পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫

সোনার মানুষ-প্রথম পর্ব

কার্তিক মাসেই শীতের আগমণ ধ্বনি শুনা যাচ্ছে। চারিদিকে কুয়াশার একটা পাতলা চাদর ইতিমধ্যেই বিছিয়ে দিতে শুরু করেছে। গাছের ডগায় শিশির বিন্দু জমে জমে তা টিনের চালায় পড়ে বেশ আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। সবুজ ঘাসের উপর পড়ে তা বেশ মনোরম অবগাহন করে নিচ্ছে। শীতের আবহ তৈরী হওয়ার ছলোমান তার কাঁথাটি বেশ করে গায়ে জড়িয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকে। তার বৌ সকিনা তাকে ধাক্কা দিয়ে জাগাতে চেষ্টা করছে।

-এ্যাই হুনছো। আজান হইছে। ওঠো...ফজরের নামাজ পড়বা না? 

ছলেমান কান পেতে শোনার চেষ্টা করছে আযান দিচ্ছে কি-না? সে কাঁথার ভেতর থেকে শুনতে পাচ্ছে দুরে কোথাও মুয়াজ্জিন আযান দিচ্ছে। "আস সালাতো খাইরাম মিনান নাউম।" ঘুম হতে সালাত উত্তম। সে উঠি উঠি করেও উঠছে না। তাকে মনে হয় আলসিতে পেয়ে বসেছে। সে শুনেছে - ভোর রাতে শয়তান মানুষের পা টিপে দেয়। যাতে সে আরামে ঘুমাতে পারে। ফজরের নামাজ যাতে না পড়তে পারে। মনে হচ্ছে তাকে সেই শয়তানই পেয়ে বসেছে। উঠি উঠি করেও উঠছে না। 

-কি অইলো? ওডো না ক্যান? নামায পড়বা না?

বউয়ের ঠেলায় সে কাঁথা ছেড়ে ওঠে বসে। তারপর বউকে বলেঃ

-কি সন্দোর একটা ঘুম আইছিলো। দিলাতো সব মাটি কইর‌্যা। মাত্রতো আযান হইছে। নামাযের তো এখনো অনেক দেরী আছে। 

-কি কও। তাই বইল্যা কি ওঠবা না?

-উডুম না কেডা কইলো?  

-যাও। হাত মুখ ধুইয়্যা ওযু কইর‌্যা মসজিদে যাও। জমাতে নামায পর। জমাতে নামায পড়লে অনেক সোয়াব। 

বউয়ের প্যান প্যানানি শুনতে ইচ্ছে করছে না। তার চোখে মুখে এখনো ঘুমের ছোয়া লেগে আছে। সে আর দেরী করলো না। ঘর হতে বের হয়ে প্রাতঃরাশ সেরে ওযু করে মসজিদের দিকে রওনা দেয়। 

ইমাম সাহেব মুসল্লিদের বলছেনঃ আপনারা যারা সুন্নাত আদায় করেননি তারা তাড়াতাড়ি সুন্নাত পড়ে নিন। জামাতের আর মাত্র মিনিট পনের বাকী আছে। ছলেমান তাড়াতাড়ি করে সুন্নাত আদায় করে। যথারীতি ফরয নামাজ শেষ করে। মসজিদ হতে বের হতে গিয়ে দেখে - সবে মাত্র পুব আকাশে সুয্যিটা আলো ছাড়তে শুরু করছে। সে সে আলোয় নিজেকে অবোগাহন করার জন্য নদীর ধারে হাঁটতে বের হয়। নদীর পাড়ে উত্তুরি বাতাসে সে কিছুটা শীতের আবেশ পায়। কিন্ত্তু তার হাঁটতে বেশ লাগছে। 

পথে দেখা হয় সুরুজ মিয়ার সাথে। সুরুজ মিয়া পেশায় একজন বর্গাচাষী। চাষের কারণেই সে খুব ভোরে জমির ধারে যায়। সারাদিনমান কাজ করে। দুপুরে খেয়েই আবার ছোটে জমির ধারে। সন্ধ্যা নাগাদ আসে। ছলেমান একজন স্বর্ণকার। গঞ্জে তার সাদিয়া জুয়েলার্স নামক একটি স্বর্ণের দোকান আছে। সেই সুত্র ধরে সকলেই তাকে চেনে। সুরুজ মিয়া ছলেমানকে দেখে সালাম দেয়ঃ

-আসসালামু আলাইকুম ছলোমান ভাই।

-ওয়ালাইকুম আস সালাম।

-কি অবস্থা তোমার? ছলেমান জানতে চায়।

-অার অবস্থা। আছি কোন রকম। আপনের খবর কি?

-আর খবর? কেউ আর আগের মতো জিনিস পত্র বানাতে দেয় না। 

-খবর হুনছেন নি? 

-কি খবর?

-আরে ঐ পাড়ার মোতালেব ব্যাপারীর বাবা তালেব ব্যাপারী যে মারা গেছিল আজ থিক্ক্যা প্রায় ত্রিশ বচ্ছর আগে। হের লাশ নাকি বাহির হইছে। লাশের একটুও কিছু অয় নাই।

-কও কি? কেমতে বাইর অইলো?

-আরে অগো বাড়ীতো নদীর ধারেই। নদীতে ভাংগনের সুময় বাইর হইছে। হারা গেরামের বেবাকতে দেকতে গেছে।

-আরে কও কি? আর এই খবরডা আমি জানলাম না?

(চলবে)