পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৫

সোনার মানুষ-তৃতীয় পর্ব

(পূর্ব প্রকাশের পর)

আজ কবিরদের বাড়ীতে বিশেষ আয়োজন চলছে। সকাল হতেই নানাস্থান হতে লোকজন আসতে শুরু করেছে। প্রতি চন্দ্র মাসের ৬ তারিখে তাদের বাড়ীতে একটা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সুফী সাহেব আসেন। সুফী সাহেবকে অনেকেই শাহ্ সাহেব বলে সম্বোধন করে থাকেন। তিনি অনেকটাই অনাঅাড়ম্বর জীবন যাপনে অভ্যস্ত। সচরাচর কোথাও যান না। কিন্ত্তু কবিরদের বাড়ীতে আসেন। কবিরের বাবা আলী আশরাফ সিকদার বেশ নাম করা লোক এবং তিনি সর্ম্পকে তার পীর ভাই হন। সেই সুত্র ধরেই তিনি এইদিনে কবিরদের বাড়ীতে আসেন। ছলেমান সেই সুফী সাহেবের সাথে কথা বলার জন্য বেশ আগে ভাগেই উপস্থিত হয়েছে।

সন্ধ্যা তখনো হয়নি।পাখ-পাখালিরা নীড়ে ফিরতে শুরু করেছে। বিকেলের নরোম রোদ বেশ আয়েশ করেই কুয়াশার চাদর পরার প্রস্ততি নিচ্ছে। আর সুয্যিটা নিবু নিবু আলো দিয়ে প্রায়ই বিদায় নিতে যাচ্ছে। ঠিক সেই সময় পশ্চিম আকাশ হতে ভেসে এলো-আল্লাহু আকবার। আল্লাহু আকবার...আশ শাহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাহা... মুয়াজ্জিনের আজানের শব্দ। মাগরিবের ওয়াক্ত হওয়ায় সবাই অযু করতে ব্যস্ত। আযানের শব্দ শুনে শাহ্ সাহেব খানকাহ্ শরীফের ভেতরে প্রবেশ করলেন। আর তক্ষুণি ছলেমানের নযরে পড়ল শাহ্ সাহেবকে। দেখতে আহমরি তেমন কিছুই তার নযরে পড়লো না। হাল্কা পাতলা গঠন। গায়ের রং শ্যামলা। চুলগুলোতে পাক ধরেছে।কিন্ত্তু তাঁর চেহারা হতে যেন বিজলি বের হচ্ছে। একবারে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। ছলেমান ভেবে পেল না এর কারণ কি? লোকটি দেখতে যত না উজ্জ্বল তার গায়ের রংয়ের চেয়ে চেহারাটা আরো বেশি উজ্জ্বল।

লোকজন লাইন ধরে জামাতে নামায পড়া আরম্ভ করেছে। ছলেমানও অযু করে জামাত ধরার জন্য তড়িঘড়ি করে খানকায় যায়। তাদের সাথে নামায পড়ে। নামায পড়া শেষ হতেই একে একে সবাই বের হয়ে যায়। শাহ্ সাহেব তখনো সেখানে জায় নামাযের উপর বসে বসে কি যেন পাঠ করছিলেন। ছলেমান অপেক্ষা করছিল কখন সে ঘুরে তাকাবে? একসময় তার অপেক্ষার পালা শেষ হয়। শাহ্ সাহেব ঘুরে তাকালেন। আর ঠিক তখনই ছলেমানের দিকে তার নযর পড়লো। তার মনে হলোঃ সে যেন কিছু বলার জন্য অপেক্ষা করছে। তিনি দরদ মাখা গলায় জিগ্যেস করলেনঃ

- বাবা, তুমি কি কিছু বলতে চাও?

তার কন্ঠস্বর শুনে প্রথমে ছলেমান হতচকিত হয়ে যায়। সে ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছে না। আবার মনেও করতে পারছে না - কি জিগ্যেস করবে? ছলেমান হ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকে শাহ্ সাহেবের দিকে। শাহ্ সাহেব আবারো জিগ্যেস করলেনঃ

- বাবা, তুমি কি কিছু জিগ্যেস করবে?

-জ্বি হুজুর। আমি আপনের অনেক কতা কবিরের কাছে হুনছি। কবির আমার বন্ধু।

-ওহ্। আচ্ছা । তা তুমি কি জানতে চাও?

ছলেমান ভালো করে খানকাহ শরীফের দিকে তাকিয়ে দেখলো খুব বেশি লোকজন নেই। জনা কয়েক লোকজন বসে আছে। আর কিছুলোক এখনো নামায শেষ করে নাই। তারা নামায পড়ছে। এটা মোক্ষম সময় মনে করে ছলেমান বলা শুরু করলোঃ

- আমাগো পুব পাড়ার মোতালেব ব্যাপারীর বাপ তালেব ব্যাপারী। হেয় মারা গেছে না অইলেও প্রায় পচিশ-ত্রিশ বছর অইব। এই যে হেই দিন নদী ভাংগনের সময় ওগো বাড়ীও নদাীতে ভাইংগ্যা যায়। ওর বাপেরে যেইখানে মাডি দিছিল সেই কবরও ভাইংগ্যা যায়। কিন্ত্তু আচানক ঘটনা অইলো সেই তালেব ব্যাপারীর লাশ একটুও কিছু অয় নাই। পচে নাই। কিচ্ছু না। দেকলে মনে অয় এইতো একটু আগে হেরে মাডি দিছে। হুজুর এইডা কেমতে সম্ভব অইলো-এইডা আমার মাতায় কিচ্ছুতেই ঢুকতাছে না। তাই আপনের কাছে আইছি বিষয়ডা একটু জাননের লাইগ্যা।

ছলেমানের কথা শেষ হতে না হতেই কবির শাহ্ সাহেবকে ভিতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসলো। সেখানে হাল্কা কিছু চা-নাস্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শাহ্ সাহেব উঠতে উঠতে বললেনঃ

-ও এই ব্যাপার। ঠিক আছে তুমি আমার সাথে আসো।

শাহ্ সাহেব এবং তার জনাচারেক ভক্তবৃন্দসহ ছলেমান কবিরদের ভেতর বাড়ীতে প্রবেশ করলো।
(চলবে)