত্তর পেল না। মনা আরো দেখলো হিন্দুদের তুলনায় মুসলমান দর্শনার্থীদেরই সংখ্যা বেশি। তারা কি মৃত্তিকা দেবী দুর্গাকে দেখছে আসছে না-কি মৃন্ময়ী দেবীদের দেখতে আসছে সেটা স্পষ্ট নয়। তবে তার কৌতুহলী মন বলে তারা হয়তো মৃন্ময়ী দেবীদেরই দেখতে আসছে। মনা কিছু বললো না। সে সেখান থেকে মন খারাপ করে চলে গেল মেলার দিকে

মেলাতে নানা ধরণের জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা বাঁশি কিনছে। গ্যাস বেলুন কিনছে। মুরালি কিনছে। কেউ বা মাটির মুর্তি কিনছে। মনা দেখলো সেখানে মাটির মুর্তিতে শ্রীকৃষ্ণ রাঁধারাণীর মুর্তি যুগলবন্ধী অবস্থায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষ্ণর হাতে বাঁশি। আর রাঁধা তার পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি বুঝলো কে জানে? মনা সেখান থেকে একটি পুতুল হাতে নিয়ে ভেংগে ফেললো। পুতুলটি দুটো খন্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ে আছে। মনা রাঁধার একটি অংশ আরেকটি কৃষ্ণর অংশ নিয়ে পাশাপাশি জোড়া দিল। তারপর অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেই পুতুলটির দিকে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা তখন মনার কান্ড কারখানা দেখার জন্য মনাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝখানে মনা । সে সেই পুতুলটার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে আর বলছেঃ

-বাম দিকে যুদি নারী থাকে আর ডাইনে যদি পুরুষ থাকে, তাইলে আমি থাকি কোন্ জায়গায়? আমার জায়গা কই?

অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে মনা একটি গান ধরলোঃ

যার মুখে ভাই হরি কথা নাই তার কাছে তুমি যেও না।
যার মুখ দেখে ভুলে যাবে হরি তার মুখপানে তুমি চেও না।।
করিবে রহিবে ভবমাঝে আর তব নামে কর যা করিবার।
পরের কথায় কিবা আসে যায় মিছে দাগা তুমি পেও না।।
কে কবে তোমায় কি কথা কহিবে সে কথা ভাবিলে আর কি চলিবে
বিপদে সংকটে রাখিবে যে তহে তার পদ কেন তুমি ভাবনা।।
করি কথা কও হরি গুণ গাও হরি নামপদে সদা নত হও
হরিনাম গীতে গাও নিতে নিতে অন্য কোন গীত গেও না।।
 

(সংকীর্তন গীতি-সংগৃহীত)